ভাষা সৈনিক গোলাম আরিফ টিপু’র স্মরণে রাজশাহীতে নাগরিক শোকসভা

0 ১০৬
স্টাফ রিপোর্টার: নাগরিক শোকসভা কমিটি, রাজশাহীর আয়োজনে প্রয়াত ভাষা সৈনিক, মানবতা বিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর বীর মুক্তিযোদ্ধা গোলাম আরিফ টিপু’র স্মরণে নাগরিক শোক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।  রবিবার (৫ মে) বিকেল ৫টা থেকে রাত পৌনে ৮টা পর্যন্ত রাজশাহী কলেজ অডিটোরিয়ামে আয়োজিত নাগরিক শোক সভায় বক্তব্য দেন নাগরিক শোকসভা কমিটির প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সভায় সভাপতিত্ব করেন নাগরিক শোকসভা কমিটির সভাপতি ও ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জী। নাগরিক শোকসভা কমিটির সদস্য সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা রুহুল আমিন প্রামাণিক শোকসভার সঞ্চালনা করেন।

রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন তাঁর বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশের কৃর্তিমান মানুষ ছিলেন গোলাম আরিফ টিপু। তিনি পুরো জীবনে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে মানুষকে আইনি সহায়তা দিয়েছেন। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর করেছিলেন। অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে তিনি তাঁর দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করেছেন। বিভিন্ন সময় হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। তবে তিনি রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। তিনি কখনো আদর্শের সাথে আপোষ করেননি।

রাসিক মেয়র আরো বলেন, সোনাদীঘী সংলগ্ন পরিত্যক্ত সার্ভে ইনস্টিটিউট এর জায়গায় রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। এজন্য সিটি কর্পোরেশন থেকে প্রায় এক বছর আগে টেন্ডারও আহ্বান করা হয়। কিন্তু জায়গাটি সিটি কর্পোরেশনের না হওয়ায় জেলা পরিষদ  অনুমতি দেয়নি। এজন্য শহীদ মিনার নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। জেলা পরিষদ থেকে বলা হয়েছিল, তারা নিজেরা শহীদ মিনার নির্মাণ করবে। সেটিও যদি করা হয়, তা যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্মাণ করা হয়।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্ট মন্ডলীর সদস্য ও রাবির সাবেক উপাচার্য প্রফেসর আব্দুল খালেক বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন গোলাম আরিফ টিপু। তিনি ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ সহ বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করেছেন। তিনি ছিলেন অতুলনীয়। তাঁকে নিয়ে আমরা গর্বিত। তিনি আমাদের সম্মুখে না থাকলেও হৃদয়ে থাকবেন সব সময়।

প্রয়াত গোলাম আরিফ টিপুর সহধর্মিণী জাহনারা বেগম লুই বলেন, ভাষা আন্দোলনে দেশের প্রথম শহীদ মিনার রাজশাহীতে নির্মাণে নেতৃত্ব দিয়েছেন গোলাম আরিফ টিপু। সেটি এখনো পুর্ণাঙ্গভাবে নির্মিত হয়নি। রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনেও তিনি ছিলেন। সেটি নির্মাণে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।

শোকসভার সভাপতি ভাষা সৈনিক মোশাররফ হোসেন আখুঞ্জী বলেন, গোলাম আরিফ টিপু বহু গুনের অধিকারী ছিলেন। তিনি সুবিধাবাদীর দলে থেকে অনেক উপরে যেতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা করেননি। তিনি এদেশের গরীব ও অসহায় মানুষের হয়ে আজীবন লড়েছেন। মানুষের জন্য রাজনীতি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে মূল্যায়ন করেছেন।

নাগরিক শোক সভায় বক্তারা বলেন, গোলাম আরিফ টিপু ছিলেন একজন কর্মবীর। ভাষা আন্দোলন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান চিরস্মরণীয়। তিনি দেশ ও জাতির জন্য কাজ করেছেন। জাতিকে পথ দেখিয়েছেন। তিনি ছিলেন উজ্জ্বল নক্ষত্র। দেশ যতদিন থাকবে, ততদিন তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

নাগরিক শোক সভায় আরো বক্তব্য রাখেন রাবির উপাচার্য প্রফেসর গোলাম সাব্বির সাত্তার তাপু, জাতীয় শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা নূরকুতুব আলম মান্নান, রাবির প্রাক্তন বঙ্গবন্ধু চেয়ার প্রফেসর সনৎ কুমার সাহা, ওয়ার্কাস পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, রাজশাহী বারের সিনিয়র আইনজীবী এ্যাড. লোকমান আলী, কবি জুলফিকার মতিন, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, ন্যাপ রাজশাহী মহানগর সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান খান আলম, বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড. সাইদুর রহমান, সাবেক মহানগর কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আব্দুল মান্নান, রাজশাহী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল খালেক, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক কবি আরিফুল হক কুমার, সিপিবি রাগিব হাসান মুন্না, প্রয়াত গোলাম আরিফ টিপুর বড় মেয়ে ডালিয়া নাসরিন, জাসদ রাজশাহী মহানগর সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ শিবলী প্রুমখ বক্তব্য রাখেন।

সভায় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী -৩ আসনের সংসদ সদস্য আসাদুজ্জামান আসাদ, রাজশাহী কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর মুহা. হবিবুর রহমান, ১২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর সরিফুল ইসলাম বাবু সহ বীর মুক্তিযোদ্ধাবৃন্দ, রাজনৈতিক, সামাজিক,সাংস্কৃতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ সহ নগরীর গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।

শোকসভার শুরুতে ভাষা সৈনিক  গোলাম আরিফ টিপু’র স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এছাড়া শুরুতে তাঁর প্রকৃতিতে নাগরিক শোকসভা কমিটি সহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.