আজ ১৫ ডিসেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস

0 ৯০
নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ : আজ ১৫ ডিসেম্বর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ মুক্ত দিবস।১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় উত্তরাঞ্চলের সীমান্তবর্তী জেলা চাঁপাইনবাবগঞ্জ।
বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, গোলাম নবী সাটু, নবির উদ্দীনসহ নাম না জানা অসংখ্য শহীদ প্রাণপণ যুদ্ধ করে ও বুকের রক্ত দিয়ে পাক-হানাদার বাহিনী এবং তাদের দোসরদের কবল থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে মুক্ত করেন।
তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মেসবাহুল হক বাচ্চু, ডা. মইন উদ্দিন আহমেদ মন্টু, হাজী রইশুদ্দিন মিয়া, খালেদ আলী মিয়া ও অ্যাডভোকেট হামিদুর রহমান হেনাসহ বেশ কিছু উদীয়মান তরুণ এলাকার মানুষকে স্বাধীনতায় উজ্জীবিত করেন এবং শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ৭নং সেক্টরের অধীন চাঁপাইনবাবগঞ্জ মহকুমায় ছিল ২টি সাব সেক্টর। একটি মোহদিপুর সাব সেক্টর অন্যটি দলদলী সাব সেক্টর। মোহদিপুর সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর এবং দলদলী সাব সেক্টরের দায়িত্বে ছিলেন লে. রফিক। মুক্তিযুদ্ধ চলার এক পর্যায়ে ৭ ডিসেম্বর লে. রফিকের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা মকরমপুর ও আলীনগর পাক ঘাটিতে অতর্কিত আক্রমণ চালালে পাঁচ পাক সেনা নিহত ও অন্যরা মহানন্দা নদী পার হয়ে পালিয়ে যায়।
মার্চ মাসে যুদ্ধ শুরু হলেও প্রথমদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে যুদ্ধের তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। ১৯ এপ্রিল রাতে শহরে সেল বর্ষণ করে আতংক সৃষ্টি করে পাকবাহিনী। শহর দখল করে ব্যাপক ধ্বংষযজ্ঞ চালায় তারা। তারপরই পাক বাহিনীকে প্রতিহত করতে সংগঠিত হতে থাকে মুক্তিযোদ্ধারা। এসময় প্রশিক্ষণ নিতে ভারতেও পাড়ি জমান অনেকে। শেষের দিকে জেলার বেশ কিছু স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে আহত ও নিহত হয় অনেকে।
১০ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা চরবাগডাঙ্গা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর দখলের জন্য অগ্রসর হয় এবং পাক সেনাদের বাংকার দখল করে নেয়। ১৩ ডিসেম্বর যুদ্ধের তীব্রতা বেড়ে যায় এবং ওই দিন মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালায় পাকসেনাদের বিরুদ্ধে। সেদিন রাতে হরিপুর ব্রিজের কাছে সংঘটিত যুদ্ধে শহীদ হন ইপিআর নায়েক নবির উদ্দীনসহ ৬ জন মুক্তিযোদ্ধা। এতে ৯ জন সাধারণ গ্রামবাসীও নিহত হয়। ১০ ডিসেম্বর প্রায় ৫০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের পশ্চিমে বারঘরিয়ায় অবস্থান নেন।
১১ ডিসেম্বর সেখানে ভারতীয় বাহিনীর গোলন্দাজ বাহিনীর গোলাবর্ষণ করার কথা ছিলো। কিন্তু সেটি হয়নি। পরবর্তীতে ১২ ও ১৩ ডিসেম্বর একাধিকবার ভারতীয় বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে গিয়ে ব্যর্থ হন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর। পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ভারতীয় বাহিনীর সহযোগিতা ছাড়াই শত্রুদের অবস্থানে আক্রমণ করবেন এবং তিনি সেটিই করেন। ১৪ ডিসেম্বর শহরের রেহাইচর এলাকায় পাক হানাদার বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর এবং তার মরদেহ সারাদিন ঘটনাস্থলে পড়েছিল।
এ খবর পেয়ে ৭নং সেক্টরের যোদ্ধারা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন এবং পরে ক্যাপ্টেন গিয়াস উদ্দীন, লে. রফিকুল ইসলাম, লে. আব্দুল কাইউম খান সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে ১৪ ডিসেম্বর বিকালে আবার তুমুল যুদ্ধ শুরু করেন। পরের দিন ১৫ ডিসেম্বর সকালে শত্রুমুক্ত হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জ। বীর মুক্তিযোদ্ধারা চাঁপাইনবাবগঞ্জকে হানাদার মুক্ত ঘোষণা করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.