নোট সংশোধন না করে রাজাকারের তালিকা, তাই এত সমস্যা: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

0 ২৯৫

বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম: রাজাকারদের তালিকায় ভুল-ভ্রান্তি বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, ‘রাজাকারদের তালিকার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে আগেই নোট দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা সংশোধন করেনি। তাদের আরো যাচাই-বাছাই করা উচিত ছিল। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দেয়া নোট যাচাই-বাছাই করলে সকল সমস্যা কেটে যাবে।’

৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের পর কোনও মুসলমান ভারতে যায়নি বলে দাবি করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘এনআরসি ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। সেটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাই না। ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দাওয়াত দিয়েছিলেন, আমি সেখানে গিয়েছি। আমি প্রথমেই সেখানে বলেছি, ‘তোমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে চাই না’।’

তিনি বলেন, ‘আমি তাদের (ভারতকে) অ্যাড্রেস করে দিয়েছিলাম। আমি জানতে চেয়েছিলাম- ‘তোমরা বারবার বলছো, তোমরা কোনও হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানকে ভারত থেকে তাড়িয়ে দেবে না। আমি তোমাদের এই মতামতকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। কারণ কোনও মুসলমান ৭১-এর পরে, বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে ভারতে যায়নি এবং ভারত থেকে আসেওনি।’

মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহান বিজয় দিবস ২০১৯’ উদযাপন উপলক্ষে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কৃষকরত্ন শেখ হাসিনার চলমান দুর্নীতি,  মাদক ও মজুদদারের বিরুদ্ধে অভিযানে কৃষকলীগের একাত্মতা শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘কিছু দিন আগে ভারতের এক সাংবাদিক জিজ্ঞেস করেছিলো- বাংলাদেশ থেকে দেড় কোটি মানুষ না-কি ভারতে চলে আসছে? আমি তাকে বললাম- ‘আপনি যদি ১৯৪৭ সালের কথা বলেন, তখন দেড় কোটি ভারত থেকে এসেছে, আবার তখন দেড় কোটি গিয়েছেও। কাজেই ওই সময়ে একটা বিশেষ পরিস্থিতিতে এদেশের বহু হিন্দু ভারতে চলে গিয়েছিল, আবার ভারতের বহু মুসলমান এদেশে চলে এসেছিল। এটা সর্বজনস্বীকৃত। তবে ৭১-এর পর কোনও মুসলমান ভারতে যায়নি।’

রাজাকারের তালিকায় ভুল-বিভ্রান্তি প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রাজাকারের তালিকা নিয়ে একটা প্রশ্ন আসছে। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় রাজাকারের লিষ্ট করবে। আমাদের কাছে দাবি করে তারা চিঠি পাঠিয়েছিলেন, আমাদের কাছে যে সমস্ত তথ্য আছে সেগুলো যেনও পাঠানো হয়। রাজাকারের লিষ্ট তৈরি করা দূরহ ব্যাপার। আমরা প্রাথমিকভাবে দালাল আইনে যাদের নামে মামলা হয়েছিল, সেই দালাল আইনের লিস্টটা পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। সেই লিস্টে আমরা মন্তব্য করে দিয়েছি, অনেকের নামের মামলা উড্র করা হয়েছিলো। সেটা তালিকায় যাথাযথভাবে আসেনি। মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে রাজাকারের তালিকা নিয়ে আরও নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা।’ব্রেকিংনিউজ

এদিকে মঙ্গলবার (১৭ ডিসেম্বর) সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে রাজাকারদের তালিকায় ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে সব দায় নিজের কাঁধে নিয়ে দুঃক্ষ প্রকাশ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে রাজাকারদের যে তালিকা পেয়েছি, সেটাই প্রকাশ করেছি। এটা আমরা তৈরি করিনি। জাতি এই তালিকা চেয়েছে, আমরা শুধু প্রকাশ করেছি মাত্র।’

এর আগে, গত রবিবার মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতাকারী যেসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১৯৭২ সালের দালাল আইনে মামলা করা হয়েছিল তাদেরকে রাজাকার আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর সদস্য হিসাবে চিহ্নিত করে ১০ হাজার ৭৮৯ জনের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তার মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তালিকা প্রকাশ করেন। তবে তালিকা প্রকাশের পরই রাজাকারের তালিকায় কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার নাম থাকার অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে সারা দেশে তোলপাড় শুরু হয়।

সুশাসন প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত শুদ্ধি অভিযান চলবে বলেও জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘অনেকেই মনে করেন আমরা থেমে গেছি। আমরা আসলে থেকে নেই। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য আমরা এই অভিযান চলমান রাখবো। তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। আমরা তথ্যভিত্তিক অভিযান চালাবো। তাই মনে হচ্ছে শুদ্ধি অভিযান থেমে গেছে, শুদ্ধি অভিযান চলমান থাকবে।’

কৃষক লী‌গের সভাপ‌তি কৃ‌ষি‌বিদ সমীর চন্দের সভাপ‌তি‌ত্বে বি‌শেষ অ‌তি‌থি ছি‌লেন, প্রফেসর ড. আ আ ম স আরে‌ফিন সিদ্দিকী, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যা‌রিস্টার ম‌হিবুল হাসান চৌধু‌রী নওফেল, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি প্রমুখ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.