বেজে উঠেছে যুদ্ধের দামামাঃ ভয়ে গ্রাম ছাড়ছেন সীমান্তবাসীরা
আন্তর্জাতিক ডেস্ক : নিয়ন্ত্রণ রেখা পেরিয়ে পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের পর দুই দেশেরই সীমান্তের অনেক জায়গায় সম্ভাব্য হামলার আশঙ্কা করছেন দুই দেশের সেনাবাহিনী। ফলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গ্রামবাসীদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
ভারতীয় পাঞ্জাব রাজ্যে আন্তর্জাতিক সীমান্তের দশ কিলোমিটার এলাকার গ্রামগুলো থেকে সাধারণ মানুষকে সরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে গতরাত থেকেই।
বিবিসি বাংলার এক খবরে জানানো হয়েছে, পাকিস্তান শাসিত কাশ্মীরে ভারতীয় সেনাদের হামলার পর পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে দেখা দিয়েছে পাকিস্তানের জবাবী হামলার আশঙ্কা।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বা গোটা জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যে এধরণের কোনো সরকারী নির্দেশ না দেওয়া হলেও জম্মু এলাকার সীমান্তবর্তী গ্রামগুলো থেকে বহু মানুষ নিজ-উদ্যোগেই সরে যাচ্ছেন।
এদিকে, পাকিস্তানের সীমান্তের কিছু এলাকা থেকে মানুষজন সরে যাচ্ছেন বলে বিবিসির খবরে জানানো হয়েছে।
অন্যদিকে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর সূত্রগুলো বিবিসিকে জানিয়েছে, নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে তাদের কথায় ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ চালানো হয়েছিল বুধবার রাতে, তারপরে নিয়ন্ত্রণ রেখার অন্যদিক থেকে গুলিবর্ষণ হয়েছে বৃহস্পতিবার রাতে।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জম্মুর ডেপুটি কমিশনার সিমরণদীপ সিংকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, অখনূর সেক্টরে পাকিস্তানি ফরোয়ার্ড পোস্ট থেকে গুলি চালানো হয়েছে রাত বারোটা থেকে দেড়টার মধ্যে। পল্লনওয়ালা, চপড়িয়াল আর সমনাম এলাকায় এই গুলি বর্ষণ হয়েছে। তবে এই ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর নেই।
এধরণের আরও জবাবী হামলা হতে পারে, এই আশঙ্কায় পাঞ্জাব আর জম্মু এলাকায় আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি গ্রামগুলো থেকে সাধারণ মানুষদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ সিং বাদল জানিয়েছেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালেই যখন সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ব্যাপারে জানানো হয়, তারপরেই সীমান্ত থেকে গ্রামবাসীদের সরিয়ে দেওয়া শুরু করেছে সরকার।’
স্থানীয় সাংবাদিকরা বিবিসি-কে জানিয়েছেন ছয়টি সীমান্তবর্তী জেলার অন্তত এক হাজার গ্রাম খালি করানো হচ্ছে। স্থানীয় গুরুদোয়ারাগুলি থেকে গ্রাম খালি করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে মাইকে। প্রতিটি জেলায় গ্রাম খালি করা এবং মানুষদের দেখভালের জন্য একেক জন করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্কুলবাড়ি বা গুরুদোয়ারাগুলোতে রাখা হচ্ছে সীমান্ত অঞ্চল থেকে চলে আসা মানুষদের।
তবে যেসব মানুষদের গ্রাম থেকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের অনেকে বলছেন যে তাদেরকে পেকে ওঠা ফসল ক্ষেতেই ফেলে রেখে চলে যেতে হচ্ছে। যদিও পাঞ্জাব সরকার বলছে ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ি বা ফসলের ক্ষেত পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে তারা। সব পুলিশকর্মীর ছুটি বাতিল করে দেওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে, জম্মু-কাশ্মির রাজ্যের সীমান্ত অঞ্চল থেকেও মানুষজন জবাবী হামলার আশঙ্কায় ঘর ছেড়ে চলে যেতে শুরু করেছেন।
বিএসএফ-এর একজন কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন যে সরকারীভাবে সরে যাওয়ার কোনো নির্দেশ জারি হয়নি, কিন্তু অনেকেই আতঙ্কে ঘর ছাড়ছেন। বিশেষত জম্মু অঞ্চলে গতকাল থেকে এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
আন্তর্জাতিক সীমান্ত বা নিয়ন্ত্রণ রেখার কাছাকাছি যেসব মানুষ থাকেন, তাঁদের একাংশের সঙ্গে কথা বলে শ্রীনগর থেকে বিবিসি-র সংবাদদাতা রিয়াজ মাশরূর জানাচ্ছেন দুই দেশের যুদ্ধবিরতি ভেঙ্গে যাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা।
এর আগেও যখন যুদ্ধবিরতি ভেঙ্গেছে, সেইসব সময়ের কথা মনে করে বাসিন্দারা বিবিসিকে বলেছেন, গোলাবর্ষণ হলে সব থেকে কঠিন পরিস্থিতিতে সীমান্তের মানুষদেরই পড়তে হয়। কখন কার বাড়িতে গোলা এসে পড়বে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এদিকে ভারত শুক্রবার জানিয়েছে যে তাদের এক সেনাসদস্য ভুলক্রমে গতকাল নিয়ন্ত্রণ রেখা পার করে যাওয়ার পরে তাকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী আটক করেছে। রাষ্ট্রীয় রাইফেলস-এর ওই সদস্য চন্দু বাবুলাল চৌহানকে ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা চলছে বলে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং জানিয়েছেন।