দুঃসময়ের সঙ্গী রক্তচক্র মানবিক সংগঠন

0 ২৮৭

রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি: ‘দুঃসময়ের সঙ্গী রক্তের বন্ধন, আমার রক্তে বাঁচলে প্রাণ করবো না কেনো স্বেচ্ছায় রক্তদান,‘মানুষের জন্য মানুষ, মানুষের যে কোনো প্রয়োজনে মানুষ এই শ্লোগান বাস্তবায়নে কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারী উপজেলায় কয়েকটি রক্তদাতা সংগঠন কাজ করছে বিনামূল্যে। তাদের রয়েছে নির্দিষ্ট একটি ফোন নম্বর।

তাতে মুমুর্ষ রোগীর জন্য ফোন করলেই তারা রক্ত নিয়ে ছুটে যায় মানুষের দুঃসময়ে। যদিও তাদের নেই কোনো অফিস বা বসার জায়গা। কারন যে কোন সময় দৌড়াতে হবে উপজেলা হাসপাতাল বা ক্লিনিকে। সংগঠনের বেশির ভাগই বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী। তারা সামান্য কিছু আয় ও বাবার অর্জিত টাকা চেয়ে নিয়ে সংগঠনটি চালান। আবার রক্তদাতা সংগ্রহ বিভিন্ন স্থানে তারা করে থাকেন বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয়ের কর্মসূচি। এভাবেই চলে রক্তদান কর্মসূচি। আর স্বেচ্ছাসেবকদের মাসিক চাঁদায় চলে সংগঠনের ব্যয়ভার।

রৌমারীর অন্যতম রক্তদাতা রক্তচক্র মানবিক সংগঠনের কথা। যারা কোভিড-১৯ বা লকডাউনের মাঝেও প্রতিনিয়তই চালিয়ে গেছেন রক্তদান কার্যক্রম। সংগঠনের তথ্যমতে ২০২১ সালের ১৫ জুন কয়েকজন বন্ধু নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তোলেন রক্তচক্র মানবিক সংগঠন। ৪ থেকে ৫ ব্যাগ রক্ত দেওয়ার অনুরোধ নিয়ে মুমুর্ষ রোগীর রক্তশুন্যতা মেটাতে প্রতিনিয়তই চলে তাদের রক্তদান কর্মসূচি। বর্তমানে এক থেকে দেড় হাজার রক্তদাতা সদস্য রয়েছেন এই সংগঠনে। তারা যে কোনো মুহূর্তে কুড়িগ্রাম জেলার যে কোনো স্থানে রক্ত দিতে প্রস্তুত।

গঠনের সদস্যরা জানায়, জেলার বিভিন্ন জায়গায় দালালদের দৌড়াত্ম রয়েছে। তারা রক্তচক্র মানবিক সংগঠনের নাম করে রোগীদের কাছ থেকে রক্তের বিনিময়ে বিভিন্ন সময় টাকা তোলেন। যে কারনে সংগঠনসহ রোগীদেরও বিভিন্ন সময় সমস্যায় পড়তে হয়।

উপজেলা হাসপাতালে রক্তের প্রয়োজনে ও চিকিৎসা নিতে আসা রাবেয়া বেগম বলেন, আমার পেটের সন্তান ভুমিষ্টহবে। আমার হিমোগ্লোবিনের মাত্রা খুবই কম। ডাক্তার কইছে অনেক রক্ত লাগবে। রক্তদাতা না থাকলে আজকা মইরাই যাইতাম। ওরা রক্ত দিছে বলেই আইজ আমার পোলাডা দুনিয়ার মুখ দেখল আমি ওগরে জন্য দোয়াকরি।

জেলা হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া রোগী মহিমা খাতুন বলেন, আমারে তো ডাক্তার কইছে রক্তশূন্যতা। তাই মোবাইল করছিলাম রক্তচক্র সংগঠনকে তারা আইসা রক্ত দিলো।

সংগঠনের নিয়মিত রক্তদাতা শাহাদত হোসেন বলেন, আমি রক্তচক্র মানবিক সংগঠনের মাধ্যমে নিয়মিত রক্ত দিই। এ পর্যন্ত ১১ বার রক্ত দিয়েছি। রক্ত দিলে কোনো সমস্যা হয় না। সব থেকে বড় কথা হচ্ছে রক্ত দিলে একটা মানুষ সুস্থ থাকে। নিজের রক্ত দিয়ে কাউকে ভালো রাখার মধ্যে অন্য রকম একটা আনন্দ ও প্রশান্তিও পাওয়া যায়।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য নাজমুল হাসান বলেন, আমরা অনেক বছর ধরে মানুষের রক্তের প্রয়োজনেই কাজ করছি। মানুষের জন্য কাজ করতে ভালোই লাগে। তবে কাজের ক্ষেত্রে আরও উৎসাহ ও উদ্দীপনা পেলে আমরা ভালোভাবে কাজ করতে পারব।

সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি গাজী ফরহাদ বলেন, আমরা প্রতিদিনই মানুষের রক্তের চাহিদা মেটাতে আপ্রাণ চেষ্টা করি। আবার রক্তের প্রয়োজন মেটার পরে তাদের খুঁজেও পাওয়া যায় না। আমরা কোন নিজ স্বার্থের জন্য কাজ করি না। তাও আমাদের কত ধরনের কথা শুনতে হয়। আমাদের অনেকগুলো অনুরোধ জমা আছে, যা চেষ্টা করছি। অনেক সময় জেলার বাইরে গিয়ে রক্ত দেওয়ার অনুরোধ থাকে। সেটা আমরা দিতে পারি না। জেলা হাসপাতালসহ বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া অনেক রোগীর রক্তের প্রয়োজন মেটাতেই আমরা হিমশিশ খাই।

রৌমারী হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. আসাদুজ্জামান জানান, রক্তের বন্ধন প্রতিনিয়তই হাসপাতালে মানুষের রক্তের প্রয়োজনটা বিনামূল্যে মেটাচ্ছে। এটি একটি মহতী উদ্যোগ। তারা না থাকলে হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে রোগীরা রক্তের অভাবে সমস্যায় পড়ত। রক্তদানে কোনো সমস্যা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, রক্ত দিলে শরীর ভালো থাকে। চার মাস পর পর রক্ত দেওয়া ভালো। যাতে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণটা ভালো থাকে। যা রোগী ও রক্তদাতা উভয়ের জন্যই ভালো

Leave A Reply

Your email address will not be published.