বসন্তরাঙ্গা ভালোবাসা দিবসের ছোঁয়া ফুলের বাজারে

0 ৬৮১

দীপক সরকার:
পলাশ ফুটেছে, শিমুল ফুটেছে, এসেছে দারুন মাস, ঋতুরাজ বসন্তের আগমনে প্রকৃতি সেজেছে অনবদ্য সাজে। আর শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ার কচি সবুজ পাতা, বাহারি ফুলেরা বসন্তের রঙে রাঙিন করে তুলেছে প্রকৃতি। প্রকৃতির অপরূপ সাজের সেই রঙে কোকিলও মাতিয়ে তুলেছে কুহু… কুহু….. সুরবীণায়। এবার ১৪ ফেব্রæয়ারি পহেলা ফাল্গুন। জীবনে আর একটি বসন্তের আগমন। চির সবুজ বাংলার প্রকৃতিতে এসেছে ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম মাস। ‘আহা, আজি এ বসন্তে/ কত ফুল ফোটে/ কত বাঁশি বাজে/ কত পাখি গায়…।’
তাই বসন্ত বরণের উৎসবে দালানের খোলস ছেড়েছে বাসন্তী সাজে জড়ো হন বগুড়া শহর ও বিভিন্ন উপজেলাবাসী। সুরের সম্মোহনে ফাল্গুনের প্রথম প্রহরে মিলে মিশে একাকার প্রকৃতি আর মানুষের মুখরতা। এমন চিত্র বগুড়াসহ সারাদেশেই। বাংলা প্রকৃতি এখন স্নিগ্ধময়ী-বাসন্তী। শীতের জরাগ্রস্থতা কাটিয়ে নতুন পাতায় ঋদ্ধ হয়ে উঠছে রিক্ত বৃক্ষরাজিও। বসস্তকে ঘিরে বাংলার জনপদে উৎসবের জোয়ার বয়ে যায়। লোক-কারুশিল্প পণ্য ছাড়াও এসব মেলায় বাহারি পসরা বসে জেলা ও উপজেলা সদরে শহরগুলোতে।

১৪ ফেব্রæয়ারি শুক্রবার পহেলা ফাগুনে বসন্ত উৎসব ও ভালোবাসা দিবস। এ দুটি উৎসব একই দিনে হওয়ায় ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় বেশি। উৎসব দুটি ঘিরে ফুলের দোকানে বেড়েছে ফুলের সরবরাহ। ফুলের বাড়তি চাহিদা মেটাতে তৈরি বগুড়া সদরসহ বিভিন্ন উপজেলা শহরের ফুলের দোকানিরা। প্রতিটি দোকানে থরে থরে বাহারি ফুলের পসরা সাজিয়েছেন তারা। বসন্ত উৎসব ও ভালবাসা দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন সাংস্কৃতিককর্মীরা তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে নৃত্য ও সঙ্গীতানুষ্ঠানসহ নানা উদ্যোগ।
তবে বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে বগুড়া শহরের ১৮টি ফুলের দোকানের পাশাপাশি মৌসুমি ফুল ব্যবসায়ীদের তোড়জোড় চোখে পড়ার মত। ফুলের বেশী দোকান শহরে শহীদ খোকন পার্ক সংলগ্ন ফুলের দোকানগুলোতে ক্রেতার ভিড় বেড়েছে প্রচুর। ফলে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ফুলের দামও। দুটি উৎসব একই দিনে হওয়ায় ফুল ব্যবসায়ীদের পৌষ মাসের আমেজ চলছে।
পহেলা ফাল্গুনে খোঁপায় তাজা ফুল গুঁজেনি এমন তরুণী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আবার বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে প্রিয়জনকে ফুলেল ভালোবাসায় ছুঁয়ে দিতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে সকলে। তাই এ দুটো উৎসবে ফুল বিক্রির হার বছরের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। ফলে বিশেষ এই দিবস পালনে ফুল হয়ে উঠেছে অন্যতম আকর্ষণ। শুধু বগুড়ায় নয়, এ উৎসবগুলোতে ফুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে দেশজুড়েই। বসন্তের প্রথম দিন, ভালোবাসা দিবস এবং মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ফুলের সর্বাধিক চাহিদা থাকে। একই মাসে মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে বড় তিনটি দিবস হওয়ায় ব্যবসায়ীরাও বিশাল প্রস্তুতি নিয়ে থাকেন। এ তিনটি উৎসবে কয়েক প্রায় অর্ধকোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বগুড়ার শহরের শহীদ খোকন পার্ক এলাকার প্রতিটি ফুলের দোকান সরগরম। জেলা সদরের পাশাপাশি শেরপুর, দুপচাচিয়া, আদমদিঘী উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলার শহরের ব্যস্ত সময় পার করছে মৌসুমি ও স্থায়ী ফুল ব্যবসায়ীরা। অন্যদিনের তুলনায় ফুলের দাম দুইগুণ-তিনগুণ বেশি দাম হাঁকা হলেও ক্রেতারা খুব একটা আপত্তি করছে না। পছন্দমত ফুল কিনেই ফিরছে সবাই। তবে ফুল ক্রেতাদের মধ্যে তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি।

এবার দেশি প্রতিটি লাল গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৪০ টাকা, বিদেশি লাল গোলাপ, সাদা, গোলাপী গোলাপ বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়। রজনীগন্ধার প্রতি স্টিক ১৫ থেকে ২০ টাকা, একগুচ্ছ সাদা চন্দ্রমল্লিকা ৫০ থেকে ৭০ টাকা, গøাডিওলাস প্রতি পিস ২০ থেকে ৩০ টাকা, জারবেরা প্রতিটি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, জিপসি ফুল-২০ টাকা, হাইব্রিড ১৫ টাকা, গাদাফুল ১০০টি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তাছাড়া মেয়ের ক্রাউন (মাথার রিং) ৮০ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে প্রতিপিস। সব ধরনের ফুলের ঝুড়ি ও মুকুটের দামও কয়েকগুণ বেড়েছে।

ফুল কিনতে এসে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া সিমিয়া পারভীন ও নুসরাত খাতুন বলেন, ‘খুব ইচ্ছা ছিল ফুল দিয়ে খুব বড় করে খোঁপা করবো। ফুলের যা দাম! ইচ্ছা থাকলেও কিনতে সাহস পাচ্ছি না। বিশেষ দিন আসলেই ব্যবসায়ীরা কোনও না বাহানা দিয়ে ফুলের দাম বাড়িয়ে দেয়।’

মেয়ের জন্য লাল গোলাপের গুচ্ছ কিনতে আসা রাসেদুল ইসলাম রাজু বলেন, ‘একগুচ্ছ গোলাপ দিয়ে সারপ্রাইজ দিতে চাইছিলাম তাকে। কিন্তু ফুলের যে দাম! এখন কি করবো চিন্তায় আছি। ফুল তো দিতেই হবে। ফুল ছাড়া ভালোবাসার দিনটা মলিন হয়ে যাবে। সেই সুযোগে ব্যবসায়ীরা এমনিতেই দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।’

এ ব্যাপারে ফুল ব্যবসায়ীদের ফুলের বাড়তি দামের বিষয়ে জানতে চাইলে অন্তর ফুল ঘরের মালিক উত্তম দাস বলেন, ‘ভালোবাসা দিবস ও বসন্ত উৎসব’এবার একসাথে হওয়ায় এবং মাতৃভাষা দিবস এক সপ্তাহ পরেই ফুলের বাড়তি চাহিদা রয়েছে। তার সাথে কারোনাভাইরাসের জন্য চীন থেকে ফুল তেমন আসছে না। সেক্ষেত্রে দেশীয় ফুলের উৎপাদন স্থল যশোরের পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ জেলার কাজিপুর থেকে ফুল আমদানি করা হয়ে থাকে। তাই দেশিয় ফুল চাষীরা দাম বাড়িয়ে দেওয়ায় বাধ্য হয়ে আমাদেরও বাড়তি দামে ফুল বিক্রি করতে হচ্ছে।

এ ছাড়া ‘বসন্ত ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে ঘিরে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২ থেকে ৩ লাখ গোলাপের চাহিদা আছে। কিন্তু দেশে এত গোলাপ উৎপাদন হয় না। বেশির ভাগই বিদেশ থেকে আনতে হয়। তাই গোলাপের দাম অনেক বেশি পড়ে। আমাদেরকেও বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’

Leave A Reply

Your email address will not be published.