রাবিতে গল্পে-আড্ডায় আত্মতৃপ্তির ইফতার

0 ১৫৯
আসাদুল্লাহ গালিব, রাবি প্রতিনিধি: রমজান মাসের রহমত বরকতকে ভাগাভাগি করে নিতে বন্ধু বান্ধবসহ একসাথে বসে ইফতার করার অনুভূতিই অন্যরকম।সূর্য যখন দিবসের ক্লান্তি শেষে গোধূলির লগ্নে, তখন বেলা ডোবার সাথে পাল্লা দিয়ে জমে ওঠে বন্ধুদের সাথে ইফতার আড্ডা। সবুজ গালিচায় মাদুর কিংবা পত্রিকা বিছিয়ে গোল হয়ে বসে যায় সবাই। শুরু হয় গল্পে-আড্ডায় ইফতার পরিবেশনের কার্যক্রম। হরেকরকম আয়োজন থাকে ইফতার সামগ্রীর মেন্যুতে। সবাই একটি উপলক্ষ্য নিয়েই সমবেত হয়। এ রকম আয়োজন যেন বন্ধুত্বের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব আর আত্মিক বন্ধনকে আরো দৃঢ় করে দেয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার চত্বরে খোলা মাঠ। সবুজের সমারোহে গোল গোল চত্বর করে বসে আছে একেকটি গ্রুপ। গ্রুপে ১০-১৫ জন করে সদস্য। সবার সামনে অনটাইম প্লেট। তাতে ছোলা, মুড়ি, বুন্দিয়া, পিঁয়াজু, বেগুনি, আলুর চপ একসঙ্গে মেশানো। ফলের মধ্যে রয়েছে কলা, আনারস, পেয়ারা, তরমুজ, শসা, গাজর। সবার চোখে-মুখে রয়েছে আনন্দ-উচ্ছ্বাস। সবাই ভিন্ন ভিন্ন কাজে মশগুল। তবে কেউ কেউ ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের শরবত বা অন্য সামগ্রী তৈরিতে। আবার কেউ কেউ আজান হওয়ার অপেক্ষায় বারবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে ইফতারের ক্ষণগণনা করছেন।
সোমবার শেষ বিকেলে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল সংলগ্ন মাঠ, হলের অভ্যন্তরের মুক্তমঞ্চ, হলের ছাদ, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া, ইবলিশ চত্বর, পরিবহন মার্কেট, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, কিউব চত্বর, টিএসসিসি চত্বর, জুবেরী ভবন সংলগ্ন মাঠ, সাবাস বাংলাদেশ চত্বর, মমতাজ উদ্দীন কলা ভবনের সামনের চত্বরসহ ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি স্থানেই এমন চিত্র চোখে পড়েছে। শিক্ষার্থীরা ইফতার করার জন্য সমবেত হয়। সবাই গোল হয়ে বসে মেতে ওঠে ইফতার পার্টির আনন্দে। ক্ষণিকের এই আয়োজন মনে হয় যেন উৎসবে রূপ লাভ করেছে।
সারাদিনের ক্লাস-পরীক্ষা, অ্যাসাইনমেন্ট ও অ্যাকাডেমিক ব্যস্ততা শেষ করে শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বন্ধুদের নিয়ে দলে দলে বিভক্ত হয়ে ইফতারের আয়োজন করে। পরিবারের সঙ্গে সাহ্‌রি-ইফতার করতে না পারার কষ্ট তারা এভাবেই ভুলে থাকতে চায়। এই ক্ষুদ্র আয়োজনে চলে খুঁনসুটি আর আড্ডা। এর মধ্যেই সবাই খুঁজে নেয় আনন্দ এবং পরিতৃপ্তি। গত রমজান মাসজুড়েও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ইফতার আয়োজন ছিল চোখে পড়ার মতো। এবারো এর ব্যত্যয় ঘটেনি।
বন্ধুদের আয়োজন ছাড়াও ক্যাম্পাসে বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক-স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন, জেলা ও অঞ্চলভিত্তিক সংগঠন এবং বিভিন্ন বিভাগের পক্ষ থেকে ইফতারের আয়োজন তো আছেই। এভাবে পুরো রমজান মাস একের পর এক সংগঠনের ইফতার আয়োজন চলতেই থাকে। ক্লাস-পরীক্ষা থাকায় অনেকে ইচ্ছা থাকলেও পরিবারের কাছে যেতে পারে না শিক্ষার্থীরা। আবার অনেকে আবাসিক হল খোলা থাকায় চাকরির পড়া বা বন্ধুদের সঙ্গে থেকে যায় হলে।
কারো কারো এবার ক্যাম্পাসে শেষ ইফতার। বিশ্ববিদ্যালয় মনোবিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আব্দুর নুর সরকার বলেন, ‘ক্যাম্পাসে এটাই আমার শেষ ইফতার। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে। মাস্টার্সের পরীক্ষাও শেষ হয়ে গেছে। বন্ধুরা সবাই মিলে ইফতার করছি। এর আগেও অনেকবার ক্যাম্পাসে ইফতার করেছি। কিন্তু এবারের অনুভূতিটা পুরাই অন্যরকম। তবে এটা ভেবে খারাপ লাগছে যে আর কখনোই হয়তো এভাবে একসাথে বসে বন্ধুরা মিলে ইফতার করা হবে না।
স্মৃতিপটে ভেসে উঠছে বন্ধুদের সাথে কাটানো মধুর সময়গুলো। এ সময়গুলো খুব মিস করবো।’
পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মিলন ইসলাম বলেন, বন্ধুদের সাথে ইফতার মানেই গল্প আর আনন্দে মেতে ওঠা। একসাথে বসে ইফতার করার মাঝে থাকে অন্যরকম আত্মতৃপ্তি। ক্যাম্পাসে সবুজ ঘাসের ওপর পত্রিকা বিছিয়ে সহপাঠী বা বন্ধুদের নিয়ে ইফতার করলে সব ক্লান্তি যেন এক নিমিষেই দূর হয়ে যায়।
আইন বিভাগের শিক্ষার্থী মাজিদুল ইসলাম বলেন, বন্ধুদের সাথে কাটানো সময়গুলো সবসময় স্পেশাল। স্মৃতি পটে জমা হলো আরেকটি বছর। পরিবার পরিজন ছেড়ে এখানে আছি। বন্ধুদের সাথে আড্ডা এবং স্মরণীয় সময় কাটালে কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হয়ে যায়।

Leave A Reply

Your email address will not be published.