রাবি প্রতিনিধি : রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের প্রক্সি দিয়ে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত হওয়ায় আহসান হাবীব নামে এক শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিলসহ প্রক্সিকান্ডে ঘটনায় জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. আব্দুস সালামের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম সাউদ বলেন, প্রক্সিকান্ডে জড়িত থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাদের নামে মামলা করা হয়েছে। অসাদুপায়ে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ায় আহসান হাবিব নামের ওই শিক্ষার্থীর ভর্তি বাতিল করা হয়েছে।
এবং মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনজন শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। ভর্তি জালিয়াতির বিষয়টি চূড়ান্তভাবে প্রমাণিত হলে তাদেরকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হতে পারে বলে জানান তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় সাংগঠনিক সম্পাদক মুশফিক আহমেদ তন্ময়কে কেন বহিষ্কার করা হয়নি এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মুশফিক আহমেদ তন্ময় বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী না।
যেহেতু সে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র না তাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কিভাবে বহিষ্কার করবো। এর আগে গত শুক্রবার (১৮ আগস্ট) রাবি ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে জালিয়াতি অভিযোগে ছাত্রলীগের নেতাসহ মোট আটজনের বিরুদ্ধে মামলা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বহিষ্কারকৃত শিক্ষার্থীরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মো. শাকোয়ান সিদ্দিক প্রাঙ্গণ (২২), বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই- বাংলা হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী রাজু আহমদ (২৩) ও লোক প্রশাসন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিবুল মমিন সনেট। এদিকে সংগঠনবিরোধী, শৃঙ্খলাপরিপন্থি, অপরাধমূলক এবং সংগঠনের মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হয় এমন কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে চারজনকে বহিষ্কার করা হয়।
শনিবার (১৯ আগস্ট) রাতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের দপ্তর সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম পান্থ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এজাহার সূত্রে জানা যায়, প্রক্সি চক্রের একটি গ্রুপের সঙ্গে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা চুক্তি করেন আহসান হাবীব নামের এক ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা নগদ ও ৬০ হাজার টাকার চেক পরিশোধ করেন তিনি। ভর্তির পরে বাকি টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভর্তি শেষে বাকি টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে আটকে রেখে শিক্ষার্থীর বাবার কাছে আরও তিন লাখ টাকা দাবি করে ওই প্রক্সি চক্র। তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনও করা হয়।
এজাহারে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত আহসান হাবীব পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স বিষয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য তার মায়ের সঙ্গে স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু বিজ্ঞান ভবনে আসেন। ভর্তি হওয়ার পর ওই ভবন থেকে বের হলে দুপুর পৌনে ৩টায় অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন ব্যক্তি তাকে কৌশলে অপহরণ করে। শের-ই-বাংলা আবাসিক হলের ৩য় তলায় নিয়ে আটকে রাখে তাকে। সেখানে অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ওই শিক্ষার্থীর বাবার কাছে ফোন করে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিলে গুম করার হুমকিও দেওয়া হয়।
পরে প্রক্টরিয়াল বডির লোকজনের সহায়তায় বিকেল সাড়ে ৫টায় শের-ই-বাংলা হলের ভেতর থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে হাবীব স্বীকার করেন, নিজে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ না করে প্রক্সি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। তবে তার প্রক্সি পরীক্ষা কোন পরীক্ষার্থী দিয়েছে তা জানাতে পারেননি।