কোনোভাবেই করোনা রোগী বাড়তে দেওয়া যাবে না : প্রধানমন্ত্রী

0 ৫৬২
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

রুটি-রুজির ওপর আঘাত আসবে জেনেও সরকার করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাধ্য হয়েই কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, দেশের স্বাস্থ্য খাতের একটি নির্দিষ্ট সক্ষমতা আছে। রোগী যদি বেড়ে যায় তাহলে মানুষকে সেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। তাই, তিনি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, কোনো অবস্থাতেই করোনা রোগী বাড়তে দেওয়া যাবে না।

আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে সরকারপ্রধান এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি দেশবাসী ও বিদেশে বসবাসরত সব বাঙালিকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

 

পাশাপাশি এই করোনাকালে যেসব চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও গণমাধ্যমকর্মী নিজের জীবন বাজি রেখে মানুষের সেবা দিচ্ছেন তাদের প্রতি আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা।

 

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস শুধু মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছে না, এই ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করে ফেলেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘সংক্রমণ এড়াতে লকডাউন বা সাধারণ ছুটি বলবৎ করতে হয়েছে। আমরা গত বছর একটানা দুই মাসেরও বেশি সাধারণ ছুটি বলবৎ করেছিলাম। দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর গত মাসের ৫ তারিখ থেকে পর্যায়ক্রমে লকডাউন কার্যকর করা হয়েছে। এর ফলে অগণিত মানুষের রুটি-রুজির উপর আঘাত এসেছে। কিন্তু এই কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় ছিল না।’

 

‘কারণ, আমাদের স্মরণ রাখতে হবে, প্রতিটি দেশেরই স্বাস্থ্য অবকাঠামোর একটি নির্দিষ্ট সক্ষমতা রয়েছে। হঠাৎ করে দ্রুতগতিতে রোগী বাড়তে থাকলে তখন সেবা দেওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। আপনারা দেখেছেন, উন্নত দেশগুলো পর্যন্ত করোনা রোগীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সেজন্য আমাদের কোনোভাবেই রোগীর সংখ্যা বাড়তে দেওয়া যাবে না।’

 

সরকার ‘জীবন ও জীবিকার মধ্যে একটা সামঞ্জস্য বজায় রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাঁরা কর্মহীন হয়ে পড়েছেন, তাঁদের সহায়তার জন্য সরকার সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। গত বছর করোনাভাইরাস আঘাত হানার পর থেকে চলতি মাস পর্যন্ত সর্বমোট এক লাখ ২৯ হাজার ৬১৩ কোটি টাকার সহায়তা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ২১টি খাতে সর্বমোট এক লাখ ২১ হাজার ৩৫৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আর অনুদান বাবদ আট হাজার ২৬০ কোটিরও বেশি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।’

 

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘গত বছর সাময়িক কর্মহীন ৩৬ লাখ ৫০ হাজার মানুষকে আড়াই হাজার টাকা করে মোট ৯১২ কোটি ৫০ লাখ দেওয়া হয়েছে। এ বছরও সমসংখ্যক মানুষকে একই হারে ৯১২ কোটি ৫০ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ত্রাণ মন্ত্রণালয় ৬০৭ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। দিনমজুর, পরিবহন শ্রমিক, সাধারণ শ্রমিক, নিম্ন আয়ের মানুষ, মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, অন্যান্য ধর্মীয়প্রতিষ্ঠানের সেবক, বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক- ইত্যাদি পেশার মানুষজন এ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় এসেছেন।’

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে ৬৫ হাজার ৬৫৪টি ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ৫৩ হাজার ৪৩৪টি গৃহ নির্মাণের কাজ চলছে। এ নিয়ে মোট গৃহের সংখ্যা দাঁড়াবে এক লাখ ১৯ হাজার ৮৮। বিভিন্ন কর্মসূচির আওতায় এ পর্যন্ত আমরা সাড়ে তিন লাখ পরিবারকে গৃহ নির্মাণ করে দিয়েছি।

 

করোনাভাইরাস মহামারির সময়েও সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় বিভিন্ন ভাতা, খাদ্য কর্মসূচি, শিক্ষার্থীদের বৃত্তি-উপবৃত্তি কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, ‘এসব কর্মসূচির সুবিধাভোগী মানুষের সংখ্যা প্রায় পাঁচ কোটি ৭৮ লাখ। এর মধ্যে বিভিন্ন ভাতাভোগীর সংখ্যা এক কোটি সাত লাখ, খাদ্য নিরাপত্তার আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা দুই কোটি ১৮ লাখ এবং বৃত্তি-উপবৃত্তি পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই কোটি ৫৩ লাখ।’

 

Leave A Reply

Your email address will not be published.