এখন যেরকম আছে মরক্কো

0 ১৬৮
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মরক্কো

মরক্কোয় ভূমিকম্পের কেন্দ্রের কাছে থাকা পাহাড়ি শহর-গ্রামে এখনো যাওয়া যাচ্ছে না। সেখানে ভাঙা বাড়ির তলায় মানুষ। ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা বেড়ে অন্তত ২,১২২ জনে দাঁড়িয়েছে।

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে দেশটিতে ভূমিকম্প আঘাত হানে। রোববার মরক্কোর ছোট শহর আমিজমিজে উদ্ধারকারীরা ভেঙে পড়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা মানুষদের বের করতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়।

আমিজমিজে মাত্র ১৪ হাজার মানুষ বাস করেন। সেখানে একের পর এক বাড়ি ভেঙে পড়ে আছে। উদ্ধারকারীরা জানাচ্ছেন, ভূমিকম্পের পর প্রথম ৭২ ঘণ্টা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারপর চাপা পড়া মানুষের প্রাণের আশা প্রায় থাকেই না।

শহরের বাসিন্দা নাইমা বলছিলেন, আমার প্রতিবেশী গর্ভবতী ছিলেন। তিনি এখন ধ্বংসস্তূপের তলায়। তার জন্য প্রার্থনা করছি। ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল আমিজমিজের থেকে ৯০ কিলোমিটার দূরে। সেখানেই এই অবস্থা।

ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের একেবারে কাছে থাকা শহর ও গ্রামগুলিতে যেতে গিয়ে প্রবল অসুবিধার মুখে পড়েছেন উদ্ধারকারীরা। পাহাড়ি শহরে যাওয়ার একমাত্র উপায় হলো, হয় হাঁটতে হবে অথবা গাধার পিঠে চেপে যেতে হবে। সেই রাস্তাও অসম্ভব খারাপ হয়ে গেছে।

জার্মানির হেনরিখ ফাউন্ডেশনের রাবাতের প্রধান আনজা হফম্যান বলেন, ওই জায়গাগুলি খুবই প্রত্যন্ত এলাকায়। সেখানে যাওয়া খুবই কঠিন। স্বাভাবিক সময়েই ওখান থেকে কাছের হাসপাতালে যেতে ঘণ্টাচারেক সময় লাগত। সেই হাসপাতালও অত আধুনিক নয়।

তিনি জানন, ওখানে রাস্তা খুবই সরু। এখন তো সেই রাস্তাও ভূমিকম্পের ফলে আর চলাচলের অবস্থায় নেই। তাই ওখানকার অবস্থা কল্পনা করতে ভয় লাগে।

ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত একটি গ্রামের বাসিন্দা আব্দেল আলি হারিমিস জানিয়েছেন, তাদের গ্রামে দুইশ পরিবার বাস করতেন। এখনো অনেকে ভাঙা বাড়ির ধ্বংসস্তূপের মধ্যে চাপা পড়ে আছেন। ভূমিকম্পে আমাদের সব শেষ করে দিয়েছে। এমন অবস্থা হেলিকপ্টার পর্যন্ত নামার জায়গা পাচ্ছে না।

স্থানীয় নারী নেজহা জানিয়েছেন, তারা কোনো সাহায্য পাননি। রাতে রাস্তার কাছে এসে ঘুমাচ্ছেন। পুরুষরা বাড়িতে গেছেন, জিনিস উদ্ধার করতে।

কাছের গ্রামের এক বাসিন্দা হিসাম লাহসেন জানিয়েছেন, তাদের গ্রামে সবকিছু ভেঙে পড়েছে। সেখানে অন্ততপক্ষে একশজন মারা গেছেন। মৃতের সংখ্যা অনেক বাড়বে।

মাকারেশ থেকে ভূমিকম্পের মূল কেন্দ্র ৭০ কিলোমিটার দূরে ছিল। তা সত্ত্বেও সেখানে প্রভূত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মাকারেশ সিটি সেন্টারে একটি হোটেলের ওয়েটার মুরাদ জানিয়েছেন, যখন ভূমিকম্প হচ্ছিল, তখন আমার প্রথমে মনে হলো, কেউ বোমা মেরেছে।

হোটেলে তখন প্রচুর মানুষ। সবাইকে একে একে বের করে তারপর তারা রাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছিলেন। মুরাদ জানন, শনিবার থেকে আবার অনেক রেস্তোরাঁ খুলেছে। প্রচুর মানুষ আসছেন। জীবন তো থেমে থাকে না।

মারাকেশের সিটি সেন্টার থেকে ফেসবুক লাইভ করছিলেন নাজমি। তিনি জানালেন, শহরের অনেক মানুষই বাড়ি ফিরতে ভয় পাচ্ছেন বা তাদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক বাড়ি ভেঙে পড়েছে। পুরনো শহরের অবস্থা বেশ খারাপ। সেখানে উদ্ধারকারী ছাড়া কাউকে যেতে দেওয়া হচ্ছে না।

তবে মরক্কোর মানুষ একজোট হয়ে এই প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মোকাবিলা করছেন। সকলে এগিয়ে এসেছেন। তারা কোনও না কোনোভাবে সাহায্য করছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষরা বলছেন, এখনো বেশ কিছুদিন ধরে মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছে দিতে হবে সরকারকে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.