বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে- ফখরুল

0 ১,০২৬

বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘চিন্তা ও কাজের ক্ষেত্রে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে। ভিশন ২০৩০ এর বড় প্রমাণ।’
রবিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বিএনপি ঘোষিত ভিশন-২০৩০  নিয়ে এক গোল টেবিল আলোচনায় প্রধান আলোচকের বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। সেন্টার ফর ন্যাশনাল রিজিওনাল রিসার্স স্টাডিজ এর আয়োজন করে। সভার সঞ্চালক ছিলেন ব্যারিস্টার পারভেজ আহমেদ।
ভিশন- ২০৩০ ঘোষণা শেষ হতে না হতেই আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রতিক্রিয়া দেয়ার সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ‘তারা বলছেন এটা অন্তসারশুন্য, ফাঁপা বেলুন। কেউ আবার বলছেন, বিএনপি তাদের অনুকরণ করেছে। কিন্তু বিএনপির দর্শন অনুকরণ করে আওয়ামী লীগ তাদের রাজনৈতিক দর্শন, কর্মসূচি পরিবর্তন করেছে।’
বিএনপি আওয়ামী লীগের ভিশন অনুকরণ করেনি দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘যেভাবেই হোক তারা (আওয়ামী লীগ) রাষ্ট্রপরিচালনার দায়িত্বে। তাদের কাছ থেকে আমরা গঠনমূলক ভূমিকা প্রত্যাশা করি।’
বিএনপির ভিশনে জোটের অন্যতম শরিক জামায়াতের কথা উল্লেখ না থাকার ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে এই বলে ঐক্য হয়েছিলো যে, জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠায় রাজপথের আন্দোলনে বিএনপির পাশে জামায়াত থাকবে। এর বাইরে অন্য কিছু না। তাদের সঙ্গে যে জোট এটা পুরোপুরি রাজনৈতিক। তাই ২০৩০ সালে জামায়াতের সঙ্গে আমাদের কি সম্পর্ক হবে সেটা এই মুহূর্তে বলার অবকাশ নেই। সুতরাং এখানে জামায়াতের বিষয়টি উল্লেখ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।’
গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন- নাগরিক ঐক্যর আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্র্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অবঃ) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির সহ আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, সহ তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আমিরুজ্জামান খান শিমুল,  সাবেক সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেন বকুল, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, কাদের গনি চৌধুরী প্রমুখ।
এ ছাড়াও গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, শিক্ষাবিদ ড.মাহবুব উল্লাহ, প্রফেসর দিলারা চৌধুরী, সাবেক সচিব ইসমাঈল জবিউল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল ইসলাম, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম আলোচনায় অংশ নেন।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০ এর বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, ‘খালেদা জিয়া তার অনেক বক্তব্যে র‌্যাব বিলুপ্তির কথা বলেছেন। কিন্তু যে ভিশন দিয়েছেন সেখানে র‌্যাব বিলুপ্তির কথা বলেননি। এমনকি জনগুরুত্বপূর্ণ রামপাল ইস্যু নিয়ে কোনও কথা বলেননি। এমনকি রামপাল শব্দটিও নেই।’
তিনি বলেন,‘ ভিশনে একইভাবে ভারতীয় আগ্রাসন, অত্যাচার, নির্যাতন, বিশেষ করে দেশে ‘র’য়ের কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কি ব্যবস্থা নিবেন সে বিষয়েও কিছু বলেননি।’
বিএনপির ভিশন নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার হলে নকল ছাড়া সব নকল করা ভালো। আপনারা বলছেন, বিএনপি অনুকরণ করেছে। খারাপ কিছু অনুকরণ না করা ভালো, ভালোর অনুকরণ করলে দোষের কিছু নেই।’
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, ‘ভালো ভালো কথা শেষ। এখন কাজ করতে কবে মাঠে নামবেন। না এবারও বলবেন ঈদের পর। আপনারা আর কত অজুহাত দেবেন।’
ড. মাহবুব উল্লাহ বলেন, ‘খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন ২০৩০ কাগজে লেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে দেশের প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। প্রয়োজনে এ ব্যাপারে আরও অনুশীলন করতে হবে। সম্ভব হলে সারাদেশে বিএনপির কর্মীদের মাধ্যমে জনগণের কাছে এই ভিশন তুলে ধরতে হবে।  আর যদি সেই ইচ্ছা, ধৈর্য্য, মানসিকতা এবং দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছা থাকে সেক্ষেত্রে বিএনপির ঘোষিত ভিশন বাস্তবায়ন অসম্ভব নয়। হয়তো এক সময় হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘আন্তরিকতায় হউক, পরিস্থিতির চাপে হউক বা মুখ রক্ষায় হলেও দেশের প্রধান বড় দুটো রাজনৈতিক দল তাদের ভবিষ্যত ভিশন উপস্থাপন করায় আমি ব্যক্তিগতভাবে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ভিশন- ২০৩০ ঘোষণায় বলেছেন- বিএনপি আগামী দিনে রাষ্ট্র পরিচালনায় গেলে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং মুক্তিযুদ্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে যথাযথভাবে সম্মান ও গুরুত্ব দেওয়া হবে।  প্রশ্ন থেকে যায়- যদি বিএনপি আগামী দিনে নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় সেক্ষেত্রে  বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কি হবে? রাজনৈতিক জোটে থাকা জামায়াত তো থাকবেই? যাদের এখন যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত থাকার অপরাধে বিচার করা হচ্ছে। তিনি (খালেদা) এ বিষয়টি স্পষ্ট করেননি। তাই আমি মনে করি খালেদা জিয়ার ঘোষিত ২০৩০ ভিশনে সত্যতা, সঠিকতা, আন্তরিকতা যেমন আছে তেমনি আছে ভক্তি প্রবণতা।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ২০২১ সালকে টার্গেট করে ভিশন ঘোষণা করেছিল তখন বলেছিলাম ভালো হয়েছে। সম্প্রতি বিএনপির পক্ষ থেকে ২০৩০ টার্গেট করে ভিশন ঘোষণা করা হয়েছে। এটা ভালো দিক অন্তত এই মর্মে যে, দেশের প্রধান দুটো বড় রাজনৈতিক দল নিজ থেকে জবাবদিহিতার ক্ষেত্র তৈরি করছেন। তবে ভিশন ঘোষণা করায় খালেদা জিয়াকে ভিশনারী নেতা বলতে পারবো কিনা তা বিবেচনা করতে হবে।’
প্রফেসর দিলারা চৌধুরী বলেন ‘খালেদা জিয়া ভিশন-২০৩০ এর মাধ্যমে যে স্বপ্ন দেখিয়েছেন তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পরিপূরক। কারণ বর্তমানে বাংলাদেশে মত প্রকাশের সুযোগ দিনে দিনে সংকুচিত হয়ে আসছে। গণতন্ত্র নাই। দেশে গণতন্ত্র অত্যন্ত প্রয়োজন। দেশের জনগণের মধ্যে গণতন্ত্রের আকাঙক্ষা রয়েছে। সময় এসেছে আমাদের সবাইকে এখন জাতি হিসেবে সুসংগঠতি হবার। আর সেক্ষেত্রে প্রথম প্রয়োজন হবে দেশে একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। ব্রেকিংনিউজ

Leave A Reply

Your email address will not be published.