রাজশাহী প্রতিনিধি : রাজশাহীর চিহ্নিত রাজাকার আবদুস সাত্তারের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন আন্তর্জাতিক আপরাধ ট্রাইব্যুনাল। বুধবার (১১ ডিসেম্বর) আদালতের এ আদেশ দেওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবার, হামলা ও নির্যাতনের শিকার পরিবার, মুক্তিযোদ্ধা ও এলাকাবাসী। এ সময় অপরাধীর সাজা দ্রুত কার্যকরের দাবি জানান তারা।
জানা গেছে, টিপু রাজাকারের বিরুদ্ধে রাজশাহীর বোয়ালিয়ায় ১০ জনকে হত্যা, দু’জনকে দীর্ঘদিন আটকে রেখে নির্যাতন, ১২ থেকে ১৩টি বাড়ির মালপত্র লুট করে আগুন দেওয়ার অভিযোগ তদন্ত করে পাওয়া যায়। তবে, ছয়জনের মধ্যে মনো, মজিবর রহমান, আবদুর রশিদ সরকার, মুসা ও আবুল হোসেন আগেই মারা গেছেন। বেঁচে আছেন একমাত্র টিপু সুলতান।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে রাজশাহীর মো. আবদুস সাত্তার ওরফে টিপু সুলতান ওরফে টিপু রাজাকারের রায় বিচারপতি শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল বুধবার এ রায় দেন। এটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ৪১তম রায়।
এদিকে রাজশাহীর শীর্ষ রাজাকারের ফাঁসি হওয়ায় উল্লাস প্রকাশ করেছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। দ্রুত রায় কার্যকরের দাবি জানান তারা। বুধবার সকালে রাজশাহী মহানগরের রাণীনগর শহীদ মিনারে সকাল থেকে আসতে থাকেন মুক্তিযোদ্ধা, শহীদ পরিবারের সদস্যরা। রায় ঘোষণার পর সেখানে তারা মিষ্টি বিতরণ করেন।
নগরীর রামচন্দ্রপুর এলাকার জয়নাব বলেন, আমরা সে সময় দেখেছি প্রকাশ্য টিপু রাজাকাররা ঘুরে বেড়াতো। আমাদের খুব খারাপ লাগত কষ্ট লাগতো। তবে আমরা কিছু করতে পারতাম না ভয়ে রায় প্রকাশের মামলায় সাক্ষী দেওয়ার পর রায় প্রকাশের সর্বোচ্চ শাস্তি হওয়ার জন্য তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
শহীদ পরিবারের দাবি, দীর্ঘদিন প্রত্যাশিত এই ফল এখন দ্রুত বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজশাহী অঞ্চলের এই রাজাকারদের শাস্তির মাধ্যমে বিচার কাজ শেষ হবে তবেই তারা শান্তি পাবেন।
টিপু রাজাকারের হাতে নিহত শহীদ মন্ডলের ছেলে শাহ জামান বলেন, আমার বাবাকে তারা ধরে নিয়ে হত্যা করেছিল। তার লাশের কোন সন্ধান পাওয়া যায়নি। এই ঘটনার সাথে যুক্ত ছিল টিপু রাজাকার। তার ফাঁসির রায় হওয়ায় খুব আনন্দ লাগছে। অন্তত আমার বাবার আত্মা শান্তি পাবে।
মুক্তিযোদ্ধা শাহজাহান আলী বরজাহান বলেন, সেসময় প্রকাশ্যে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা তাদের পরিবারের উপর নির্যাতন চালাতো টিপু রাজাকার ও তার দলবল। তাদের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল ছিলো সেখানে গিয়ে নির্যাতন করা হতো। এই রাজাকারের মৃত্যুদণ্ডে স্বাগত জানায়। একই সাথে গ্রামগঞ্জে আরও যে রাজাকার আছে তাদেরও বিচার জানায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে টর্চার সেল থেকে বেঁচে ফিরেছেন তৎকালীন ছাত্রনেতা ও বর্তমানে ওয়ার্কার্স পার্টির রাজশাহী মহানগর সভাপতি লিয়াকত আলী লিকু। তিনি বলেন, রাজশাহীর চিহ্নিত রাজাকার ছিলো টিপু। মুক্তিযুদ্ধের সময় সে ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা ছিলো। সে যুদ্ধের সময় বিভিন্ন পরিবারের হামলা, নির্যাতন, লুটপাট, মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যার মুলহোতা ছিলো। এই রাজাকারের ফাঁসিতে রাজশাহী অনেকটা কলঙ্কমুক্ত হলো। অতিদ্রুত এই রাজাকারের ফাঁসির রায় কার্যকর দেখতে চাই।