সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের নির্দেশেই হামলা-রিজভী

0 ১,১৬২

বিডি সংবাদ টোয়েন্টিফোর ডটকম : আওয়ামী সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের নির্দেশেই বিএনপি মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দের ওপর এই ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘রাজনৈতিক ভদ্রতার নিয়ম-কানুন মানা আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যে নেই। আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস আর গুণ্ডামিকেই নিজেদের জীবনে-আচরণে-কর্মক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছে। আওয়ামী-রাষ্ট্র সমালোচনা ও বিরোধীদলের গণতন্ত্র স্বীকৃত তৎপরতাকে স্তব্ধ করে দেয়া বাধ্যতামূলক কর্মসূচি বলে মনে করে।’
সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘সম্প্রতি পাহাড় ধ্বসে সংশ্লিষ্ট এলাকার মানববিপর্যয়ের বিপন্ন এলাকা সরেজমিনে দেখা ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য বিএনপি’র পক্ষ থেকে উচ্চপর্যায়ের নেতৃবৃন্দের একটি প্রতিনিধি দল রাঙামাটি যাওয়ার পথে রাঙ্গুনিয়ায় আওয়ামী সশস্ত্র ক্যাডাররা নেতৃবৃন্দের ওপর আকস্মিক আক্রমণ চালায়। গাড়িবহরের ওপর সন্ত্রাসীরা বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে, ধারালো অস্ত্র নিয়ে গাড়িগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর করে। এতে বিএনপি  মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ তাঁর সফরসঙ্গী বিএনপি জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব:) রুহুল আলম চৌধুরী, বিএনপি’র সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) মাহবুবের রহমান শামীম, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. মীর ফাওয়াজ হোসেন শুভ, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বকরসহ প্রায় ১৫ জন আহত হন। এই ঘটনায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পুনরুজ্জীবিত ও বহুব্যাপী সন্ত্রাসের আরেকটি বিপজ্জনক মাত্রা দৃশ্যমান হলো।’
‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি-আওয়ামী সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের নির্দেশেই বিএনপি মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দের ওপর এই ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে। গুণ্ডামির এই নবসংস্করণ জনসমর্থন ছাড়া দুঃশাসন টিকিয়ে রাখারই ইঙ্গিতবহ। গণতন্ত্রের সর্বশেষ অস্তিত্বকে ছিন্নভিন্ন করে দেয়ার জন্যই এটি একটি সহিংস আগ্রাসী পদক্ষেপ। এরা বিরোধী দলের মানবকল্যাণকামী সমাজসেবামূলক কর্মসূচিকেও বানচাল করতে হিংস্র আক্রমণ চালায়।’
তিনি বলেন, ‘গণবিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে এক অজানা ভয় থেকে আওয়ামী লীগের মনস্তাত্বিক আবহাওয়া বদলে গেছে। সেখানে পতনের আশঙ্কায় তারা উদ্ভ্রান্ত গুণ্ডামিতে নেমে পড়েছে। এখন সবকিছু হারিয়ে আওয়ামী লীগ শেষ ভরসা হিসেবে গুণ্ডা রাজত্ব কায়েম করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। সেজন্যই গণতন্ত্র ও উন্নয়নের তকমাধারী আওয়ামী লীগ নিরপরাধ, নিরীহ ও নিরস্ত্র মানুষের ওপর চড়াও হচ্ছে এবং লুট আর দখলবাজি অব্যাহত রাখতে সাধারণ মানুষকে পিটিয়ে মারছে।’
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘জনগণের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক যেন সতীনের সংসারের মতো। আওয়ামী লীগ জনগণের ঘোর বিরোধী। দেশের জনগণের প্রতিই যেন আওয়ামী লীগের প্রতিহিংসা। তাই জনগণ কী ভাবলো-সেটিকে তারা পাত্তা দেয় না এবং সেজন্যই অবিরাম দুষ্কর্ম চালাতে এদের কোন চক্ষুলজ্জা হয় না। জনগণের সাথে এদের বিবাদ ঐতিহাসিক। গণতন্ত্রকে এরা বাক্সবন্দী করে একদলীয় বাকশাল গঠন বারবার জাতি প্রত্যক্ষ করেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার দুঃশাসনের প্রকোপ এখন বিপজ্জনক রুপ ধারণ করেছে। প্রকৃত গণতন্ত্র পুনরুজ্জীবনের জন্য বিএনপিসহ বিরোধী দলসমূহ, বিশিষ্ট নাগরিক সমাজ, নাগরিক স্বাধীনতায় বিশ্বাসী ব্যক্তিবর্গ, মুক্তচিন্তার লেখক, বিবেকবান সাংবাদিক সবাই শেখ হাসিনার চরম রাজনৈতিক আক্রমণের শিকার। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের অব্যাহত ঊর্ধ্বগতিতে মানুষের জীবন এখন অত্যন্ত শীর্ণ, শূন্য, শ্রীহীন। সেজন্য জনগণের ভিত্তিতলে ভয় ও শঙ্কার ডিনামাইট স্থাপনের মাধ্যমে এক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সরকার টিকে থাকতে চায়।’
‘নির্বাচন আসার আগেই গুণ্ডামি ও সন্ত্রাসকে যেভাবে প্রজনন করা হচ্ছে তাতে আগামী জাতীয় নির্বাচন শেখ হাসিনার অধীনে হলে অবাধ-সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে কী শোচনীয় বিপর্যয় ঘটবে তা সহজেই অনুমেয়। সেই নির্বাচন হবে একতরফা, সন্ত্রাসকবলিত। ভোটের দিন ও এর পূর্বাপর অবস্থা চরম অরাজকতায় ঢেকে থাকবে’ বলেন তিন।
রিজভী বলেন, ‘তাই আমরা দ্বিধাহীন কণ্ঠে বলতে চাই-শেখ হাসিনার অধীনে কোন নির্বাচনই সুষ্ঠু হবে না। বিএনপি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনে যাবে না। যারা প্রাকৃতিক মহাদুর্যোগে নিপতিত উপদ্রুত অসহায় মানুষকে ফেলে নির্বিঘ্নে বিদেশ সফর করতে পারে তারা সবকিছুই করতে পারে। সফর শেষ করে দেশে ফিরেই পাহাড় ধ্বসে উপদ্রুত এলাকা নিয়ে কোন তৎপরতাই দেখা গেল না বরং জনগণ দেখলো ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে বিএনপি’র প্রতিনিধি দলের যাত্রাপথে সরকারি সন্ত্রাস ও গুণ্ডামির অভিনব আগ্রাসন। আওয়ামী সরকার জবাবদিহিতার শব্দ তাদের অভিধান থেকে মুছে ফেলেছে। সেজন্য তারা বেপরোয়া, উদ্ধত ও সন্ত্রাসের আশ্রয়প্রার্থী। আর এ কারণেই উপদ্রুত এলাকা দেখতে যাবার পথে বিএনপির সিনিয়র নেতৃবৃন্দের ওপর আক্রমণ করতে দ্বিধা করেনি। কারণ রাষ্ট্রের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী ব্যক্তির প্রটেকশন ও উস্কানি সন্ত্রাসীদেরকে উৎসাহিত করে।’
ব্রেকিংনিউজ

Leave A Reply

Your email address will not be published.