৬ রানে ৫ উইকেট, স্পিন বিষে বড় লিড বাংলাদেশের

0 ৪৮৩

২৫৩ রানে ৫ উইকেট, ২৫৯ রানে অলআউট। সোজা কথায়, শেষ ৬ রানে সফরকারী উইন্ডিজের ৫ উইকেট তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ। আর সেই পথে বল হাতে ৪ উইকেট নিয়ে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন ব্যাটিংয়েও সেঞ্চুরি হাকানো মেহেদি হাসান মিরাজ।

শুরুটা করেছিলেন নাঈম হাসান। গতকাল থেকেই মারকুটে ভূমিকায় থাকা উইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েট যখন উইকেটে জমাট হয়ে গিয়েছিলেন তখন নাঈমই ব্রেক থ্রো এনে দেন। পথের কাঁটা ব্রাথওয়েটকে ৭৬ রানে বোল্ড আউট করে সাজঘরে পাঠান তরুণ এই অফ স্পিনার। ষষ্ঠ উইকেট জুটিতে জার্মেইন ব্ল্যাকউড ও জসুয়া ডি সিলভা যখন ৯৯ রানের জুটি গড়ে বড় সংগ্রহের পথে এগোচ্ছিলে তখনও সেই নাঈমই বাধা হয়ে দাঁড়ান। তার বলে লিটনের তালুবন্দি হন ৪২ রান করা সিলভা। তখন ক্যারিবীয়দের দলীয় স্কোর ২৫৩ রান। ৯৩তম ওভারের তৃতীয় বলে সিলভা আউট হওয়ার পর ৯৪তম ওভারের প্রথম বলে ৬৮ রান করা ব্ল্যাকউডকে লিটনের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরান মিরাজ।

৭ উইকেটে ২৫৩ রান নিয়ে চা বিরতিতে যাওয়া উইন্ডিজ মাঠে ফিরে স্কোরবোর্ডে ৬ রান যোগ করতেই হারায় শেষ ৩টি উইকেট। জোমেল ওয়ারিক্যানকে বোল্ড করে শেষ পেরেকটি ঠুকে দেন তৃতীয় দিন সকালে প্রথম ওভারের প্রথম বলে উইকেট পাওয়া তাইজুল ইসলাম।

চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিনটি সত্যিই এরচেয়ে ভালো শুরু পেতো না বাংলাদেশ। দিনের শুরুতে প্রথম ওভারের প্রথম বলেই সাফল্য এনে দিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। আগের দিন ১৭ রানে অপরাজিত থাকা এনক্রুমা বান্নারকে এদিন ব্যক্তিগত স্কোরবোর্ডে আর কোনও রান যোগ করতে দেননি তাইজুল। ঘূর্ণিজালে স্লিপে নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ধরা পড়েন এনক্রুমা।

ব্রাথওয়েট ফেরার পর তৃতীয় দিনের তৃতীয় আঘাতটা আসে মিরাজের ঘূর্ণিতে। ব্যক্তিগত ৪০ রান করে মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেছেন কাইলি মায়ারস।

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ৪৩০ রানের জবাবে ব্যাট করতে নেমে দ্বিতীয় দিনের শেষ বিকেলে বড় ধাক্কা খায় সফরকারীরা। দলীয় ১১ রানের মাথায় মোস্তাফিজের বলে এলবিডব্লিউ’র ফাঁদে পা দিয়ে সাজঘরে ফিরেন ক্যারিবীয়ান অপেনার জন ক্যাম্বেল (৩)। ২৪ রানের মাথায় ব্যক্তিগত ২ রান করে ফিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন সাইনি মোসলে।

বাংলাদেশের হয়ে মেহেদি হাসান মিরাজ ৪টি, মোস্তাফিজ, তাইজুল ও নাঈম হাসান ২টি করে উইকেট নেন।

বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস:
২৪২ রানে প্রথম দিন শেষ করা বাংলাদেশ দ্বিতীয় দিনে মেহেদি হাসান মিরাজের সেঞ্চুরিতে থামে ৪৩০ রানে। দলের পক্ষে মিরাজ ১০৩, সাকিব আল হাসান ৬৮, সাদমান ইসলাম ৫৯, লিটন দাস ৩৮, মুশফিকুর রহিম ৩৮, অধিনায়ক মুমিনুল হক ২৬, নাজমুল হোসেন শান্ত ২৫ ও নাঈম হাসান ২৪ রানের ইনিংস খেলেন।

৫ উইকেটে ২৪২ রানে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষ করার পর গতকাল বৃহস্পতিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে দ্বিতীয় দিনের শুরুতেই লিটনকে হারায় বাংলাদেশ। জোমেল ওয়ারিক্যানের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেন আগের দিন ৩৪ রানে অপরাজিত থাকা লিটন। ক্যারিয়ারের ২৫তম ফিফটি হাকিয়ে মধ্যাহ্নবিরতির আগ মুহূর্তে রাকিম কর্নওয়েলের বলে শর্ট গালিতে ক্যাচ তুলে ৬৮ রান করে সাজঘরে ফিরেন সাকিব।

এরপর একপ্রাপ্ত আগলে রেখে তাইজুল ইসলাম ও নাঈম হাসানের সঙ্গে ছোট ছোট জুটি গড়ে দলকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন মিরাজ। তাইজুল ১৮ ও নাঈম ২৪ রান করেন। অন্যদিকে মিরাজ তুলে নেন টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম শতক। মোস্তাফিজুর রহমান ৩ রানে অপরাজিত থাকেন।

বুধবার (০৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন টাইগার কাপ্তান। প্রায় এক বছর পর সাদা পোশাকে মাঠে নেমে ব্যাট হাতে প্রথম দিনটা পুরোপুরি নিজেদের করে নিতে পারেনি বাংলাদেশ। উইকেটে সেট হয়েও ইনিংস লম্বা করতে পারেননি টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। রান আউট, ভুল শট ও আম্পায়ারের বাজে সিদ্ধান্তের শিকার হওয়ার মধ্য দিয়ে ৫ উইকেটে ২৪২ রানে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিন শেষ করে বাংলাদেশ। তবে স্বস্তি ছিল দিন শেষেও সাকিব ও লিটনের অপরাজিত থাকা নিয়ে। যদিও দ্বিতীয় দিনে লিটন ইনিংসটা লম্বা করতে পারেননি। সাকিবও অনেকটা সাদামাটা বলেই উইকেট বিলিয়ে ফিরেন।

প্রথম দিন ইনিংসের গোড়াপত্তন করতে এসে বেশ ধীর তালেই এগোচ্ছিলেন তামিম ও সাদমান। কিন্তু হঠাই ছন্দপতন। ক্যারিবীয়ান পেসার কিমা রোচের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তামিম। এরপর সাদমানের সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি গড়ে ডাবল নিতে গিয়ে রান আউটের ফাঁদে পা দেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

এরপর ২৬ রান করে ওয়ারিক্যানের ঘূর্ণির শিকার হন অধিনায়ক মুমিনুল হক। শুরু থেকেই ধৈর্য্যের পরীক্ষা দেয়া অপেনার সাদমানও ৫৯ রানে ওয়ারিক্যানের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন। বলা যায়, এ দুজনই অনেকটা ‘আত্মঘাতী’ হয়ে উইকেট বিলিয়ে ফিরেছেন। একই বোলারের ফাঁদে পা দেন ৩৮ রান করা ‘মিস্টার ডিপেন্ডেবল’ মুশফিকুর রহিমও।

ক্যারিবিয়ান বোলারদের হয়ে জোমেল ওয়ারিক্যান ৪টি, রাকিম কর্নওয়েল ২টি, কিমা রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েল ও বান্নার ১টি করে উইকেট নেন।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস:
প্রথম ইনিংসে ১৮১ রানের বড় লিড নিয়ে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত সাজঘরে ফিরেছেন। দুটি উইকেটই নিয়েছেন রাকিম কর্নওয়েল।

Leave A Reply

Your email address will not be published.