স্টাফ রিপোর্টার: পিতা-মাতার অভাবের সংসার, জম্মের কয়েক বছর পর কন্যার আদরে বেড়ে ওঠা চাঁদনী’র ৪ বছর প্রেমের পর রেজিস্ট্রি কাবিলমুলে বিয়ে হয়। বিয়ের ক’দিন পর থেকেই ঘর সংসার, প্রতারক স্বামীর শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন উপেক্ষা করেও স্বামী ও শ্বশুড় বাড়ীর অধিকারের স্বীকৃতি পেতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে গরীব ও অসহায় চাঁদনী । এমনই ঘটনা বগুড়ার শেরপুরের খিদিরহাসরা গ্রামে ঘটনায় এলাকা বেশ চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
গত রবিবার বিকালে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, বগুড়ার লতিফপুর কলোনী(চকলোকমান) এলাকার মজনু’র মেয়ে মমতা আক্তার চাঁদনীর সাথে গত ২০১৫ সালে শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের খিদিরহাসড়া গ্রামের কলিমুদ্দিনের ছেলে মাইদুল ইসলাম রাজু’র রেজিস্ট্রি কাবিনমুলে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকেই রাজু শ্বশুড়বাড়ী ঘর জামাই হিসেবে অবস্থান করে এবং লেখাপড়া করে। এরপর যৌতুকের জন্য চাঁদনী ও তার গরীর পিতাকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। মেয়ের সুখের চিন্তা করে মজনু মিয়া তার জামাই রাজু কে একটি মোটর সাইকেল ও চাকুরী নেয়ার জন্য ২লাখ টাকাও দেয়। কিন্তু তারপরেও চাদনীকে রাজু তার পৈত্বিক বাড়িতে না নিয়ে একটি কোম্পানীতে চাকুরীর সুবাধে অন্যত্র নিয়ে গিয়ে চাঁদনীর উপর প্রতিনিয়তই সীমাহীন শারীরিক ও মানষিক নির্যাতন চালিয়ে আসছে। তবু স্বামী ও শ্বশুড়বাড়ীর অধিকার ছাড়তে নারাজ চাঁদনী। তার স্বামী স্বীকৃতির অধিকার ফিরে পেতে প্রতিনিয়ত অবস্থান করে আসছে শ্বশুড় বাড়ীতে। এদিকে চাঁদনী’র আগমনের খবর পেয়ে বাড়িতে তালা লাগিয়ে কয়েকদিন ধরে লাপাত্তা দিয়েছে রাজু ও তার বাবা-মা। দিনভর স্বামীর বাড়িতে অবস্থান নেয়ার পর কোন কুলকিনারা না পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে পিতার বাড়ীতে ফিরে আসছে চাঁদনী। এমন দৃশ্যে খিদিরহাসরা গ্রামবাসীদের বেশ কষ্ট দিচ্ছে বলে নাম প্রকাশের শর্তে অনেক গৃহবধু ও বয়োবৃদ্ধরা জানিয়েছেন।
স্বামীর বাড়ির বারান্দায় অবস্থানরত চাঁদনী’র সাথে আলাপচারিতায় জানা যায়, বগুড়া জলেশ্বরীতলায় একটি বাড়িতে চাঁদনী’র বাবার কাজের সুবাধে চাদনী ও মাইদুল ইসলাম রাজু’র সাথে ২০০৯ সালের শেষে দিকে পরিচয় ও ২০১০ সাল থেকে সম্পর্ক হওয়ার ফলে গভীর প্রেম হয় উভয়ের মধ্যে। এরপর রাজু তাকে ভোগ করার লালসে কৌশলে চাঁদনীকে বিয়ে করতে ২০১৩ সালের মার্চ মাসে পাশ্ববর্তী জেলা গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ নিয়ে গিয়ে প্রতারণা করার লক্ষ্যে নিজের নাম ও পিতা-মাতার এমনকি গ্রামের ঠিকানাও ভুয়া ব্যবহার করে দেড় লক্ষ টাকা কাবিনমুলে বিয়ে রেজিষ্ট্রি করে। সেইদিন থেকেই রাজু চাঁদনী’র পিতার বাড়িতে থাকে ও খাওয়া, দাওয়া, ফুর্তি করতে থাকে। শ্বশুড়ের টাকায় কৌশলে তিনি মাস্টার্স পরীক্ষা প্রস্তুতি ও পর্ব শেষ করে। এক পর্যায়ে চাঁদনী শুভাকাঙ্খী চাচা রাজু’কে জামাইয়ের মত ভালবেসে তাকে একটি চাকুরী দেয়ার সুবাধে তাকে একটি জীবনবৃত্তান্তের কাগজ দিতে বলে এবং তাতেই প্রতারক রাজু’র আসল চেহারা কাবিনে উল্লেখিত ভুয়া নাম ও ঠিকানা ব্যবহার করা প্রমানিত হওয়ায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে ওই চাচার উপস্থিতিতে পুনরায় চাঁদনীর ৫ লাখ টাকা রেজিস্ট্রি কাবিনমুলে রাজু’র সাথে বিয়ে হয়।
এরপর ওই চাচা রাজুকে ধুনটে একটি এনজিওতে চাকুরী ব্যবস্থা করলে কয়েকমাসের ব্যবধানে সেখানেও দুর্নীতির অভিযোগে চাকুরী হারায়। তবুও চাঁদনী’র সুখের চিন্তা করে শ্বশুড় অনেক কষ্টে যোগার করে এস.কে.এফ ঔষধ কোম্পানীতে মেডিকেল রিপ্রেজেনটিভ (এমআর) চাকুরীর জন্য রাজু’কে আবারো ২ লাখ টাকা দেয়। চাঁদনীর বাবা একটি মোটর সাইকেলও কিনে দেয়। এরপর রাজু চাকুরীর সুবাধে ময়মনসিংহ সদরে চাঁদনীকে সঙ্গে নিয়ে যায়। কয়েকদিন পর থেকেই রাজু’র বাবা-মার প্ররোচনায় চাঁদনীর উপরে নেমে আসে শারীরিক ও মানষিক নির্যাতনের স্টীম রোলার। প্রতিনিয়ত মারপিট সহ্য করতে হয় চাঁদনীকে। তবুও স্বামীর পায়ের কাছে থাকতে রাজি। নির্যাতনের কারণ জানতে চাইলে চাঁদনী জানান, এখন আর তাকে ভালো লাগেনা, এমনকি একফুলের গন্ধও তিনি আর চাননা। তাই তিনি অন্য মেয়েদের সাথেও সখ্যতা গড়ে তোলে। তাছাড়া ‘তুই একটা মূর্খ মেয়ে আর আমি মাস্টার্স পাশ, কিভাবে মানাবে আমার পাশে, কেটে পড় নইলে খুন করে ফেলবো, বলেই মাথায় ও কানের পাশে সজোরে নির্যাতন করে থাকে” অথচ তার সাথে প্রেমের সম্পর্ক চলাকালীন সময়ে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয় রাজু, নইলে তিনিও এতোদিনে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করতো বলে দাবী করে, কান্নায় বুক ভাসায় চাঁদনী।
এর একপর্যায়ে আবারো গত সেপ্টেম্বর যৌতুকের জন্য রাজু তার চাঁদনীকে মারপিট করলে গত ২০/৯/২০১৬ ময়মনসিংহ কোতোয়ালী মডেল থানায় জিডি নং ৯৯৬ দায়ের করে। এর ফলে প্রতারক ও লম্পট রাজু তার স্ত্রীকে কৌশলে বিদায় করতে গত ১২ অক্টোবর রাত ৩টার দিকে ময়মনসিংহের কিশোরগঞ্জ রোডে (পল্লী বিদ্যুৎ অফিস) সংলগ্ন সম্ভুগঞ্জ মাছ বাজার এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে চাঁদনীকে লাচ্চি’র মধ্যে ঘুমের ঔষধ খাওয়াইয়ে রাজু ও তার পিতা কলিমুদ্দিন মোবাইল ফোন বন্ধ করে চাদনী ও নিজের মালামাল নিয়ে আত্ম গোপনে চলে যায়। এরপওে কাঁদতে কাঁদতে চাঁদনী বগুড়ায় পিতার বাড়িতে ফিরে এসে গত কয়েকদিন ধরে শেরপুর উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের খিদির হাসড়া গ্রামে তার স্বামী ও শ্বশুড়বাড়ীর বারান্দায় গৃহবধু’র স্বীকৃতির দাবী আদায়ের জন্য অবস্থান কর্মসুচী পালন শুরু করে। এদিকে চাঁদনী’র প্রতারক স্বামী রাজু ও বাবা- মা গৃহবধু বাড়িতে আসার খবর শুনেই পূর্ব থেকেই ওই বাড়ির দরজায় তালা লাগিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।এদিকে চাদনী’র স্বামীর বাড়িতে অবস্থান নেয়ার খবর শুনে এলাকার উৎসুক নারী-পুরুষেরা একনজর দেখার জন্য ওই বাড়িতে ভীড় জমায় এবং এহেন ঘৃন্যতম কাজের নিন্দা প্রকাশ করে গৃহবধু হিসেবে চাঁদনীকে স্বীকৃতি দিতে অভিপ্রায় প্রকাশ করে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চাঁদনীর শ্বশুড়ালয়ের আসবাবপত্রও সরিয়ে ফেলা হয় বলে প্রতিয়মান হয়েছে। এদিকে চাঁদনীকে যেন তার স্বামী ও শ্বশুড়ের বাড়ীতে না পাঠানো হয় এবং আইনের আশ্রয় না নেয় জন্য নানা প্রকার ভয়ভীতি ও হুমকী দেয়া হচ্ছে রাজু’র পরিবার থেকে বলে জানান চাঁদনী’র বাবা।
এখানে উল্লেখিত হয় যে, এর আগে ময়মনসিংহে রাজু চাকুরীরত থাকা অবস্থায় চাঁদনী নির্যাতনের স্বীকার হলে একই বাড়িতে অবস্থানরত রাজু’র কলিকরা তাদের স্কাইফ বাংলাদেশ(এসকেএফ) এর উর্ধতন কর্মকর্তা মাজরুল হক খান(এরিয়া ম্যানেজার) এবং আব্দুল জুয়েল( মেডিকেল সার্ভিস অফিসার),অন্যান্য অফিসার রাজ্জাক, রাশেদুল, রোমান প্রমুখ বসে নির্যাতনের বিষয়ে রাজুকে সাবধান করে এবং ভালভাবে সংসার করার পরামর্শ ও সতর্ক করে দেয় বলে জানা গেছে।
এ প্রসঙ্গে একই গ্রামের মাতব্বর আব্দুল মান্নান, এন্তাজ আলী, আবু সাঈদ, ইউসুফ আলী বলেন, রাজু’র বাবা প্রভাবশালী, তবুও আমরা এ সমস্যা সমাধানে যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে সুঘাট ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আবু সাঈদ সরকার বলেন, এ ঘটনাটি জেনেছি, উভয় পক্ষই আমার কাছে এসেছিল। তবে বিষয়টি নিরসনের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
তবে এই যদি হয় সমাজে বিয়ের রীতি ও স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক। স্ত্রীর প্রতি স্বামীর দায়িত্বতা তাহলে নির্যাতিতরা দাঁড়াবে কোথায়? তবে কি প্রভাবশালীদের সামাজিক বিচারের অথৈ সাগরে ডুবে যাবে স্বামীর অধিকার স্বীকৃতি বঞ্চিত গৃহবধু চাঁদনী এমনটাই প্রশ্ন ঘোরপাক খাচ্ছে সচেতন মহলে।
Sign in
Sign in
Recover your password.
A password will be e-mailed to you.