বারান্দা ছুঁয়ে অশান্ত সাগর
লাইফস্টাইল অনলাইন ডেস্ক : প্রথম দর্শনেই মনে হয় এই বারান্দা তৈরি হয়েছে নির্জন পিয়াসুদের জন্য৷ একেবারে খাঁটি ধারণা৷ দিগন্তে মিশে থাকা সাগর ও আকাশকে যারা উপলব্ধি করতে পারেন তাদের কাছে তো অতি লোভনীয়৷ কোলাহল মুখর সৈকত শহর পুরী৷ প্রাচীন শহরটির সর্বত্র আধুনিক ব্যস্ততা৷ সেখান থেকে একটু দূরে, কয়েকটা মোড় পেরিয়ে গেলেই হল৷ বাকিটা শুধু নিজের সঙ্গে নিজের কথা বলার ব্যাপার৷
ঘড়ি চলে নিয়ম করে৷ সময় পার হয় নিজের গতিতে৷ এসবই গতানুগতিক চিরন্তন সত্যি৷ আর কাঁচের দরজাটা ঠেলে দিলেই সব থাকে পিছনে পড়ে৷ বাকিটা শুধু অনুভবের৷ বিকেলের হালকা আলো তখন চোখের কোনে ঝিলিক দিচ্ছিল৷ এভাবে তাকিয়ে থাকতে পারে কেউ ? আমি জানি না৷ প্রকৃতি সুধা পাণ করা অল্প আলোর গজগামিনী নিছকই রোমান্টিক ধারণা বললে ভুল হবে৷ দেখা হয়েছিল…কিন্তু কথা তো হয়নি৷
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়৷ দুপুর পেরিয়ে বিকেল আসে৷ বিকেল পেরিয়ে গোধুলি৷ তারপর ? সন্ধে নামে পুরীর বুকে৷ জ্বলে ওঠে একটা দুটো আলো৷ তৈরি হয় আলোকজাল৷ সে কী আসে…জানিনা৷ নীরবতার সঙ্গী আমি চেয়ে থাকি সাগরপারে৷ মানস দৃষ্টি চলে যায় সাগরের ওই পারে সুদূর কোনো এক জনহীন তটে৷ হতে পারে আরাকান৷ এপারে পুরী আর ওই পারেই তো মগ মুলুক৷ অবাক লাগে৷ মাত্র এপার ওপার, তবে মাঝে বিস্তৃত বঙ্গোপসাগর৷ সন্ধে পেরিয়ে রাত নামে৷ আলোয় মিশে থাকা অন্ধকার জুড়ে শোনা যায় ঢেউয়ের শব্দ অবিশ্রান্ত-অবিরাম৷
প্রথমবার আসা, তাও একদিনের জন্য৷ নিছকই ভবঘুরে পর্বের চক্ষুলজ্জা কাটানো ছাড়া আর কিছুই নয়৷ না হলে বন্ধুরা বলবে, কী রে তোর নাকি পায়ের তলায় সরষে৷ আর পুরীতেই যাসনি কোনোদিন! অগত্যা কাটল গেরো৷ শেষপর্যন্ত সেই প্রাচীনতম সৈকত শহরের চৌকাঠে নামালাম ঝোলা৷ আসা ইস্তক চোখ টেনেছিল নির্জন বারান্দার কোনা৷ বাকিটা তো শুরুতেই বলেছি এক বারান্দা…উসকে আগে গার্ডেন…উসকে আগে সমুন্দর…
অন্ধকার ঘন হয়৷ বন্ধুর সঙ্গে দু’পা হেঁটে চলে যাই নির্জন সৈকতে৷ পায়ের কাছে আছাড়ি পিছাড়ি খায় ঢেউ৷ কোনটা তেড়ে আসে৷ ভিজিয়ে দিয়ে যায় স্মৃতির পাতা৷ তাকিয়ে দেখি বারান্দায় সেই গজগামিনীর অবয়ব৷ নীরবে সমুদ্র সুখ দর্শনে সে মগ্ন৷ অস্পষ্ট ছবিটা সম্পূর্ণ হয় না৷ রাতে নাকি রেগে যায় সাগর৷ গর্জন আরো বাড়ে৷ সে এক অনবদ্য রূপ৷ কখন যেন তাতেই মোহিত হয়েছিলাম৷ পুড়ছিল সিগারেট৷ একপাশে তাকাতেই দেখি ফাঁকা সেই বারান্দা৷ চলে গিয়েছে সে…
আধুনিক শহর পুরী৷ ব্যস্ততা তার সঙ্গী৷ নিছক পূণ্যার্জন যার করেন তাদের কাছে পরম যাত্রা৷ আর যারা নিজস্ব আঙিনা খোঁজেন তাদেরও স্থানের অভাব নেই৷ সেই কারণেই হাতছানি দেয় নির্জন চক্রতীর্থ সৈকত৷ বাতাসে কালো মেঘ থাকলে, ঝড়ো হাওয়ার দিনে মন উথাল পাথাল হলে আসবেন কি? সঙ্গে কেউ থাকুক বা নাই থাকুক৷ একাকীত্ব বা সঙ্গী যেই থাক আপনার সঙ্গে সময় কেটে যাবে অবলীলায়৷ একটা উপন্যাস থাকলেই তো সব মিটে যায়৷
এক নজরে পুরী
ওডিশা রাজ্যের পুরী একটি সৈকত শহর৷ বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত এই শহর রাজধানী ভুবনেশ্বর থেকে প্রায় ৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। হিন্দুদের চারধামের অন্যতম একটি ধাম হিসেবে বিখ্যাত। প্রাচীনকালে শ্রীক্ষেত্র এবং নীলাচল নামে পরিচিত ছিল পুরী। রথযাত্রা পুরীর আন্তর্জাতিক পরিচিত উৎসব৷ আর আছে বিশ্ববিখ্যাত জগন্নাথ ও কোনারক মন্দির৷
তবে পুরীর সৈকত সৌন্দর্যের আলাদা টান রয়েছে৷ সেই কারণেও বহু পর্যটক আসেন এই শহরে৷ অজস্র হোটেল ও ভিড়ে থিক থিক করে পুরী৷ তারই মধ্যে যারা নির্জনতাকে উপভোগ করতে চান তাদের জন্য রয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা৷ ভরা বর্ষায় যখন উত্তাল হবে বঙ্গোপসাগর তখন আসবেন পুরীতে৷ অপরূপ প্রাকৃতিক দৃশ্য চিরকালীন হয়ে মনের ক্যামেরায় বন্দি থাকবে৷