নাজমুল হোসেন, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে । আশানুরূপ ফলন ও দাম কম হওয়ায় কৃষকেরা হতাশায় পড়েছে। অধিক লাভের আশায় অতিরিক্ত শ্রমিকের মজুরিসহ উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা পাট বিক্রি করে কাঙ্খিত দাম পাচ্ছে না।
সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ হওয়ায় স্থানীয় বেশিরভাগ ব্যবসায়ীই এবার পাট কিনছেন না। ফলে বাজারে পাটের দাম কমে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছে প্রান্তিক পাট চাষিরা।
রায়গঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার উপজেলায় ৮৯২ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় এ বছর ১১২ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। গত বারের চেয়ে পাটের দাম বেশি হবে এই আশায় কৃষকেরা এবার জমিতে পাট চাষ বেশি করেছে।
উপজেলার ভুইয়াগাঁতী, সাহেবগঞ্জ, ঘুড়কা, রায়গঞ্জ, চান্দাইকোনা, নিমগাছি, পাঙ্গাসি, ধানগড়া, নলকাসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে দেখা যায়, কৃষকেরা জমি থেকে পাটকাটা, জাগ দেয়া, পাটকাটি থেকে আঁশ ছাড়ানো, পাট শুকানো ব্যস্ত সময় পার করছে নারী ও পুরুষেরা।
উপজেলার নলকা ইউনিয়নের দাদপুর গ্রামের কৃষক রবিউল ইসলাম বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে পাট আবাদে করে বীজ-সার ও কীটনাশক, নিড়ানি-পরিচর্যা, পাট কাটা ও পুকুর নিয়ে পাট জাগ দেয়া, পরিবহন ও অন্য খরচসহ ১৮ হাজার টাকা হয়েছে।
এক বিঘায় জমিতে পাট হয়েছে ছয় মণ, প্রতি মণ পাট বিক্রি করেছি দুই হাজার থেকে দুই হাজার ২০০ টাকায়। একবিঘা জমিতে পাট আবাদ করে আমার পাঁচ হাজার লোকসান গুনতে হয়েছে। লাভের আশায় পাট চাষ করে যদি লস হয়, তাহলে এ আবাদ আর করব না।
ফরিদপুর গ্রামের আব্দুস সালাম জানান, এবার বর্ষা মৌসুমে খালবিলে পর্যাপ্ত পানি না হওয়ায় পাট জাগ দিতে বিপাকে পড়েন তারা। এ বছর পাট উংপাদনে বিঘা প্রতি দ্বিগুণ খরচ হয়েছে। প্রতি বিঘায় পাট চার থেকে পাঁচ মণ হয়েছে।
উপজেলার দাদপুর পশ্চিম পাড়া গ্রামের বর্গাচাষি শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘অন্যের এক বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এবার কামলার সাথে আমি নিজেও হাড়ভাঙা খাটুনি দিছি। কিন্তু যে অবস্থা দেখছি, তাতে লাভ তো দূরের কথা, ঘরের টাকা ঘরে নেয়া কঠিন হয়ে যাবে।
রায়গঞ্জ উপজেলার কয়েকজন পাট ব্যবসায়ী জানান, সরকারি পাটকলগুলো বন্ধ করায়, ক্রয় কেন্দ্রগুলোও বন্ধ রয়েছে। ফলে স্থানীয় পাট ব্যবসায়ীরা পাট কিনছেন না। বেসরকারি পাটকলগুলোর চালু থাকলেও তারা পাট কিনছেন অল্প সংখ্যাক। বিদেশে পাটের সুতার চাহিদা কম থাকায় অধিকাংশ কোম্পানি প্রয়োজনের অতিরিক্ত পাট না কেনায় ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পাট চাষিরা। পাট শিল্প রক্ষা করার জন্য সরকারি ক্রয় কেন্দ্রগুলো চালু থাকলে প্রান্তিক চাষিদের পাটের দাম আরো বাড়ত।
এ বিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুর রউফ বলেন, সঠিক বয়সে পাট কেটে জাগ দিলে আঁশটা কোয়ালিটি সম্পন্ন হবে। আর কোয়ালিটি সম্পন্ন আঁশ হলে দাম ভালো পাবে, লাভও ভালো হবে।