ভাষাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে

0 ২১২
রাবি প্রতিনিধি:  ভাষাকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে সমূহ বিপদের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ সকল ভাষা ব্যবহারীদের নিজস্ব কিছু রীতি বা প্রকাশভঙ্গি আছে। নিজ ভাষার বাইরে অন্য ভাষায় সুপণ্ডিত হলেও ঐ স্টাইল রপ্ত করা সহজ নয়। ভাষা আন্দোলনকালে ভাষায় যেমন ধর্মের প্রলেপ দেবার চেষ্টা করা হয়েছে, পরবর্তীতেও এই চেষ্টা কম হয়নি। এ বিষয়ে আনিসুজ্জামান, মুনতাসীর মামুন ও অন্যান্যরা লিখেছেন। কিন্তু এই প্রবণতা এখনও বন্ধ হয়নি।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাডেমিক ভবনে ‘ভাষা আন্দোলনের ৭৫ বছর: সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক অর্জন’ শীর্ষক এক সেমিনার এসব কথা বলেন বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ ফায়েক উজ্জামান।
বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সভাপতি অধ্যাপক মো. মাহবুবুর রহমানের সভাপতিত্বে তিনি আরো বলেন, আজকাল শিষ্ঠাচারমূলক বাক্য ‘কেমন আছেন’ বললে উত্তর আসে ‘আলহামদুলিল্লাহ’। এতে প্রশ্নের সঠিক উত্তর পাওয়া যায় না। মুখোচ্চালিত শব্দে স্রষ্টার সন্তুষ্টি অসন্তুষ্টি নির্ভর করে না। স্রষ্টা সত্যের উপাসক চান। মীর মশারফ হোসেন তাঁর বিষাদ সিদ্ধুতে ঈশ্বর, উপাসনালয় প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করেছেন অবলীলায়। এটি তখন  সমাজে নিন্দিত হয়নি বরং ভালো সাহিত্যের সর্বাধিক পঠিত ঐতিহাসিক উপন্যাস এটি।
অধ্যদপক ফায়েক উজ্জামান বলেন, ভাষা একটি সতত প্রবহমান বিষয়। তাকে আটকে রাখা যায় না। ভাষা আন্দোলনকালে কিছু বুদ্ধিজীবী বাংলাভাষার গুরুত্বকে খাটো করে উর্দুকে শ্রেষ্ঠত্বের আসন দেবার চেষ্টা করেন। কিন্তু চূড়ান্ত বিচারে তা ধোপে টেকেনি। যদি আমি বাংলা ভাল নাও বলতে পারি, তবুও নৃতাত্ত্বিকভাবে আমি বাঙালি। অন্য ভাষায় পণ্ডিত হলেও আমার বাঙালি পরিচয় মুছে যাবার নয়।
এসময় সেমিনারে মূল প্রবন্ধ ছাড়াও অধ্যাপক মো. হাসিবুল আলম প্রধানের ‘ভাষা আন্দোলন ও স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়’, অধ্যাপক মোবাররা সিদ্দিকার ‘সাংস্কৃতিক আধিপত্য ও বাংলা ভাষা’, অধ্যাপক মো. আরিফুর রহমানের ‘তৃণমূলে ভাষা আন্দোলন : প্রসঙ্গ বৃহত্তর কুষ্টিয়া জেলা’, ড. হোসনে আরা খানমের ‘ভাষা আন্দোলনে নারী’, ড. মো. গোলাম সারওয়ারের ‘বাংলা ভাষার সংস্কার প্রয়াস: পাকিস্তান সরকারের বাংলা ভাষায় আরবী হরফ প্রবর্তনের উদ্যোগ’, মো. হেলাল উদ্দিনের ‘ভাষা আন্দোলনে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা: একটি ঐতিহাসিক পর্যালোচনা’ ও আফরোজা আক্তার এ্যানীর ‘আদালতে বাংলা ভাষার প্রচলন: একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক ৭টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়।
সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যাল‌য়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম, বাংলাদেশ ইতিহাস সম্মিলনীর সাধারণ সম্পাদক ড. মুর্শিদা বিনতে রহমান ও অধ্যাপক চৌধুরী জুলফিকার মতিন, বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহম্মদ নূরুল্লাহ্, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পাণ্ডে প্রমুখসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।

Leave A Reply

Your email address will not be published.