শিক্ষামন্ত্রীর যেসব যুক্তি খণ্ডন করতে পারেননি ননএমপিও শিক্ষক নেতারা
বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম: শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনির কয়েকটি প্রশ্নের যৌক্তিক জবাব দিতে পারেননি ননএমপিও শিক্ষক নেতারা। গড়পড়তা বলে গেছেন সবাইকে এমপিও না দিলে না খেযে মারা যাবেন, স্ত্রী-সন্তানের কাছে মুখ দেখাতে পারেন না ইত্যাদি। একই কথা বারবার বলেছেন, যেহেতু স্বীকৃতি দিয়েছেন সেহেতু এমপিও দিতে হবে। বিএম কলেজগুলোর প্রায়োগিক দিক নিয়ে করা মন্ত্রীর কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেননি শিক্ষকরা। যুক্তি খণ্ডানোর বদলে শিক্ষক নেতারা ছিলেন আবেগপ্রবণ। রোববার (২০ অক্টোবর) রাত আটটার পর রাজধানীর সেগুন বাগিচার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে ননএমপিও শিক্ষক নেতাদের বৈঠক শুরু হয়। শুরুতেই বক্তব্য রাখেন ননএমপিও শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার।
আড়াইঘন্টাব্যাপী বৈঠকের শুরুতেই শিক্ষামন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ডলার বলেন, ‘রাস্তা থেকে অযোগ্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আলোচনায় ডাকার জন্য মাননীয় মন্ত্রী আপনাকে ধন্যবাদ।’
এরপর ডলার যুক্তি দেন যে, ‘সরকার যেহেতু আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো স্বীকৃতি দিয়েছে তাই সবগুলো একযোগে এমপিওভুক্ত করতে হবে।’আলোচনার এক পর্যায়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘স্বীকৃতি দেয়ার মানে এই নয় যে এমপিওভুক্ত করতে হবে। স্বীকৃতির সাথে এমপিওর কোনও সম্পর্ক নেই। স্বীকৃতি দেয়ার মানে হলো, পাঠদান করার যোগ্যতা থাকার স্বীকৃতি, একাডেমিক স্বীকৃতি এক ধরণের ট্রেড লাইসেন্স, প্রতিষ্ঠান শুরু করার অনুমতি।’
নিজেদের অযোগ্য শিক্ষক হিসেবে স্বীকার করা প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘পাঠদান অনুমতি আর স্বীকৃতি দেয়ার সময় তো মন্ত্রণালয় বলেনি এমপিও দেয়া হবে। বরং এমপিও না নেয়ার জন্য এবং কোনওদিন এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন না করার জন্যও লিখিতভাবে দিয়েছেন অনেক প্রতিষ্ঠান প্রধান।
ডলারের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও পাসের হার নিয়ে কথা শুরু করেন মন্ত্রী। এসময় কোনও যুক্তি দেখাতে পারেননি ডলার।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ড. বিনয় ভুয়ন মন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘১৮/১৯ বছর ধরে চাকরি করে বেতন পাই না। আমরা কি ডাক্তার ইন্জিনিয়ার বানাইনি?’
মন্ত্রী বলেন,‘ বছরের বেশিরভাগ সময় আপনারা তো আন্দোলনে ব্যস্ত থাকেন।তাহলে পড়ান কখন? আপনি ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষকতা করেন নিজের সিদ্ধান্তে। আপনি ননএমপিও শিক্ষক এটা জেনেই আপনার স্ত্রী আপনাকে বিয়ে করেছেন।
নেতারা তাদের বক্তৃতায় যেসব প্রতিষ্ঠান যোগ্য হিসেবে দাবি করেছন, পাসের হার অমুক তমুক বলেছেন, সেসব প্রতিষ্ঠান নিয়ে টু দি পয়েন্টে প্রশ্ন করেন মন্ত্রী। একটি প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা দিয়েছে ১৭ জন পাস করেছে ১৪ জন। আপনারা দেখাচ্ছেন পাসের হার অনেক বেশি। কিন্তু বাস্তবে এমপিওর নীতিমালা অনুযায়ী কাম্যসংখ্যক পরীক্ষার্থী ও শিক্ষার্থী সংখ্যার ধারেকাছেও নেই আপনাদের পরীক্ষার্থী সংখ্যা। এখন আপনার যদি পাসের হার দেখিয়ে এমপিও পেতে চান তা তো বাস্তবসম্মত হবে না।
শিক্ষামন্ত্রী ডা: দীপু মনি শিক্ষক নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘এখন থেকে প্রতিবছরই এমপিওভুক্ত করা হবে। এবার যে তালিকাটা করা হয়েছে। এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন করেছেন তা নীতিমালা অনুযায়ী করা হয়েছে।’
এর জবাবে নেতারা মন্ত্রীকে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদতি প্রতিষ্ঠানগুলোর এখনই প্রজ্ঞাপন জারি না করতে। এর জবাবে মন্ত্রী বলেন, আপনারা অপেক্ষা করতে চাচ্ছেন না অথচ নীতিমালার আলোকে যারা যোগ্য বিবেচিত হয়েছে তাদেরকে নীতিমালা সংশোধন করা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলছেন।’
রাজনৈতিক বিবেচনায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এমপিওর তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে মর্মে একটি বাংলা দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সংবাদ শিক্ষামন্ত্রীর নজরে আনেন একজন শিক্ষক নেতা। এর উত্তরে মন্ত্রী সাফ বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় কোনও প্রতিষ্ঠান বাদ পড়েনি। ওই পত্রিকার রিপোটের তথ্য তথ্য সত্য নয়, সত্য নয়, সত্য নয়।’
কয়েকজন নেতা মন্ত্রী দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘আমরা ১৮/২০ বছর ধরে এমপিও পাইনা।’ এর জবাবে মন্ত্রী বলেন, ২০০৪, ২০০৬ ও ২০১০ সময়ে এমপিও দেয়া হয়েছে আপনারা কেন ওই সময়ে পাননি? কোনও জবাব দিতে পারেননি নেতারা।
বৈঠকে উপস্থিত একটি বিএম কলেজের অধ্যক্ষ মন্ত্রীর কাছে জানতে চান এমপিও নীতিমালায়র কয়েকটি ধারা সম্পর্কে। যা পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক।
শিক্ষকদের উদেশ্যে মন্ত্রী বলেন, ‘নীতিমালার বাইরে একটি প্রতিষ্ঠানও এমপিওভুক্ত করা যাবে না। জাতীয় সংসদে আমার সাড়ে তিনশ সহকর্মীর কাছেও আমাকে জবাবদিহি করতে হবে।’
বিদ্যমান নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন দরকার বলেও মনে করেন মন্ত্রী।
মামলা মোকদ্দমা করলে পুরো প্রক্রিয়া আটকে যাবে বলেও নেতাদের জানান মন্ত্রী।
বৈঠক শেষে কয়েকজন শিক্ষক নেতা দৈনিক শিক্ষাকে বলেন, ‘আমাদের নেতারা ব্যক্তিত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। যু্ুক্তির চেয়ে আবেগী ছিলেন। আলোচনার মাধ্যমে কোনও কিছু আদায় করার যোগ্যতার ঘাটতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।’