জার্মান রাষ্ট্রদূতের বক্তব্য সঠিক নয় : মির্জা ফখরুল

২৫৪
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : সংগৃহীত

বাংলাদেশে নিযুক্ত জার্মানির রাষ্ট্রদূত আখিম টোশারের বক্তব্য সঠিক নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

মানবা‌ধিকার ও গণতন্ত্র নি‌য়ে আখিম টোশারকে উদ্ধৃত ক‌রে বিএনপির দেওয়া বক্তব্য নিয়ে গতকাল বুধবার অসন্তোষ প্রকাশ করেন জার্মান রাষ্ট্রদূত।

রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির মহাসচিব বলেছেন, ‘এ কথাগুলো উনি (রাষ্ট্রদূত) সঠিক বলেননি। আমাদের যিনি বক্তব্য রেখেছিলেন, সেই মিটিংয়ের পরে তিনি (আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী) কখনোই এ কথা বলেননি। জার্মান রাষ্ট্রদূতকে কোট করে তিনি কোনো কথা বলেননি। আপনারা সেখানে ছিলেন, আপনারা সবই জানেন।’

বৃহস্পতিবার ছাত্রদলের নতুন কমিটি নিয়ে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির মহাসচিব এ কথা বলেন।

আখিম টোশার গত মাসে বিএনপির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকের পর বিএনপির দেওয়া বক্তব্য নিয়ে গতকাল অসন্তোষ প্রকাশ করেন জার্মান রাষ্ট্রদূত। জাতীয় প্রেসক্লা‌বে গতকাল ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিকাব)-এর টক অনুষ্ঠা‌নে সে কথা জানান জার্মান রাষ্ট্রদূত।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘তিনি (আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী) সামগ্রিকভাবে ইন জেনারেল যে কথাটা বলেছেন, সেটাই উনি (রাষ্ট্রদূত) মিসকোট করেছেন।’

এর আগে গতকাল ডিক্যাব অনুষ্ঠানে জার্মান রাষ্ট্রদূত বলেন, “আমি যে উদ্ধৃতি পড়েছি, তা বাস্তবতার সঙ্গে মেলে না। সেখানে বলা হয়েছে, ‘আমি দেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও গণতন্ত্র নিয়ে উদ্‌বেগ প্রকাশ করেছি’। এমন শব্দচয়ন সত্য নয়। এ উদ্ধৃতি নিয়ে আমি অসন্তুষ্ট।’

গত ১৭ মার্চ গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাষ্ট্রদূত আখিম টোশার।

বৈঠক শেষে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তাঁদের আলোচনায় দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আগামী নির্বাচন ও মানবাধিকারসহ বিভিন্ন বিষয় উঠেছে। বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের বিষয়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত কী বলেছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র সম্বন্ধে বিশ্বব্যাপী সবাই অবগত আছে। এখানে নতুন করে বলার কিছু নেই। এগুলো নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনাও হচ্ছে এটা তো আপনারা জানেন। এসব ব্যাপারে উনারা কনসার্নড। বাংলাদেশের বিষয় নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে আলোচনা হচ্ছে, উনারা তো তার একটা অংশ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে, আমেরিকা বলেছে, ব্রিটেন বলেছে, সবাই বলছে।’

এদিকে, জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের পরে আজ বিএনপির মহাসচিব আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব তাঁরা অতি অল্প সময়ের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করে সারা দেশে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলকে অতীত ঐতিহ্য অনুযায়ী একটি শক্তিশালী সংগঠনে পরিণত করবে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলন ও দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে তারা তাদের অক্ষুণ্ন রাখবে এবং সামনের দিকে দৃঢ়ভাবে এগিয়ে যাবে।’

এ ছাড়া ঢাকা কলেজ ও নিউ মার্কেটের ঘটনা টেনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘(নিউ মার্কেট এলাকায়) এ সংঘর্ষের ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারও প্রমাণ হয়েছে যে, আসলে দেশে কোনো সরকার নেই। এ সরকার একটা সম্পূর্ণ ব্যর্থ সরকারে পরিণত হয়েছে এবং তারা এ রাষ্ট্রকেও ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাদের চোখের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সংঘর্ষ হয়েছে দুটি পক্ষের মধ্যে। সেটাকে তারা (সরকার) বন্ধ করার জন্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘উপরন্তু তাদের কর্মকর্তারা বিভিন্নভাবে বক্তব্য দিচ্ছেন যে, তাঁরা কোনো পক্ষেই ছিলেন না, নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করেছেন। নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করে তাঁরা এ সংঘর্ষকে আরও বেশি করে ছড়িয়ে দেওয়ায় সহযোগিতা করেছে। এবং আমরা সবাই জানি যে, এ ধরনের ঘটনাগুলোতে যারা দায়ী থাকে তারা হচ্ছে… পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাই এর জন্য সম্পূর্ণভাবে দায়ী। ওই ঘটনায় যে দুজন মারা গেছেন, এ মৃত্যুর জন্য, এ হত্যার জন্য তারাই দায়ী।’

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, “প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, ‘আমাদের অপরাধটা কী?’ উনাদের অপরাধ হচ্ছে—সবচেয়ে ভয়ংকর অপরাধ। এ দেশে গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে, এ দেশে তারা মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, এ দেশকে তারা দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে এবং ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে লক্ষ্যগুলো ছিল—সে সমস্ত লক্ষ্যকে ধূলিসাৎ করে দিয়ে তারা আজ জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।’

‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে প্রমাণ হয় যে, তাঁরা সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন একটি দেশকে পরিচালনা করতে, দেশকে একটা সুষ্ঠু জায়গায় নিয়ে আসতে এবং সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এখানে প্রতিষ্ঠা করতে। এটা পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, আজ আওয়ামী লীগের অবৈধ সরকার, যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে আছে, তারা অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এ দেশ থেকে গণতন্ত্র হরণ করেছে, ছাত্রদের যে ন্যূনতম অধিকারগুলো রয়েছে, ছাত্র প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের ন্যূনতম খরচের ব্যয়ে শিক্ষালাভ করা, সে অধিকার থেকে তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে’, যোগ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম।

Comments are closed.