চাঁপাইনবাবগঞ্জে সড়ক বিভাগের গাছ বিক্রি করে ক্ষতিপূরনের আবেদন

১৫৭

ফয়সাল আজম অপু: চাঁপাইনবাবগঞ্জে রাস্তার পাশে থাকা সড়ক ও জনপথ এর গাছ কেটে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার উপর রাজারামপুরস্থ পাওয়ার হাউসের বিপরীতে ৪০-৪৫ বছর বয়সী দুইটি শিমুল গাছ পানির দামে অবৈধভাবে বিক্রির অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এছাড়াও গাছের মালিকানা দাবি করে ক্ষতিপূরণের আবেদন করেছেন, গাছ দুটি কেটে বিক্রিকারী একই এলাকার হাবিবুর রহমানের ছেলে আসগার আলী।

স্থানীয় বাসিন্দা, প্রত্যক্ষদর্শী, পাওয়ার গ্রীড অব কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি করতে স›চালন লাইনের কাজ চলমান রয়েছে। বাংলাদেশ পাওয়ার গ্রীড অব কোম্পানি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর হতে জেলা শহরের উপর রাজারামপুর পর্যন্ত নতুন বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করতে লাইনের নিচে থাকা গাছ কাটছে। এতে সংশ্লিষ্ট গাছের মালিককে ক্ষতিপূরণ প্রদান করছে পাওয়ার গ্রীড অব কোম্পানি।

অভিযোগ উঠেছে, শিমুল গাছ দুটি সড়ক ও জনপথ এর জায়গায়। অথচ পাওয়ার গ্রীড অব কোম্পানির কাছে গাছ দুটি নিজের দাবি করেন আসগার আলী। পরে তিনি গাছ দুটি মাত্র ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন, উপর রাজারামপুর গ্রামের মৃত আনেয়ার ওরফে জুলমাতের ছেলে রানা আলীর কাছে। শিমুল গাছ দুটি শনিবার (১৩ আগস্ট) ও রবিবার (১৪ আগস্ট) দুই দিনে কাটা হয়েছে। পরে সোমবার (১৫ আগস্ট) গাছের গুড়ি ও কাঠ নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) সন্ধ্যা পর্যন্ত কিছু খড়ি ও কাঠ ঘটনাস্থলেই পড়ে রয়েছে।

গাছ দুটির পাশের জমির মালিক একই এলাকার নওশেদ আলীর ছেলে হযরত আলী। তিনি বলেন, ৪০-৪৫ বছর বয়সী দুটি শিমুল গাছ নিজের দাবি করে পানির দামে ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন আসগার আলী। অথচ তার পাশের জমি আমার। আমি জানি, গাছ দুটি নিশ্চিতভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। গাছ দুটির নূন্যতম দাম ৬০-৬৫ হাজার টাকা হতে পারে। এই গাছ দুটি কাটার ফলে আমার জমিতে দেয়া সীমানা প্রাচীর ভেঙে গেছে। অথচ এর কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি।

গাছ দুটি সড়ক ও জনপথের জমিতে ছিল বলে জানান, পাশের আরেক জমির মালিক ওবাইদুল হক। তিনি জানান, গাছগুলো নিশ্চিতভাবে সড়ক ও জনপথ বিভাগের। অথচ তাদেরকে না জানিয়ে কেটে নেয়া হয়েছে। মানলাম, বিদুৎ উন্নয়নের কাজে কাটতে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি তো আরেকজনের কাছে বিক্রি করতে পারেন না। এর উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত।

গাছ দুটি সড়ক বিভাগের জায়গায় কিছুটা রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন আসগার আলী। তিনি বলেন, গাছগুলো আমার হাতেই লাগানো। আমাদের জমিতেই রয়েছে। তবে কিছু অংশ সরকারি জায়গাতে রয়েছে। যেহেতু আমাদেরই জমি, তাই বিক্রি করেছি এবং পাওয়ার গ্রীড অব কোম্পানির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছি।

পাওয়ার গ্রীড অব কোম্পানির প্রকৌশলী খুররম আলী মুঠোফোনে বলেন, ভারত থেকে আসা বিদুৎ লাইনের কাজ করতে গিয়ে আমাদেরকে বিভিন্ন জায়গায় অনেক গাছ কাটতে হচ্ছে৷ যেই জায়গায় গাছ কাটা পড়ছে, তাদেরকে ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। শিমুল গাছ দুটি আসগার আলী নিজেদের দাবি করেছেন। তিনি ছাড়া কেউ গাছের মালিকানা দাবি করেনি। তাই আমাদের লোকজন গাছ দুটি কাটতে নির্দেশনা দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী ও আসগারের আবেদনের প্রেক্ষিতে তাকেই গাছের ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার-ভূমি (এসি ল্যান্ড) নাইমা খান জানান, বিষয়টি শোনার পর সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে নায়েবকে পাঠানো হয়েছে। তিনি এখনও এবিষয়ে আমাকে রিপোর্ট দেননি। সরেজমিনের রিপোর্ট পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সানজিদা আফরীন ঝিনুক বলেন, এবিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমাদের জায়গা হলে আমাদেরকে না জানিয়ে গাছ কেটে বিক্রি করার কোন সুযোগ নেই। এমনটি হলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

Comments are closed.