রাণীনগরে আ’লীগ নেতা ও ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে মৎস্যজীবীদের ফসল নষ্টের অভিযোগ

0 ৮৪২

রাণীনগর (নওগাঁ) প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের মিরাট গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় মৎস্যজীবীদের (জেলে) বসবাস। যেখানে বর্ষাকালে মনে হবে সমুদ্রের মধ্যে একটি দ্বীপ। চারিদিকে থৈ থৈ পানি। খালে বিলে যখন পানি থাকে, তখন তারা মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন। যখন পানি শুকিয়ে যায়, তখন অনেকটাই তারা বেকার হয়ে পড়েন। আধুনিকতার ছোয়া থেকে তারা অনেকটাই বঞ্চিত। শিক্ষার দিক থেকে তারা পিছিয়ে। তারা গরীব ও অসহায়। দিন এনে দিন খাওয়ার মতো অবস্থা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মিরাট গ্রামের উত্তরপাড়া মুনছুর নামে একটি বিল অবস্থিত। আর এ বিলে সরকারি জমির চেক কেটে গত ২০-২৫ বছর থেকে পশ্চিম পাড়ার শতাধিক মৎস্যজীবীরা চাষাবাদ করে আসছেন। ২০১২ সালে চেক কাটলেও ২০১৩ সালের পর রাণীনগর ভূমি অফিস থেকে চেক দেয়া বন্ধ রাখা হয়। তারপরও মৎস্যজীবীরা ওই সব জমিতে চাষাবাদ করে আসছেন। গত বছর থেকে গ্রামের উত্তরপাড়ার প্রভাবশালী স্থানীয় ১নং ইউপি মেম্বার আজিজুল হক, ওয়ার্ড আ’লীগের সভাপতি মো: হানিফ ও আ’লীগ নেতা মো: মোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে ওই পাড়ার বাসিন্দারা তাদের গরু, ছাগল দিয়ে ফসল নষ্ট করে আসছেন বলে অভিযোগ মৎস্যজীবীদের।

গত ১০-১২ দিন ধরে আবারও মৎস্যজীবীদের বোরো আবাদি জমি গরু, ছাগল দিয়ে নষ্ট করে কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জমিতে কিছু ধান বেরিয়ে পড়েছে আবার কিছু ধান গামুর (থোর) হয়েছে। আর মাস খানেক পর বোরো আবাদ মৎস্যজীবীদের ঘরে উঠার কথা। কিন্তু ওই প্রভাবশালীদের নেতৃত্বে উত্তরপাড়ার বাসিন্দারা তাদের গরু, ছাগল দিয়ে প্রায় ৪০ বিঘা জমির ফসল নষ্ট করেছে। রাতের আধারে আবার বাড়িতে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। অনেকে তাদের ফসল রক্ষায় প্রচন্ড রোদের মধ্যে ছাতা মাথায় দিয়ে জমির আইলে পাহারা দিচ্ছেন। কিন্তু তারপরও রক্ষা হচ্ছে না।

গত ২মার্চ সকাল ১০টার দিকে ফসল নষ্ট করার সংবাদ শুনে মৎস্যজীবী পাড়ার আলিম উদ্দিনের ছোট ছেলে মো: আব্দুল করিম (২২) জমিতে ছুটে যান। গরু, ছাগল দিয়ে ফসল নষ্ট করার কারন জানতে চাইলে জমিতে মো: জিয়ারুল ইসলাম, এবাদুল হকসহ কয়েজন তাকে বেধম মারপিট করে। পরে তাকে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এ ঘটনায় আব্দুল করিমের বড় ভাই মো: রাসেল সরকার বাদি হয়ে জিয়ারুল ইসলাম ও এবাদুল হকসহ সাত জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে রাণীনগর থানায় মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার রাতে জিয়ারুল ইসলাম ও এবাদুল হককে থানা পুলিশ আটক করে শুক্রবার জেল হাজতে প্রেরণ করে।

মৎস্যজীবী মো: মোজাহার আলী প্রামানিক বলেন, আমরা গরীব মানুষ। বিল শুকিয়ে গেলে মাছ শিকার না হওয়ায় জীবিকা নির্বাহ করা কষ্টকর হয়ে উঠে। তাই সরকারি জমি চেক কেটে গত ২০-২৫ বছর ধরে আবাদ করছি। কিন্তু ১০-১২ দিন ধরে গরু, ছাগল দিয়ে প্রভাবশালীরা জমির ফসল নষ্ট করছে। কিছু দিন পর ধান ঘরে উঠবে। সেই ফসল হারিয়ে এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছি।

মৎস্যজীবী পাড়ার মো: ইয়াকুব আলী, আব্দুস সামাদ, ইশারত হোসেন, মফেজ প্রামানিকসহ কয়েকজন বলেন, ফসল রক্ষার্থে পাহারা দিচ্ছি। কিন্তু সব সময় জমিতে থাকা সম্ভব নয়। মেম্বার মো: আজিজুল হক, হানিফ ও মোফাজ্জল হোসেনের নেতৃত্বে ওই পাড়ার লোকজন তাদের গরু, ছাগল দিয়ে ফসল খাওয়াচ্ছে। আবার রাতের আধারে কেটে নিয়ে বাড়িতে রাখে। সমস্যা সমাধানে স্থানীয় প্রশাসনসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তারা।

মিরাট ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড মেম্বার মো: আজিজুল হক তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সম্পন্ন মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন। তিনি বলেন, বিলটি সরকারি এবং উন্মুক্ত জলাশয়। তারা মাছ মেরে ভাত খাবে। বিলে আবার ধান লাগাবে কেন? মৎস্যজীবীরা অবৈধভাবে জমি দখল করে চাষাবাদ করছেন। এমনকি গ্রাম থেকে মাঠে যাওয়ার রাস্তায়ও তারা ধান লাগিয়েছে। তারাই তাদের জমির ধান কেটেছে এবং গরু, ছাগল দিয়ে নষ্ট করছে।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে কোন পক্ষই এখন পর্যন্ত আমাকে কিছু বলেনি।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোনিয়া বিনতে তাবিব বলেন, এ ধরণের কোন অভিযোগ পাইনি। তবে সরকারি জায়গা দখল করে চাষাবাদ করার কোন নিয়ম নাই। যদি চেক কেটে চাষাবাদ করে থাকে তাহলে তাদেরকে কাগজটি নিয়ে দেখা করতে বলেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.