বগুড়া প্রতিনিধি: বগুড়ার শেরপুর উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুতের খুঁটি ও সংযোগ দেওয়ার নামে প্রায় সহশ্রাধিক পরিবারের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়াসহ অর্থ আত্মাসাতের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সিন্ডিকেট আওয়ামীলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে। এদিকে দীর্ঘ ২/৩ বছরেও বিদ্যুৎ সংযোগ না হওয়াসহ আত্মসাতকৃত টাকা ফেরত না দেয়ায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিস্ট বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী এলাকাবাসীরা।
জানা যায়, বর্তমান সরকার দেশের প্রতিটি ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাবিবর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় শেরপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে আসছে সংশ্লিস্ট সুত্রে জানা যায়। সেই সুযোগে স্থানিয় আওয়ালীগ নেতারা উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ও সম্পাদক নুরুন্নবী বাদশা, এম এ হান্নান, সুঘাট ইউনিয়ের আওয়ামীলীগ নেতা আবু সাইদ, ডাঃ জাহিদ, আব্দুল আওয়াল, কামরুল ইসলাম, ভবানীপুর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য শামীম আহম্মেদ, আব্দুল হালিম, এরশাদ আলী, হোদা বক্স, মামুন শেখ আবুল কাশেম, মাহাবুব সহ কয়েকজনের সিন্ডিকেট স্থানীয় এমপি’র নাম ভাংগিয়ে উপজেলার মির্জাপুরের মাগুরগাড়ী, সুখানগাড়ী, মাথাইলচাপড়, শিয়ালবর্ষ, ভাদাইশপাড়া, শংকরহাটা, তালতা (ধাপ), রাজবাড়ী বুড়িতলা, কাশিয়াবালা এলাকার ৫ শতাধিক, সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের ২৫০টি পরিবার, ভবানীপুর ইউনিয়নের আমিনপুর আড়ালিয়া আদর্শগ্রাহ পৌনে ৫ কিলোমিটার এলাকার ৩শতাধিক অবহেলিত ও বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত গ্রামবাসীদের মাঝে বৈদ্যুতিক খুঁটি ও সংযোগ প্রত্যাশী গ্রাহকদের একটি মিটারের জন্য ৩ থেকে ৭ হাজার টাকা আদায় করে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
এসব গ্রামগুলোর মধ্যে প্রায় ১/৩ বছর পূর্বে সহশ্রাধিক ভুক্তভোগী গ্রাহকদের নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিলেও বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা ও টাকা ফেরতের কোন ব্যবস্থা করেনি স্থানীয় এমপি’র আস্থাভাজন ওইসব আওয়ামীলীগ নেতারা। বিনা মুল্যের বিদ্যুতে সিন্ডিকেট চক্রের প্রতারণায় অর্থ আত্মসাতে বিদ্যুৎ সুযোগে নেতাদের কৌশলে উপটোকন গ্রহন টাকা ফেরত চাইলেও তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মামলাসহ নানা ভয়ভীতির হুমকীও দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগও রয়েছে অহরহ। এরফলে গত ২৬ জুলাই উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যুতের সুবিধা বঞ্চিতদের মধ্যে শতাধিক ব্যক্তি, ভবানীপুরের আমিনপুর আড়ালিয়া আদর্শ গ্রামের সভাপতি আব্দুল মালেক স্বাক্ষরিত গত ৬ সেপ্টেম্বর বগুড়া জেলা প্রশাসক, দুর্নীতিদমন কমিশনসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। অন্যদিকে সম্প্রতি স্থানীয় এমপি হাবিবুর রহমান উপজেলার সুঘাট ইউনিয়নের বিনোদপুর গ্রামের বিদ্যুতের ব্যবস্থা গ্রহনকারী সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীদের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠায় তাদের গালমন্দ করে কিভাবে বিদ্যুৎ ওইসব এলাকায় পৌছিবে আমি বুঝিনা বলে ব্যাঙ্গাক্তি করেছে জানা যায়। এদিকে আমিনপুর আদর্শগ্রাম এলাকায় বিদ্যুৎ সংক্রান্ত অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগকারীকে প্রাননাশের হুমকী প্রদর্শন করায় তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য গত ১৮ সেপ্টেম্বরে জেলা প্রশাসকের তথ্য ও অভিযোগ শাখার সহকারী কমিশনার মোঃ তাজ উদ্দিন বগুড়া পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পত্র দিলেও অজ্ঞাতকারণে তা ফাইলবন্দিই রয়ে গেছে বলে ভুক্তভোগী আব্দুল মালেক জানিয়েছেন। একই অভিযোগের ভিক্তিতে আমিনপুরের সোলায়মান আলীর ছেলে মঞ্জু মিয়া বাদি হয়ে গত ৭/৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগনেতা মামুনসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে শেরপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করে।
সরেজমিনে গেলে বিদ্যুতের সুবিধা বঞ্চিত ভুক্তভোগী এলাকাবাসীর মধ্যে ভবানীপুর ইউয়িনের আমিনপুর গ্রামের আব্দুল মালেক, ইসমত আরা, খোদা বক্স, মির্জাপুরের ভাদাইপাড়া ও মাথাইলচাপড় গ্রামের মোঃ আছের, মাসুদ রানা, আব্দুস সাত্তার, মোজাফ্ফর হোসেন, মজিবর রহমান, মাকেজ উদ্দিন, ছাইফুল ইসলাম, আরিফুল ইসলামসহ একাধিকরা জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য, আওয়ামীলীগ, যুবলীগ নেতারা আমাদের কাছ থেকে স্থানীয় এমপি আলহাজ্ব হাবিবর রহমানের নাম ভাংগিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থার নামে বিদ্যুৎ বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে প্রকল্প তৈরী, স্থানীয় এমপি’র ডিও লেটারসহ ইত্যাদি কাজে লাখ লাখ টাকা লাগবে বলে তিনি জানান। আমরা সম্মিলিতভাবে তার কাছে ২/৩ বছর পূর্বে ওই টাকাগুলো দেই। বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থায় বিলম্বসহ বিনা টাকায় বিদ্যুতের ব্যবস্থা সরকারের অঙ্গীকার হওয়ায় ওইসব সিন্ডিকেট চক্রদের কাছে অসাধু উপায়ে আদায়কৃত টাকা ফেরত চাইলে ভুক্তভোগীদের র্যাব,পুলিশ দিয়ে আটক পূর্বক নানা মামলা-হামলার হুমকীও দিয়ে আসছে অভিযোগ পাওয়া যায়।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি’র শেরপুর এরিয়া’র উপ-মহাব্যবস্থাপক আল আমিন বলেন, সরকারের প্রক্রিয়া অনুযায়ী উপজেলার অবহেলিত গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের ব্যবস্থা করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। তবে সংযোগের নামে কেউ যদি টাকা গ্রহন করে থাকে সেক্ষেত্রে তার নিজ দায়িত্বে করেছে, এখানে বিদ্যুৎ অফিসের কেউ জড়িত নাই বলে তিনি দাবী করেন।
এ প্রসঙ্গে বগুড়া-৫ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব হাবিবর রহমান বলেন, আমি এ সবের কিছুই জানিনা। তবে আমার নাম ভেঙ্গে যদি কেউ বা কোন চক্র এমন কাজ করে থাকে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Prev Post
বগুড়ার শেরপুরে বিয়ের দাবীতে প্রেমিকের বাড়ীতে কলেজ ছাত্রী ॥ প্রেমিকসহ পরিবারে সদস্যদের পলায়ন
Next Post