ডলার প্রতারণা চক্রের মূলহোতা গ্রেপ্তার

0 ৫২

স্টাফ রিপোর্টার : দলে একজন সুইপার থাকেন। টার্গেট করা ব্যক্তিকে এই সুইপার বলেন, তিনি বিদেশী নাগরিকের বাসার শৌচাগার পরিষ্কার করেছেন। তাই খুশি হয়ে বিদেশী ব্যক্তি তাকে কিছু ডলার দিয়েছেন। তিনি এগুলো বিক্রি করতে চান। সরল বিশ^াসে কেউ এই ডলার কিনতে গেলেই পড়েছেন বিপদে। ডলারের বদলে টাকা নেওয়ার পরই চম্পট চক্রের সদস্যরা। কখনও ক্রেতাকে ডলার দেওয়ার আগেই তারা পালান। কখনও হাতে ধরিয়ে দেন নকল ডলার।

রাজশাহীতে এমন একটি প্রতারক চক্রের সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। চক্রের মূলহোতাকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অন্য দুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। পুলিশ জানিয়েছে, চক্রের সদস্যরা সারাদেশেই ডলার বিক্রির নামে প্রতারণা করে আসেন। গত বছরের অক্টোবরে জনতা ব্যাংকের রাজশাহীর সাহেববাজারের কর্পোরেট শাখার সিনিয়র অফিসার ময়রুল ইসলামের সঙ্গে প্রতারণা করার এক মামলা তদন্ত করতে গিয়ে পুলিশ এই চক্রের সন্ধান পেয়েছে। মূলহোতাকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানতে পেরেছে, গত বছরের মে মাসে রাজশাহীর বর্ণালী মোড়ে এক কলেজ শিক্ষকের সঙ্গেও প্রতারণা করে চক্রটি।

চক্রের মূলহোতার নাম হাফিজুর রহমান ওরফে রবি (৪৮)। ফরিদপুরের ভাংগা উপজেলার বালিয়া গ্রামে তার বাড়ি। সোমবার সকালে ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করতে এলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে থেকে হাফিজুরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বিকালে তাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ভাংগা, নগরকান্দা, কোতয়ালী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও দিনাজপুর সদর থানায় তার বিরুদ্ধে আগে থেকেই নয়টি মামলা ছিল। রাজশাহী নগরীর বোয়ালিয়া থানার নতুন মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) গোলাম মোস্তফা এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গ্রেপ্তার হাফিজুর রহমানের সাতদিনের রিমান্ডের আবেদন করা হবে বুধবার। জিজ্ঞাসাবাদ করে তার কাছ থেকে চক্রের অন্য সদস্যদের তথ্য নেওয়া হবে। এছাড়া ইতোমধ্যে চক্রের সদস্য গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের সাগর খন্দকার, সিরাজ মিয়া, রফিক ঢালি ও ফরিদপুরের নগরকান্দার কামরুল চৌধুরীর ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

তদন্ত কর্মকর্তা জানান, জামিল উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করেন। তিনি লেনদেন করেন জনতা ব্যাংকের রাজশাহীর সাহেববাজার কর্পোরেট শাখায়। তিনি বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ময়রুল ইসলামকে জানিয়ে রেখেছিলেন, কেউ ডলার বিক্রি করতে এলে যেন তাকে জানানো হয়। ডলার কেনার জন্য তিনি ব্যাংকে সই করা চেকও দিয়ে রেখেছেন। গত ৬ সেপ্টেম্বর এক ব্যক্তি ফোন করে ময়রুল ইসলামকে জানান, তিনি পাঁচ হাজার ডলার বিক্রি করতে চান। ব্যাংক কর্মকর্তা ডলার কেনার ব্যাপারে জামিল উদ্দিনের সম্মতি নেন। পরে ১০ সেপ্টেম্বর দুই ব্যক্তি ব্যাংকে যান ডলার বিক্রি করতে।

ময়রুল ইসলাম তখন জামিলের ব্যাংক হিসাব থেকে ৫ লাখ ৪৭ হাজার টাকা তুলে ডলারের বিক্রেতাদের দেন এবং ডলারের বান্ডেল নেন। এরপর ব্যাংক কর্মকর্তা ক্যাশ কাউন্টার থেকে তৃতীয় উঠে বান্ডিল খুলে দেখেন, বান্ডিলের ওপরে ও নিচে শুধু ১০০ ডলারের দুটি নোট আছে। মাঝের ৪৮টি নোট এক ডলারের। অর্থাৎ পাঁচ হাজার ডলারের জায়গায় তিনি মাত্র ২৪৮ ডলার পেয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে জামিল উদ্দিন অজ্ঞাত প্রতারকদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। কিন্তু প্রতারকেরা মাস্ক পরে থাকায় সিসি ক্যামেরার ছবি দেখেও তাদের শনাক্ত করা যাচ্ছিল না। প্রতারকচক্রটি যে মোবাইল ফোন থেকে ব্যাংক কর্মকর্তাকে ফোন করেছিলেন, সেটির কল রেকর্ড বিশ্লেষণ করে এই প্রতারকচক্রের সন্ধান পায়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, গত বছরের ২৮ মে এই প্রতারক চক্রের প্রতারণার শিকার হন রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার নাসিরগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের প্রভাষক মোয়াজ্জেম হোসেনও। সেদিন প্রতারকচক্রটি নগরীর বর্ণালী মোড়ে তাঁর কাছে ৫ লাখ টাকার ডলার বিক্রি করতে চান। চক্রের সদস্যরা টাকা নেওয়ার পর ডলার না দিয়েই কৌশলে পালিয়ে যান। তবে টাকা দেওয়ার আগে কলেজশিক্ষক মোয়াজ্জেম চক্রের সদস্যদের সঙ্গে মোবাইলে সেলফি তুলেছিলেন। সেই ছবির সঙ্গে এই চক্রের প্রতারকদের ছবি মিলে গেছে।

বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবীর বলেন, এই প্রতারকচক্রটি সারাদেশেই ডলার বিক্রির নামে প্রতারণা চালিয়ে আসে। ঈদের আগে তাদের এ ধরনের প্রতারণা আরও বেশি করার পরিকল্পনা ছিল। এরমধ্যেই মূলহোতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তাদের প্রতারণার ব্যাপারে আরও অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.