মানিকের `জান্নাত' এ মশগুল সাইমন-মাহি

0 ১,৮৫০

বিনোদন ডেস্ক : ১০ ফেব্রুয়ারি,শুক্রবার,মানিকগঞ্জের হরিরামপুর ইউনিয়ন,বেলা তখন দুইটার কিছু বেশি। রাস্তা থেকেই দেখা গেলো ফসলী ক্ষেতের মাঝখানে উঁচু একটা ঢিবির মতো। তার উপর আর চারপাশে মানুষের ভিড়। বুঝলাম না জায়গামতোই এসেছি আমরা। আমরা মানে সাংবাদিকরা আর কি। এবার ফিরি আগের কথায়। গাড়ি থেকে নামতেই জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সাইমন সাদিকের ফোন – ” ভাই কই আপনারা ? রাস্তা ভুল করেননিতো আবার ?” নায়ককে চিন্তার হাত থেকে রেহাই দিয়ে জানানো হলো- না রাস্তাও ভুল হয়নি আর আমরাও তার শুটিং স্পটের সামনেই। মানিকগঞ্জের এই হরিরামপুর ইউনিয়নেই গেলো ৩১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়ে মোস্তাফিজুর রহমান মানিক পরিচালিত এবং দেশীয় চলচ্চিত্রের অন্যতম জনপ্রিয় জুটি সাইমন-মাহি অভিনীত ”জান্নাত” ছবিটির শুটিং। আর এই ”জান্নাত” ছবিটির শুটিং দেখতেই সাংবাদিকরা গিয়েছিলেন সেখানে।

jannatfff

শুটিং স্থলে পৌঁছাতেই সাংবাদিক দলকে দেখেই ছবিটির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক হাসিমুখে সাদর আমন্ত্রণে এগিয়ে এসে কুশল বিনিময় করলেন সবার সঙ্গে । পরিচালক যখন কুশল বিনিময়ে ব্যস্ত সাইমন-মাহি তখন ব্যস্ত ছবির গানের একটি শটের কাজে। সেই কাজের মধ্যেই নায়ক ও নায়িকা ইশারায় জানালেন সম্ভাষণ। মিনিট পাঁচেক পরেই শট শেষ হতেই দুজনেই আসলেন এবং এরপর বেশ খানিকক্ষণ চললো কুশল ও আড্ডা পর্ব। আমরা যখন পৌঁছাই তখন শুটিং চলছিল মাচাইন নামক একটি স্থানে। পৌঁছানোর কিছুক্ষন পরেই শুটিং এর ইউনিট যাত্রা শুরু করলো সেখান থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে ভাদুয়াখোলা নামক আরেকটি স্থানের দিকে। ভাদুয়াখোলা যেতে যেতেই ছবিটির পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান মানিক বললেন,”এখন যে গানটির শুটিং চলছে তার শিরোনাম ”মন যদি ভেঙে যায় লাগে না জোড়া।” এই গানটির শুটিং শেষ হলে দুটি গানের শুটিং শেষ হবে। গানটির সুর-সংগীতের পাশাপাশি এতে কণ্ঠও দিয়েছেন আরেফিন রুমি।”

jannatffff

কথা বলতে বলতেই সবাই পৌঁছে গেলাম ভাদুয়াখোলাতে। এই ভাদুয়াখোলার গুনেরপুটি নামক গ্রামের প্রাচীন বটগাছ,সামনে বিল আর পেছনে দিগন্তজোড়া ফসলী জমির সবুজ আবহে শুরু হলো শুরু হলো দিনের শেষভাগের শুটিং। শুটিং শুরু হতে না হতেই চারপাশে বেড়ে উঠলো দর্শকের ভিড়। সে ভিড় দেখলে দূর থেকে কেউ দেখলে ভাবতেই পারতেন সেখানে বুঝি বসেছে কোনো গ্রামীণ মেলা। একটা ব্যাপার দেখে বেশ ভালো লাগলো। আর তাহলো এই এলাকার বাসিন্দারা শুটিং আর নায়ক-নায়িকা দেখার জন্য ভিড় করলেও শুটিং শুরু হলেই তারা চুপচাপ দূরে দাঁড়িয়ে শুটিং দেখছিলেন। কোনো হৈ-হুল্লোড় বা কোনো ঝামেলা তারা করছিলেন না। তবে শুটিং শেষ হলেই সাইমন-মাহির সাথে সেলফি তুলতে ভুলছিলেন না মোটেও।

এখানে শুটিং এর ফাঁকে চিত্রনায়ক সাইমন বললেন,”ছবিটির কাজ করে বেশ মজা পাচ্ছি। পরিচালক খুব গুছিয়ে কাজ করছেন। খুবই চমৎকার একটি গল্প নিয়ে নির্মিত হচ্ছে”জান্নাত”। কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে এ ছবিটি আমার এবং মাহির ক্যারিয়ারকে সমৃদ্ধ করে দেবে। এর গানগুলোও বেশ চমৎকার। গানের দৃশ্যায়নগুলোও হচ্ছে গল্পের সঙ্গে সামঞ্জস্য মিলিয়ে। আমার বিশ্বাস দর্শকরা দারুণ একটি ছবি উপহার পেতে যাচ্ছেন।” গল্প-গুজব আর শুটিং এর মধ্য দিয়েই পড়ন্ত বেলার শেষ দৃশ্যটির শুটিং শেষ করে বিরতি নিলেন পরিচালক। এই বিরতির ফাঁকেই পুরো শুটিং ইউনিট আর আমরা আবার রওনা হলাম মূল শটিং স্পটের দিকে। যেখানে ছিলাম সেখান থেকে মূল শুটিং স্পট মাত্র ১৭ কিলোমিটার দূরে ! মূল শুটিং স্পটে পৌঁছে খাওয়াদাওয়া আর বিশ্রামের ফাঁকে মাহি বললেন ”জান্নাত” নিয়ে তার অভিজ্ঞতা-অনুভূতির কথা। তিনি বললেন,”নায়ক হিসেবে সাইমন আমার বরাবরই পছন্দের শিল্পী। ওর সঙ্গে কাজ করতে খুব মজা পাই। এই একটা কথা আমি বিশেষভাবে উল্ল্যেখ করতে চাই। আর তা হলো – আমি এখন পর্যন্ত অনেক বড় বাজেটের ছবিতে নামি নির্মাতাদের সঙ্গে কাজ করেছি। কিন্ত মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের পরিচালনায় কাজ না করলে একটা আফসোস হয়তো আমার থেকেই যেত। এত গোছানো, পরিচ্ছন্ন, নিখুঁত নির্মাণের চেষ্টা আমি আর কোনো পরিচালকের মধ্যে পাইনি। মানিক ভাই অনেক হেল্পফুল এবং ভদ্র মানুষ। যার কারণে আমি নিজেই প্রেসারে থাকি এই ভেবে যে আমার কোনো আচরণ বা কাজে তিনি কষ্ট পাচ্ছেন কি না। তার টিমের কোনো ক্ষতি হচ্ছে কী না। আমি চিরদিন ”জান্নাত” ছবির শুটিংয়ের কথা মনে রাখবো।” নায়ক-নায়িকার কথা শুনে বেশ ভালোই বোঝা গেলো মানিকের ”জান্নাত” এ মশগুল হয়ে আছেন তারা। আর পরিচালকও যে সাইমন-মাহির কাজে বেশ খুশী তাও বোঝা গেলো তার মন্তব্যে। তিনি বললেন,” সাইমনের সঙ্গে আমি আগেও কাজ করেছি। নায়ক হিসেবে সে সবসময়ই পরিচালক ও শুটিং ইউনিটে জনপ্রিয়। কোনো রকম ভোগান্তি নেই। নিজের কাজের প্রতি মনেযোগী এবং শ্রদ্ধাশীল। তবে মাহির সঙ্গে প্রথমবার। উৎকণ্ঠা যে ছিলো না তা নয়। তবে কাজ করতে এসে দেখলাম কাজের প্রতি সে শতভাগ পেশাদার। নিজের চরিত্রটি সহজেই বুঝে নিতে পারে। অল্পতেই ধরে নিতে পারে পরিচালক কেমনটা প্রত্যাশা করছে তার কাছে। এই ছবি দিয়ে নতুন মাহির পরিচয় ঘটবে বলে আমিও প্রত্যাশী। পাশাপাশি এটাও আশা করছি যে ”পোড়ামন” ছবির পর আবারও ”জান্নাত” হবে এই জুটির আরেকটি জনপ্রিয় ছবি।”

jannatfffff

এত গল্প,এতো আলাপ -মনে হচ্ছিলো দিনটাই বুঝি ছোট ! হুট্ করেই গল্পের জোয়ার ঠেকাতেই নেমে পড়েছে অন্ধকার। কি আর করা ! এবার পালা বাড়ী ফেরার। পেছনে পড়ে রইলো হরিরামপুরে থেকে যাওয়া ”জান্নাত” ছবির সঙ্গে জড়িত মানুষগুলোর ভালোবাসার ও মায়া আর গ্রামের মানুষের সারল্যমাখা মুখগুলো। তবে মনে মনে একইসাথে এটুকু আশাও জ্বলে রইলো যে মোস্তাফিজুর রহমান মানিকের পরিচালনায় সাইমন-মাহি জুটি দেশীয় চলচ্চিত্রে সম্ভবত উপহার দিতে যাচ্ছেন নতুন এক ভালোলাগার ছবি,সফল ছবি। শুভকামনা টিম ”জান্নাত”। অনলাইন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.