পিলখানা হত্যা: পূর্ণাঙ্গ রায়েও ১৩৯ আসামির ফাঁসি বহাল

0 ৫৭২

বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম: প্রায় ১১ বছর আগে বহুল আলোচিত পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলায় ২ বছর আগে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশ করা হয়েছে। বুধবার (৮ জানুয়ারি) রায় প্রদানকারী তিন বিচারপতির স্বাক্ষরের পর ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠার দেশের ইতিহাসে সর্ববৃহৎ এ রায়টি প্রকাশ করা হয়েছে।

বহুল আলোচিত এ রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের মধ্য দিয়ে ৬ বছর আগে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর নিম্ন আদালতের দেয়অ রায় অনুমোদন প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে সম্পন্ন হলো।

রায়ের দৈর্ঘ্য ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হত্যা মামলার রায়। রায়ে ১৩৯ জনকে ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন ছাড়াও ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ৭৯ জনকে খালাস দেয়া হয়।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ উভয়পক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে রায় দেন।

সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার পর হাইকোর্টের দেয়া পূর্ণাঙ্গ রায় লেখার কাজ শুরু করেন বিচারপতিরা। পূর্ণাঙ্গ রায়ের ১ থেকে ১১ হাজার ৪০৭ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লিখেছেন বিচারপতি শওকত হোসেন, ১১ হাজার ৪০৭ পৃষ্ঠা থেকে ২৭ হাজার ৯৫৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লিখেছেন বিচারপতি আবু জাফর সিদ্দিকী এবং ২৭ হাজার ৯৫৯ পৃষ্ঠা থেকে ২৯ হাজার ৫৯ পৃষ্ঠা পর্যন্ত লিখেছেন বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ।

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিদ্রোহের নামে পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর (বিজিবি) সদর দফতরে নারকীয় এ হত্যাকাণ্ডে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন প্রাণ হারান। এ ঘটনায় শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েছিল গোটা জাতি। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলায় ৮৫০ বিডিআর জওয়ানকে আসামি করা হয়। এদের মধ্যে বিচারকাজ চলাকালে বিভিন্ন সময় ৪ জনের মৃত্যু হয়।

নারকীয় এ হত্যা মামলায় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর ১৫২ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক ড. মো. আখতারুজ্জামান (বর্তমানে হাইকোর্টের বিচারপতি)। নিম্ন আদালতের রায়ে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে একজন ছাড়া বাকি সবাই ছিলেন তৎকালীন বিডিআর সদস্য। এছাড়া রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয় ১৬১ জনকে, সর্বোচ্চ ১০ বছরের সাজা হয় ২৫৬ জনের। অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাস পান ২৭৮ জন। রায়ে মোট সাজা হয় ৫৬৮ আসামির।

পিলখানা হত্যার ঘটনায় ২০০৯ সালের ৪ মার্চ রাজধানীর লালবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নবজ্যোতি খীসা বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটি পরে ৭ এপ্রিল স্থানান্তর করা হয় নিউজমার্কেট থানায়। মামলায় পিলখানা হত্যাকাণ্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারী উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) তৌহিদুল আলমসহ ৬ জন আসামি করা হয়। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয় আরও প্রায় ১ হাজার জনকে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইসি) তদন্ত শেষে ২০১০ সালের ১২ জুলাই হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনে দুটি অভিযোগপত্র দেয়।

পরে নিম্ন আদালত থেকে ফাঁসির আসামিদের সাজা অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স পাঠানো হয়। আপিল করেন কারাবন্দি আসামিরাও। রাষ্ট্রপক্ষ থেকেও আপিল করা হয়।

২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর হাইকোর্টের বিচারপতি মো. শওকত হোসেন, বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ উভয়পক্ষের আপিল ও ডেথ রেফারেন্সের শুনানি করে সংক্ষিপ্ত রায় দেন। এরই দুই বছর পর প্রকাশ হলো পূর্ণাঙ্গ রায়ের অনুলিপি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.