মনিরুজ্জামান মনি,তানোর-রাজশাহী : বরেন্দ্রভূমি খ্যাত রাজশাহীর তানোরে বোরো ক্ষেতে ‘নেক ব্লাস্ট’ (গলা পচা) নামক রোগ দেখা দেয়ায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন উপজেলার কয়েকটি স্থানের কৃষক। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সংক্রমিত জমিতে কীটনাশক স্প্রে করেও শেষ রক্ষা হচ্ছে না কৃষকদের। প্রথমে জমির কোনো এক জায়গায় নেক ব্লাস্ট রোগ দেখা দেয় এবং পরে তা মুহূর্তের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ছে পুরো জমিতে।
অন্যদিকে যেসব বোরো ক্ষেতে এখনো নেক ব্লাস্ট দেখা দেয়নি সেসব জমিতে এই রোগ ছড়ানোর আশঙ্কায় নিয়মিত স্প্রে করেও আতঙ্কে রয়েছেন ভালো জমির মালিকরা। নেক ব্লাস্টের আক্রমণের ভয়ে নির্ঘুম রাত কাটছে তাদের।
উপজেলার সাত ইউনিয়ন ও দুই পৌর এলাকার স্বল্প পরিসরে হলেও বিভিন্ন স্থানের ধান ক্ষেতে নেক ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে কৃষকদের।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে চলতি বোরো মৌসুমে তানোরে ১৪ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও এবারে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ধানের ফলন ভালো হলেও হঠাৎ করে আবহাওয়ার প্রতিকূলতায় দ্রুততম সময়ে ছড়িয়ে পড়ছে নেক ব্লাস্ট। এ রোগ প্রতিরোধে কৃষকের মাঝে লিফলেট বিতরণসহ নানা পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে কৃষি বিভাগ। আক্রান্ত জমিতে প্রতিশোধক হিসেবে ট্রাইসাইক্লোজল গ্রুপের ছত্রাকনাশক এবং ভালো জমিতে প্রতিরোধক হিসেবে কারবেনডাজিন গ্রুপের ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করছেন কৃষকরা। কিন্তু সংক্রমিত জমিতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করেও কোনো কাজ হচ্ছে না। স্প্রে করার পরও এক থেকে দুই দিনের মধ্যেই এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে পুড়ো জমিসহ পাশ্ববর্তী জমিতে। এ অবস্থায় কৃষকের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা ধান ক্ষেত সাদা হয়ে চিটা হয়ে যাওয়া মহা দুঃচিন্তায় পড়েছেন তারা। নির্ঘুম রাত কাটছে ভালো জমির মালিকদের।
কৃষি বিভাগ জানায়, বৈরী আবহাওয়ার কারণে এ রোগ দেখা দিয়েছে। তা প্রতিরোধে লিফলেট বিতরণসহ নিয়মিত এবং সঠিক মাত্রায় ছত্রাক নাশক স্প্রে করার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
উপজেলার কামারগাঁ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার ও কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, নেক ব্লাস্ট রোগে তাদের ক্ষেতে ধানের শীষ সাদা হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে তা পুরো জমিতে ছড়িয়ে পড়ছে।
তানোর পৌর এলাকার গুবিরপাড়া গ্রামের মুক্তার,আ:হাকিম ,কাদের মন্ডল সহ বেশ কয়েকজন জানান, নেক ব্লাস্টের ভয়ে তাঁরা জমিতে ছত্রাক নাশক স্প্রে করেছেন। কিন্তু একদিন পর জমিতে গিয়ে দেখছেন জমির ধান সব সাদা হয়ে গেছে।
ফসল বাঁচাতে সারসহ প্রয়োজনীয় খরচ মিটানোর পরও কীটনাশক কিনে জমিতে প্রয়োগ করেও শেষ রক্ষা করতে পারছেন না তারা। এ অবস্থায় চড়া দামের কীটনাশক স্প্রে করেও আতঙ্ক কাটছে না আক্রান্ত না হওয়া জমির কৃষকেরা।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম জানান, আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় নেক ব্লাস্ট দেখা দিয়েছে। আমরা কৃষকদেরকে ট্রুপার, দিপা, সালফাইটার দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। আর যেসব জমি এখনো সংক্রামিত হয় নাই বা কেবল দেখা দিয়েছে সেসব জমিতে প্রতিরোধক হিসেবে কাসোবিন, নাটিভো এগুলো স্প্রে করার পরামর্শ দিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কৃষি বিভাগের দেয়া প্রেসক্রিপশনের বাইরে কিছু ব্যবসায়ী ব্লাস্ট রোগের ঔষধ ছাড়া সাধারণ ধান পচা রোগের ঔষধ বিক্রি করছেন। যে সব কৃষক কীটনাশক ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতারিত হয়ে পিসক্রিশনের বাইরে ঔষধ কিনে স্প্র্রে করছেন। এসব জমিতে নেক ব্লাস্ট দমন সম্ভব হচ্ছে না। এ রোগ বর্তমানে স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি আর যেন কোনো কৃষকের ক্ষতি না হয়।
Prev Post