পুঠিয়ার বারনই নদীতে রাবার ড্যাম হাজারো মনুষের ভাগ্যবদল

0 ২,২৯১

অজয় ঘোষ, পুঠিয়া (রাজশাহী) থেকে : দেখে মনে হতে পারে কোন জলপ্রপাত। প্রায় ১৫ফুট উঁচু হাওয়ায় ফুলানো রাবারের বেলুনের উপর দিয়ে প্রচন্ড গর্জন ও তীব্র বেগে আঁছড়ে পড়ছে জলধারা। রাবার ড্যাম প্রকল্প শুস্ক নদীর দু’কুলের হাজার হাজার কৃষক পরিবারের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছে। কৃষকদের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার মানুষের। জীব বৈচিত্র্য রক্ষা করে এলাকায় এনেছে নান্দনিক সৌন্দর্য্য এলাকার কৃষকদের চাষাবাদের বিষয়টি চিন্তা করে রাজশাহী জেলার উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের বারনই নদীর উপরে বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) রাবার ড্যাম নির্মাণ করে।
বিএমডিএর পুঠিয়া জোনের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ সেলিম রেজা জানান, বরেন্দ্র উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজশাহী জেলার উপজেলার শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের বারনই নদীর উপরে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৬২ মিটার রাবার ড্যাম নির্মাণ করে। বারনই নদীটি তানোর শিব নদী থেকে সংযুক্ত হয়ে পুঠিয়া উপজেলার শিলমাড়িয়া এলাকার উপর দিয়ে অত্রাই নদীর সাথে যুক্ত হয়েছে। রাবার ড্যাম নির্মানের ফলে শিলমাড়িয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বারনই নদীর পার্শ্ববর্তী কয়েকটি নদী শাখা বছরের পুরো সময় পানিতে ভর্তি থাকে। বারনই নদীর পার্শ্বের জমিগুলো সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। এতে কৃষক ড্যামের পানি তাদের জমিতে সেচ কাজে ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। আর নদীতে পানি থাকায় ধরা পড়ছে প্রচুর দেশি প্রজাতির মাছ। এছাড়া নদীতে পানি থাকায় বারনই নদীর সাথে সংযুক্ত সৈয়দপুর-বিদিরপুর খাল, ফকিন্নি নদী, জোহাখালী নদী, তেবিলি খাল (হোজা নদী), মঙ্গলপাড়া গোড়াখালী খাল সহ অন্যান্য সংযুক্ত খাল/নদী গুলতে পানি সংরক্ষণ হচ্ছে। বারনই নদীর পার্শ্ববর্তী বিল কুমারী, খয়রার বিল, মরাবিল, সহ প্রায় ১৫ টি বিলে ফসলে সেচ কার্য সম্পন্ন করছে কৃষকরা। রাবার ড্যাম এলাকায় ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর উপরে উঠে এসেছে। এর কারণে বারনই নদীর দুই ধারের জমিতে এখন যেকোন ধরনের ফসলের দ্বিগুণ ফলন হবে। এছাড়া রাবার ড্যাম নির্মানের ফলে বারনই নদীর পার্শ্ববর্তী এলাকায় পানির লিয়ার উপরে এসেছে। যার কারণে টিউবয়েলে পানি পাওয়া যাচ্ছে। কৃষকরা কম খরচে সেচ কার্য সম্পন্ন করতে পারছে। দেশী মাছ সংরক্ষণ হচ্ছে এবং জেলারা তাদের পৈত্রিক পেষা ধরে রাখতে পারছে।
সাধনপুর গ্রামের মৎস জীবি সমবায় সমিতির সহ-সভাপতি কৃষ্ণ চরণ হলদার জানান, রাবার ড্যাম নির্মানের কারণে বারনই নদীটিতে পানিও জল থাকায় সব সময় আমরা মুক্ত পানিও জলে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করছি।
সাধানপুর পঙ্গু শিশু নিকেতন সমন্বিত অবৈতনিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মুরছালাত জানান, বারনই নদীর উপরে রাবার ড্যামটি নির্মিত হওয়ায় নদীর পশ্চিম দিকে যতদুর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। কোথাও ২০ ফুট আবার কোথাও ২৫ ফুট পানির গভীরতা দেখে মনে হয় বর্ষাকালের মত নদীতে পানি থৈথৈ করছে। রাবার ড্যাম প্রকল্প শুধু কৃষকদের ভাগ্যই বদলায়নি এলাকার প্রাকৃতিক পরিবেশে বিরাট ভারসাম্য এসেছে এবং জীব বৈচিত্র্য রক্ষা পাচ্ছে। নদীর দু’কুলে বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য গাছ হওয়ায় গোটা এলাকা পাখির কলকাকুলিতে মুখরিত থাকছে। মানুষের জীবনধারা বদলে দেয়া বারনই নদীর রাবার ড্যাম প্রকল্প শুস্ক মৌসুমে কৃষকদের আর্শিবাদে পরিনত হয়েছে। এক কথায় এই রাবার ড্যামটি পাল্টে দিয়েছে এলাকার আর্থ-সামাজিক, উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা।
কচুরিপানা দিয়ে গো-খাদ্যর অভাব পুরন করা হচ্ছে। এছাড়া নদীর বিভিন্ন স্থানে মাছেরা অভয়াশ্রম সৃষ্টি করছে। যার ফলে এলকার মানুষ উপকৃত হচ্ছে।
খরা মৌসুমে রাবার ড্যাম নদীতে দুই-তিন মাস পানি ধরে রাখছে। এই মৌসুমে অনেক দেশীয় মাছ ডিম ছাড়ে। এর ফলে দেশীয় মাছ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
কৃষকরা জানান, এ অঞ্চলের জমি উর্বর হওয়া সত্বেও সেচের অভাবে অনাবাদি ছিল। আগে খরা মৌসুমে নদীতে পানি থাকতো না। শ্যালো মেশিন চালু করেও পানি লেয়ার পাওয়া যাচ্ছিল কম। অধিক তেল পুড়িয়ে জমিতে সেচ দিতে হতো। এখন রাবার ড্যামের কারণে নদীতে পানি থাকছে। আর রাবার ড্যাম নির্মিত হওয়ায় এখন নিয়মিত ৩টি ফসল হচ্ছে। আমন, ইরিবোরো, সরিষাসহ অন্যান্য ফসলের চাষ করে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। নদী ও খাল থেকে পানি তুলে কৃষকরা অনায়াসে জমিতে সেচ দিচ্ছেন। রাবার ড্যাম হওয়ায় সেচ সুবিধার কারণে ধানের উৎপন্ন হচ্ছে। অন্যান্য ফসলেরও বাম্পার ফলন হচ্ছে। ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় এলাকার লোকজনের জানান, রাবার ড্যাম প্রকল্প এ এলাকার চিত্র বদলে দিয়েছে। ফলে এলাকার একটি বড় অংশের মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। রাবার ড্যামের উপর ব্রীজ নির্মিত হওয়ায় রাজশাহী জেলার পুঠিয়ার শিলমাড়িয়া জগদিসপুর এবং নাটোর জেলার নলডাঙ্গা উপজেলার কাশিয়াবাড়ি এলাকার মানুষের মিলন কেন্দ্রে পরিনত হয়েছে রাবার ড্যাম প্রকল্প। বারনই নদীতে উভয় পাশের মানুষ উপকৃত হয়েছে এবং নদীতে প্রচুর মাছ চাষ হচ্ছে। এলাকার হাজারো জেলে পরিবার রাবার ড্যামে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.