‘ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানে না’

২৪৯
সংসদে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। ফাইল ছবি

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও জাতির পিতা সম্পর্কে কোনো পাঠদান করানো হয় না। জাতীয় চার নেতার নাম জিজ্ঞাসা করা হলে, শতভাগ শিক্ষার্থী ভুল উত্তর দেয়। তারা বলে, বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া ও এইচ এম এরশাদ। এরা হলেন চার জাতীয় নেতা। গবেষণায় দেখা গেছে, ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানে না।

আজ সোমবার জাতীয় সংসদে রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (বিলিয়া) এর সম্প্রতি এক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে চুন্নু এসব কথা বলেন।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু আরও বলেন, মাননীয় স্পিকার, জাতীয় চার নেতার নাম জানে না একজন শিক্ষার্থীও। জানে না মুক্তিযুদ্ধে কতজন শহীদ হয়েছেন। এ ছাড়া, জানে না বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর নাম কী? শিক্ষার্থীরা এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান ও এম এ জি ওসমানী। এমনকি মুক্তিযুদ্ধ আওয়ামী লীগ সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা জানে।

মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। যে দেশটা আমরা স্বাধীন করেছিলাম এত ত্যাগের বিনিময়ে, সে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যদি মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে, জাতির পিতা সম্পর্কে, মুক্তিযুদ্ধের সরকার সম্পর্কে না জানে, তা খুবই দুঃখজনক।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ২০১৯ সালের নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে টঙ্গী এলাকায় সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই গবেষণাটি পরিচালনা করা হয়। অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত ১০৫ জন শিক্ষার্থী সে জরিপে অংশ নেয়। গবেষণায় দেখা যায়, সেখানে শিক্ষার্থীদের ২০টি প্রশ্ন করা হয়। সেখানে শিক্ষার্থীদের ১৫টি প্রশ্নের উত্তর ছিল ভুল।  শিক্ষার্থীরা, শহীদ বলতে জানে সালাম, বরকত, রফিক ও জব্বারদের নাম। অর্থাৎ তারা মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের নাম বলতে পারেনি।

চুন্নু আরও বলেন, জাতীয় চার নেতার নাম জিজ্ঞাসা করা হলে, শতভাগ শিক্ষার্থী ভুল উত্তর দিয়েছে। তারা বলেছে, বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমান, শেখ হাসিনা, খালেদা জিয়া ও এইচ এম এরশাদ । এরা হলেন চার জাতীয় নেতা। ৩ নং প্রশ্ন সম্পর্কে শতভাগ শিক্ষার্থী ভুল উত্তর দিয়েছে। সেখানে ৫৭ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তরে বলে, বিএনপি, মুক্তিবাহিনী ও জাতীয় পার্টি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। এছাড়া, স্মৃতিসৌধ ও শহীদ মিনারের মধ্যে পার্থক্য কী ? এমন প্রশ্নেও শতভাগ শিক্ষার্থী ভুল উত্তর দিয়েছে। ৯১ জন শিক্ষার্থী উত্তর দেয় খন্দকার মোস্তাক ছিলেন প্রথম শহীদ। একজন সেক্টর কমান্ডারের নাম জানতে চাইলে ৫১ জন শিক্ষার্থী নাম বলতে পারেনি।

জাপা মহাসচিব আরও বলেন, মাননীয় স্পিকার এই গবেষণা আমাদের সবাইকে আতঙ্কিত করেছে। প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী পালন করেছি, দেশ স্বাধীন করেছি। আমরা এতকিছু করলাম, আর যারা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, তারা যদি এই সম্পূরক ইতিহাস না জানে! তারা কেনো জানবে না, আমাদের গলদটা কোথায় ? আমাদের ভুলটা কোথায় ? আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে কী জাতীয় চার নেতা সম্পর্কে, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পর্কে, মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সম্পর্কে তাদের শিক্ষা দিতে পারিনি ?

মাননীয় স্পিকার, আমার মনে হয় এ বিষয়ে, আপনার মাধ্যমে আমি প্রধানমন্ত্রীকে বলবো, সমস্ত স্কুল বিশেষ করে ইংলিশ মাধ্যম স্কুলে, আমার মনে হয় মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সম্পর্কে এবং জাতির পিতা সম্পর্কে কোনো পাঠদান করানো হয় না। তাই শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেন, যেন বাধ্যতামূলকভাবে মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযোদ্ধা ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস অন্তত ৮ম ও নবম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্য বইতে বাধ্যতামূলক থাকে। এগুলোর উপরে যেন নম্বর থাকে। কেননা এগুলো তাদেরকে পড়াতে ও শিখাতে হবে। তা না হলে নতুন প্রজন্ম আমাদের কথা বুঝবেও না, আমরা দেশটা কীভাবে স্বাধীন করেছি জানবেও না।

Comments are closed.