বগুড়ার শেরপুরে বিশালপুর ইউনিয়ন উপ-নির্বাচনে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা ॥ ক্ষমতাসীন আ:লীগ প্রার্থীর হুমকীর দাপটে কোণঠাসা বিএনপিসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা

0 ১,৩৫৯

শেরপুর(বগুড়া)প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুরের বিশালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থীর হুমকি ও মারপিটের কারনে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কোনঠাসা হয়ে প্রচারণা করতে না পারার অভিযোগ উঠেছে। যে কোন মুর্হুতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকায় পুরো নির্বাচনী এলাকায় অতিরিক্ত র‌্যাব-পুলিশ মোতায়েনের দাবী সাধারণভোটারদের।
জানা যায়, আগামী ২১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার বগুড়ার শেরপুর উপজেলার বিশালপুর ইউনিয়নের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ ইউনিয়নে ৯টি ওয়ার্ডের ১০টি কেন্দ্রে নারী-পুরুষসহ মোট ২১,১০৪ জন ভোটার তাদের প্রত্যক্ষ ভোটারাধিকার প্রয়োগ করবেন। এরই মধ্যে ওই ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আ:লীগের প্রার্থী গোলাম সারওয়ার (নৌকা), আ.লীগ মনোনীত প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান সুবোধ সরকারের মৃত্যুর পর তারই ছোটভাই শ্রী সুধান্য সরকার দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে (আনারস) প্রতিকে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন, অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ জাকির হোসেন (ঘোড়া প্রতিকে), বিএনপি প্রার্থী মোঃ মজিবুর রহমান (ধানের শীষ), ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রার্থী আব্দুর রহমান (হাতপাখা) প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠ চড়িয়ে বেড়াচ্ছে। এরমধ্যে বিএনপির একক প্রার্থী থাকলেও আ:লীগ ঘরের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের চাপে আ’লীগ প্রার্থী কোনঠাসা হয়ে পড়লেও স্বতন্ত্র প্রার্থী সুধান্য সরকারের নির্বাচনী প্রচারনায় নানা ধরণের বাঁধার সৃষ্টি করছে। ক্ষমতাসীন দলীয় প্রার্থীর দাপটে স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সমর্থকরা বিভিন্ন মামলা-হামলায় ভয়ে আতংকে থাকার অভিযোগও রয়েছে অনেক। এদিকে বিএনপি’র দলীয় একক প্রার্থী হওয়ায় কিছুটা প্রতিকুলতা থাকলেও অনেকটাই ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন বলে স্থানীয় নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী শ্রী সুধন্য জানান, সরকার দলীয় প্রার্থী গোলাম সরোয়ারের লোকজন গত রোববার রাতে জামাইল বাজারে আমার সমর্থক প্রকাশ প্রামানিককে মারপিট, ১৬ ডিসেম্বর শুক্রবার বিকেলে পাচতলী বেলতলা এলাকায় প্রচারণার ২টি মাইক ভাংচুর করে ও নাইশিমুল গ্রামে নির্বচনী প্রচারণা অফিসের প্যানা-পিভিসি, পোস্টার ও বৈদ্যুতিক লাইট খুলে নিয়ে যায়, ১৩ ডিসেম্বর মান্দাইল চারমাথা এলাকা থেকে প্যানা পুড়ে ফেলেছে। এমনকি তাদের ভয়ে নায়েরপাড়া গ্রামের তারাপদ রায়ের ছেলে বিপুল গত ৪ দিন ধরে ঘরে বন্দি রয়েছে। এ ঘটনাগুলোর বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাচন অফিস ও শেরপুর থানায় মৌখিক অভিযোগ দেয়া হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে তিনি দাবী করেন।
তিনি আরো জানান, বিভিন্ন জায়গায় ভোট চাইতে গেলে আমাকে বাধা দেয়া হয়েছে। এবং বলা হয়েছে যে নৌকার বাইরে আর কারো (আনারস) প্রতীকে ভোট চাওয়া যাবেনা। যদি কেউ চায় তাহলে তাদেরকে মামলায় ঢুকে দেয়া হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু হিন্দু ভোটারদের সাথে নির্বাচন নিয়ে কথা বললে তারা জানান, খুব আতংক ও চাপের মধ্যে রয়েছেন এবং আওয়ামীলীগ প্রার্থীর সমর্থকদের ভাংচুর, হুমকি-ধামকির কারনে নির্বাচনী এলাকায় পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব বাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলীয় প্রার্থী গোলাম সারওয়ার এ উপ-নির্বাচনে ভাংচুর, পুড়িয়ে দেয়া, হিন্দুদের সম্প্রদায়ের স্বতন্ত্র প্রার্থী সমর্থকদের মামলা-হামলা হুমকী অস্বীকার করে বলেন, সুষ্ঠ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণ ভোট দিয়েই আমাকে নির্বাচিত করবে ইনশায়াল্লাহ।
এদিকে ওই নির্বাচনে কোন প্রকার কারচুপি না হলে ও সরকার দলীয় ক্যাডাররা ভোটদানে বাধার সৃষ্টি না করলে এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ভোটের পরিবেশ সুষ্ঠ রাখলে বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়ী হবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির প্রার্থী মজিবর রহমান, আ:লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ জাকির হোসেন ও ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন প্রার্থী আব্দুর রহমান।
এ ব্যাপারে শেরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ(অপারেশন) খান মো: এরফানের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ ব্যাপারে আমাদের কাছে কেউ মৌখিক বা লিখিতভাবে অভিযোগ করেনি। বরং এটি এক প্রার্থী কর্তৃক আরেক প্রার্থীর প্রতি যে হুমকী-ধামকীর কথা শোনা যাচ্ছে তা আমাদের প্রাথমিক তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।
এ ব্যাপারে রির্টানিং অফিসার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা খাজানুর রহমান জানিয়েছেন, নির্বাচনে যাতে কোন প্রকার সহিংস ঘটনা না ঘটে এ ব্যাপারে প্রশাসনের সজাগ দৃষ্টি থাকবে এবং কোন প্রার্থী যাতে তার নিজস্ব প্রভাব খাটাতে না পারে সেদিকেও দৃষ্টি রাখবে পুরো নির্বাচনী এলাকায় নিযুক্ত আইনশৃংখলা বাহিনী।

Leave A Reply

Your email address will not be published.