দীপক সরকার, বগুড়া প্রতিনিধি: বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ঘোষণা অনুযায়ী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, ভোটের অধিকার, খালেদা জিয়ার মুক্তি, গুম-খুন এবং সব হত্যাকা-ের বিচার, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের একদফা দাবি বাস্তবায়নে বগুড়ায় পদযাত্রার আয়োজন করে জেলা বিএনপি।
সে অনুযায়ী পদযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট, টিয়ার শেল ও শটগানের গুলি ছুড়েছে।
পুলিশের দাবি, পদযাত্রা থেকে পুলিশকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির নেতাকর্মীদের ছোঁড়া ইট-পাটকেলে ১০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। অন্যদিকে, পুলিশের গুলি ও হামলায় ৩৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন বলে বিএনপি দাবি করেছে। তবে বিএনপির হামলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পুলিশের রাবার বুলেট, টিয়ার শেলের বিকট শব্দে ও কালো ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়েছে প্রায় ৩০জন শিক্ষার্থী এমনটাই দাবী শিক্ষক ও চিকিৎসকদের।
মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) কর্মসূচি অনুযায়ী গাবতলী, শাহাজানপুর, ধুনট, শেরপুর ও শহর কয়েকটি ওয়ার্ডের বিএনপিসহ তাদের অঙ্গসংগঠন বনানী থেকে মিছিল নিয়ে সাতমাথার জেলা কার্যালয়ের দিকে রওয়ানা দেয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বগুড়া শহরের ইয়াকুবিয়া স্কুল মোড়ে বিএনপির মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ হয়।
পরে পুলিশ শহরের রানার প্লাজা, থানা মোড়, সাতমাথা, বড়গোলাসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে পুলিশ অবস্থান করছে। পরে সংঘর্ষ শহরের নওয়াববাড়ি সড়কের রানার প্লাজার সামনে থেকে বিএনপির কার্যালয় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পুরো শহরজুরে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচী অনুযায়ী বগুড়ার বনানী থেকে জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনার নেতৃত্বে পদযাত্রা শহরের দিকে আসে। পদযাত্রাটি শহরের ইয়াকুবিয়ার মোড় থেকে জলেশ্বরিতলা হয়ে দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তারা ইয়াকুবিয়া মোড় থেকে সাতমাথার দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ বাঁধা দেয়। এসময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল এবং হাতে থাকা লাঠি নিক্ষেপ করে। একপর্যায়ে তারা পুলিশ পরিদর্শক তারিকুল ইসলামকে মাটিতে ফেলে পেটাতে শুরু করে।
পরিস্থিতি বেগতিক দেখে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ারশেল, রবার বুলেট ও শর্টগানের গুলি ছোড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এদিকে শহরের মাটিডালী মোড় থেকে বিএনপির আরেকটি পদযাত্রা নিয়ে শহরের থানামোড় হয়ে নবাববাড়ি সড়কে দলীয় কার্যালয় আসে। সেখান থেকে কিছু নেতাকর্মী বিএনপি কার্যালয় থেকে বেরিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে আবারও ইট-পাটকেল ও ককটেল নিক্ষেপ শুরু করে। সেখানে কয়েকটি টিয়ার সেল নিক্ষেপ ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে পুলিশ। এসময় বিএনপি নেতাকর্মীরা সদর পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করে।
ঘটনার পর থেকে বগুড়া শহরজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। দোকানপাট, মার্কেট ও শপিংমল বন্ধ রাখা হয়েছে। একই দিন বেলা ১২ টার দিকে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে পাদদেশে দলীয় সমাবেশের আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগ। সেই পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রায় অংশ নিতে আসা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা শহরের সাতমাথায় লাঠিসোটা হাতে অবস্থান নিয়ে আছেন।
বগুড়া জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা দাবি করেন, পুলিশ তাদের নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে। এতে অন্তত ২৫জন গুলিবিদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ক্লিনিকে চিকিৎসা নিচ্ছে।
রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আমাদের কোনো বাধা ছিল না বলে দাবী করে জেলার পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, তাদের(পুলিশ) সঙ্গে কথা ছিল বিএনপির নেতাকর্মীদের ইয়াকুবিয়ার মোড় পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। পদযাত্রা নিয়ে সরাসরি সাতমাথায় যাওয়ার কোনো অনুমতি ছিল না। তারা পদযাত্রা নিয়ে সাতমাথা যেতে চাইলে বাধা দেওয়া হয়। এসময় তারা পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়। তারা পুলিশকে নির্দয়ভাবে পিটিয়ে আহত করে। এতে পুলিশ সদস্যদের কারো হাত ভেঙে যায়, কারো কান ফেটে গেছে। আহত ১০ জন পুলিশ সদস্যকে পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
অপরদিকে বগুড়ায় বিএনপি’র পদযাত্রাকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের হামলা নিয়ন্ত্রনে পুলিশের ছোঁড়া টিয়ারশেলের ধোঁয়া ও শব্দের আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। এতে ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠিয়ে দেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
ইয়াকুবিয়া স্কুলের প্রধান শিক্ষক শাহাদৎ হোসেন জানান, স্কুলের অ্যাসেম্বলি শেষে শিক্ষার্থীরা সবাই শ্রেণিকক্ষে যায়। এর পরপরই বিকট শব্দে টিয়ার সেলের শব্দ ও শ্রেণিকক্ষের জানালা দিয়ে কালো ধোঁয়া নির্গত হওয়ায় বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হতে থাকে। একের পর এক যখন অসুস্থ হতে থাকলে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেই। এদের কেউ কেউ ধোঁয়ায় অসুস্থ হয় কেউবা ভয়ে অসুস্থ হয়ে যায়।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, ইয়াকুবিয়া স্কুলের মোট ২৭ জন শিক্ষার্থীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তবে তাদের গুরুতর কিছু হয়নি, এসব শিক্ষার্থীদের নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।