শেখ মুজিব যা বলেছেন শেখ হাসিনা তার উল্টোটা করছেন: আলাল
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক যুবদল সভাপতি অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইয়ের ১০৯ নম্বর পাতায় তিনি বলেছেন- ‘যে দেশে মিথ্যা দিয়ে মামলা হয়, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া হয়, মিথ্যায় প্রলুব্ধ হয়ে রায় দেয়া হয় সেই দেশে ন্যায়বিচার আশা করা যায় না’। শেখ মুজিবের সেই কথার প্রতিফলন আজকে আমরা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে দেখছি। দেশনেত্রী আজ ন্যায়বিচার বঞ্চিত। শেখ মুজিবুর রহমান ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’তে যে সত্য বলে গেছেন আজ তাঁরই কন্যা শেখ হাসিনা সেই কথার সেই সত্যের বিপরীতে দাঁড়িয়ে কাজ করছেন। শেখ মুজিব যা বলে গেছেন শেখ হাসিনা তার উল্টো করছেন।’ব্রেকিংনিউজ
তিনি বলেন, ‘আজকে আওয়ামী লীগের এরকম অধঃপতন হয়েছে যে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে বলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেই তারা কবরস্থ করে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিলো সাম্য, মানবিকতা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু আজকে আওয়ামী লীগ এই তিন উদ্দেশ্যকেই কবরস্থ করে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধাই করে দিয়েছে।’
বুধবার (২৭ নভেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৫৫তম জন্মদিন উপলক্ষে বেসরকারি মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজ ছাত্রদল আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান ও বিনামূল্যে ব্লাড গ্রুপ নির্ণয় কর্মসূচির অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
আলাল বলেন, ‘বিএনপির নীতিমালা ছিল, শহীদ জিয়ার নীতি ছিল ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’, আর শেখ মুজিবুর রহমান তথা আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শ ছিল ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’। আজকে আওয়ামী লীগ সেই ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ ফেলে ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। এখন প্রতিটি ন্যাশনাল কার্ড ও পাসপোর্টে লেখা আছে ‘বাংলাদেশি’, কোথাও কিন্তু ‘বাঙালি’ লেখা নেই। এগুলো হচ্ছে বিএনপির রাজনৈতিক বিজয়। আমরা সেগুলো বলতে পারি না, জোরেশোরে প্রচারও করতে পারি না। অন্য বক্তব্য, মেঠো বক্তব্যর মধ্য দিয়েই সময় পার করে দেই।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমাদের অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি শেখ মুজিবুর রহমান। রেসকোর্স ময়দানে তিনি যে বক্তব্য দিয়েছিলেন সেই বক্তব্য নিয়ে আওয়ামী লীগ অহংকার করে। সেই রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন- ‘রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরও দেবো, এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ্’। কিন্তু এদেশেকে মুক্ত করতে তিনিও রক্ত দেননি তাঁর পরিবারের তার বংশেরও কেউ রক্ত দেননি। উনার পরিবারে একজন মুক্তিযোদ্ধা খুঁজে পাবেন না, যার পাশে বীর বিক্রম, বীর প্রতীক পদবি আছে। আর আমাদের নেতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নামের পাশে বীর উত্তম পদবি আছে, যে পদবিটি দিয়েছিলেন আজকের প্রধানমন্ত্রীর বাবা স্বয়ং শেখ মুজিব। এ উপাধি জোর করে আদায় করার কিছু ছিল না। এটা ছিল তাঁর (জিয়ার) কর্মের স্বীকৃতি, দেশপ্রেমের স্বীকৃতি।’
এ প্রজন্মের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আলাল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় ১১টি সেক্টর ছিল। সে ১১টি সেক্টরের মধ্যে প্রথম সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এবং জেড ফোর্সের প্রধানও ছিলেন তিনি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশকে একটি চিড়িয়াখানা তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। যেখানেই যাবেন সেখানেই মিথ্যুক পাবেন, ধর্ষক পাবেন, খুনি পাবেন, অসাধু ব্যবসায়ী পাবেন। যারা অসৎ পথ অবলম্বন করে আকাশচুম্বী টাকার পাহাড় গড়েছে। আর এসব মিলে যে চিড়িয়াখানা তৈরি হয়েছে তারই নাম হচ্ছে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’।’
যুবদলের সাবেক এই সভাপতি বলেন, ‘পেঁয়াজ ব্যবসায়ীকে মন্ত্রী বানালে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। ব্যাংকের চেয়ারম্যানকে অর্থমন্ত্রী বানালে ব্যাংকে টাকা থাকে না। ব্যবসায়ী দ্বারা মন্ত্রিপরিষদ ভরে গিয়েছে, ব্যবসায়ী দ্বারা ভরে দিয়েছে জাতীয় সংসদও। এমনকি দলের নেতাকর্মীও বানানো হচ্ছে সব ব্যবসায়ীদের। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন ঘটনা আজ পর্যন্ত কেউ দেখেনি।’
সংগঠনের সভাপতি এএসএম রাকিবুল ইসলাম আকাশের সভাপতিত্বে এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক লাবিদ রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন- বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশীদ, ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুর রহমান খোকন, সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন শ্যামল, বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজ ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক তানজীম রুবাইয়াত আফিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক লিংকন ভুইয়া প্রমুখ।