আন্তর্জাতিক : করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়েছে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। শুধু গত ২৪ ঘণ্টায়ই নিহত হয়েছে ১৩৬ জন। এতে চীনে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২ হাজার ৪ জনে দাঁড়িয়েছে। এছাড়া চীনের বাইরে হংকং, ফিলিপাইন, তাইওয়ান, জাপান ও ফ্রান্সে ১ জন করে মোট ২ হাজার ৯ জন নিহত হয়েছে। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, এএফপি, আলজাজিরা।
এ ভাইরাসে চীনে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪ হাজার ১৮৫ জন এবং চীনের বাইরে ১ হাজার ২ জন। সবমিলিয়ে পুরো বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ৭৫ হাজার ১৮৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত মোট ১৪ হাজার ৪৪৮ জন সুস্থ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ১ হাজার ৮২৪ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে। খবর সাউথ চায়না মর্নি পোস্ট। এএফপি।
বুধবার সকালে চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, চীনে নতুন করে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৭৪৯ জন এবং মারা গেছে ১৩৬ জন। এ পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ৭৪ হাজার ১৮৫ জন এবং মারা গেছে ২ হাজার ৪ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ১১ হাজার ২০০ এর বেশি মানুষের অবস্থা আশঙ্কানক। এছাড়া চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে কয়েক লাখ মানুষ।
হুবেই প্রদেশের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হুবেইতে নতুন করে ১ হাজার ৬৯৩ জন আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করেছে। এর মধ্যে উহানেই ১ হাজার ৬০০ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে প্রদেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ৬১ হাজার ৬৮২ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ১৩৬ জনের মধ্যে ১৩২ জনই হুবেইতে। এ নিয়ে প্রদেশটিতে নিহত হয়েছে ১ হাজার ৯২১ জন। এর মধ্যে হুবেইয়ের রাজধানী উহানে নিহত হয়েছে ১১৬ জন এবং আক্রান্ত হয়েছে ১ হাজার ৬৬০ জন। হুবেইতে ৯ হাজার ১০০ জন সুস্থ হয়েছে।
হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান, সেখানাকার একটি সামুদ্রিক খাদ্য ও মাংসের বাজার থেকে এই করোনা ভাইরাসটির উৎপত্তি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।ভাইরাসটি যাতে ছড়িয়ে না যায়, সেজন্য চীন হুবেই প্রদেশকে পুরো দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছে।ওই অঞ্চলের সাথে সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে চীনসহ বাইরের বিশ্ব থেকে।
বুধবার দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মঙ্গলবার পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪৪৮ জন সুস্থ হয়েছে এবং তারা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফেরার ছাড়পত্র পেয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার ১ হাজার ৮২৪ জন হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছে।
এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিদিন যে পরিমাণ আক্রান্তের খবর আসছে, তাতে আক্রান্তের আসল খবর জানা যাচ্ছে না।কারণ, ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে, শুধু তাদের হিসেব পরিসংখ্যানে ধরা হচ্ছে।তাই এর প্রকৃত হিসেব বের করা বা জানা খুবই কঠিন ব্যাপার, যা আরেকটি আশঙ্কার কারণ।
চীনের সবগুলো প্রদেশসহ বিশ্বের ২৯টি দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। চীনের বাইরে এ পর্যন্ত ১ হাজার ২ জন শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে জাপানেই ৬১৪ জন।
ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চীন ভ্রমণে সতর্কতা, নিষেধাজ্ঞা জারি এবং কড়াকড়ি আরোপ করেছে অনেক দেশ।ভারত, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশ চীন থেকে আগত যাত্রীদের ভিসা বাতিল করেছে।ভাইরাসের কারণে, বিশ্বের অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের চীন ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।চীনে অধিকাংশ বিমান সংস্থার ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, কানাডা, ফ্রান্সসহ আরও অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের চীন থেকে সরিয়ে নিচ্ছে।
এছাড়া, করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে (কোভিড-১৯) চীনে ৬ স্বাস্থ্যকর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া চীনে ৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। বুধবার দেশটির জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন এ তথ্য জানিয়েছেন।ব্রেকিংনিউজ
চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশনের সহকারী পরিচালক জেং ইজিন জানান, ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে এরইমধ্যে ৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। এছাড়া ৩ হাজার জন স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন। যা ভাইরাসটিতে মোট আক্রান্ত রোগীদের ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এর মধ্যে হুবেই প্রদেশে রয়েছে ২ হাজার ৫০২।
এদিকে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে অবরুদ্ধ ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজে ১৪ মার্কিন নাগরিক করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মঙ্গলবার এ তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ এর পরিচালক অ্যান্থনি ফসি।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্র তার ৩শ’র মতো নাগরিককে ওই জাহাজ থেকে সরিয়ে নিয়েছে। সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) তাদেরকে টেক্সাসের সান অ্যান্টোনিও সামরিক ঘাঁটিতে নিয়ে রাখা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন দেশের আরও ৫শ’ যাত্রীর শরীরে ভাইরাস না পাওয়ায় তারা বুধবার জাহাজ ছেড়ে যাবে বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে, জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে ডায়মন্ড প্রিন্সেস জাহাজে নতুন করে ৮৮ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে।এ নিয়ে অবরুদ্ধ (কোয়ারেন্টাইন) জাহাজটিতে এক কোয়ারেন্টাইন কর্মকর্তাসহ আক্রান্ত বেড়ে ৫৪২ জন হয়েছে। বুধবার দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী কাটসুনোবো কাতো জানান, নতুন করে জাহাজের ৮৮ জনের শরীরে ভাইরাস শনাক্ত করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। এছাড়া জাহাজের যাত্রীসহ জাপানে আক্রান্তের সংখ্যা ৬১৪ জন এবং নিহত ১ জন।
তিনি আরও জানিয়েনে, গত ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে জাপানের ইয়োকোহামা বন্দরে আটকে আছে জাহাজটি। এখন পর্যন্ত জাহাজের ৫৪২ যাত্রীর শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বাকিদের আগামী ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জাহাজেই কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে।
‘ডায়মন্ড প্রিন্সেস’ নামের ওই বিলাসবহুল যাত্রীবাহী জাহাজে ২ হাজার ৬৬৬ জন যাত্রী ও ১ হাজার ৪৫ জন ক্রু রয়েছে।সকল যাত্রীদের পরীক্ষা করার জন্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জাহাজে রয়েছেন।যাত্রীদের জাহাজে নিজ রুমে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
ওই হাজাজে পূর্বে ভ্রমণ করা এক যাত্রীর শরীরে ২৫ জানুয়ারি হংকংয়ে করোনা ভাইরাস হলে, জাপান সরকার জাহাজটিকে অবরুদ্ধ করার এ পদক্ষেপ নেয়।এছাড়াও জাহাজে ভ্রমণকারী ৮ যাত্রীর শরীরে জ্বর ছিল, যা করোনা’র একটি আলামত।
৩ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি জাপানের ইয়োকোহামা উপসাগরে আসে বলে জানান দেশটির সরকারের মুখপাত্র ইয়োশিদে সুগা।
গত ডিসেম্বরে চীনে উদ্ভূত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা।এখন পর্যন্ত চীনের বাইরে বিশ্বের ২৯টি দেশে ১ হাজার ২ জন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে। শুধু চীনেই আক্রান্তের সংখ্যা ৭৪ হাজার ১৮৫ জন।
যেসব দেশে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছে-
চীন- ৭৪ হাজার ১৮৫ জন, জাপান- ৬১৪ জন, সিঙ্গাপুর- ৮১ জন, হংকং- ৬২ জন, দক্ষিণ কোরিয়া- ৪৬ জন, থাইল্যান্ড- ৩৫ জন, তাইওয়ান- ২২ জন, মালয়েশিয়া- ২২ জন, জার্মানি- ১৬ জন, ভিয়েতনাম- ১৬ জন, অস্ট্রেলিয়া- ১৫ জন, যুক্তরাষ্ট্র- ১৫ জন, ফ্রান্স- ১২ জন আক্রান্ত, ম্যাকাও- ১০ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাত- ৯ জন, যুক্তরাজ্য- ৯ জন, কানাডা- ৮ জন, ফিলিপাইন- ৩ জন আক্রান্ত, ভারত- ৩ জন, ইটালি- ৩ জন, রাশিয়া- ২ জন, স্পেন- ২ জন, বেলজিয়াম- ১ জন, কম্বোডিয়া- ১ জন, মিশর- ১ জন, ফিনল্যান্ড- ১ জন, নেপাল- ১ জন, শ্রীলঙ্কা- ১ জন, সুইডেন- ১ জন।
