নওগাঁয় ঘুষ লেনদেনে জড়িত ভ‚মি কর্মকর্তাকে আবারো পূর্বের কর্মস্থলে বহাল

0 ৯১
নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর আত্রাইয়ে প্রকাশ্য ঘুষ নেওয়াসহ সেবাগ্রহীতাদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে হাটকালুপাড়া-কালিকাপুর ইউনিয়ন ভ‚মি উপ সহকারী কর্মকর্তা দুরুল হুদার বিরুদ্ধে। যা চরম দুর্ভোগে ফেলেছে ওই দুই ইউনিয়নের সেবাগ্রহীতাদের। এর প্রতিকার চেয়ে বৃহস্পতিবার (০৭ নভেম্বর) উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) বরাবর লিখিত অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী।
দুই মাস আগেও ঘুষ লেনদেনে জড়িত থাকাসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুরুল হুদাকে হাটকালুপাড়া-কালিকাপুর ইউনিয়ন ভ‚মি অফিস থেকে আত্রাই উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভ‚মি) কার্যালয়ে সংযুক্ত করেছিলো উপজেলা প্রশাসন। তবে এর কয়েকদিনের মধ্যেই অজ্ঞাত কারণে আবারো দুরুল হুদাকে পূর্বের কর্মস্থলে বহাল করে জেলা প্রশাসন। এতে লাগামহীনভাবে ওই অফিসে বেড়েছে ঘুষ লেনদেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, আত্রাই উপজেলার সাহেবগঞ্জ গ্রামের আজহারুল ইসলাম পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া আটগাও মৌজার জমি নামজারি করতে কিছুদিন আগে অনলাইনে আবেদন করেন। জমিটি হাটকালুপাড়া-কালিকাপুর ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসের আওতাধীন হওয়ায় নামজারির করতে গত ৩০ নভেম্বর ওই অফিসে যান তিনি। সেখানে গেলে তাঁর থেকে ইউনিয়ন ভ‚মি উপ সহকারী কর্মকর্তা দুরুল হুদা প্রথমেই ৪ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেন। এর কিছুদিন পর ওই সেবাগ্রহীতাকে ডেকে দুরুল হুদা খাজনা ৪০ হাজার টাকার বেশি আসছে বলে জানান। সেই সাথে খাজনার টাকা ছাড়াই নামজারি করে দেওয়ার আশ^াসও দেন। বিনিময়ে ঘুষ আদায় করেন নগদ আরো ১১ হাজার টাকা। এরপর আবারো দুই দফায় দুরুল হুদা ঘুষ আদায় করেন ১০ হাজার টাকা।
এভাবে কয়েক দফায় মোট ২৫ হাজার টাকা ঘুষ আদায় করেন। এর প্রতিকার চেয়ে সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন তিনি। গত বুধবার (০৬ ডিসেম্বর) সরেজমিন হাটকালুপাড়া-কালিকাপুর ইউনিয়ন ভ‚মি অফিসে গেলে প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় ভুক্তভোগী আজহারুল ইসলামের। তিনি বলেন, কয়েক দফায় ২৫ হাজার টাকা ঘুষ নেওয়ার পর দুরুল হুদা আমার সাড়ে ৪ বিঘা ধানী জমি শুধুমাত্র খারিজ করে দিয়েছে। অথচ সে প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলো খাজনা সরকারী নিয়মানুযায়ী করে দেওয়ার ব্যবস্থ্যা করে দিবে। এখন জমির খাজনার জন্য প্রায় এক লক্ষ টাকা ধার্য করে দিচ্ছে। এই টাকা কমাতে হলে নাকি তাকে আরও টাকা ঘুষ দিতে হবে। আমি অতো টাকা কীভাবে দিবো। বাকী কাজ ঘুষ ছাড়া করে দিতে অনুরোধ করতে গেলে আমাকে অফিস থেকে অপমান করে বের করে দিয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে এসিল্যান্ডের কাছে অভিযোগ দিয়েছি।
ওই অফিসে আসা আরেক ভুক্তভোগী হাকিম উদ্দিন বলেন, পাইকড়া বড়াইকুড়ি মৌজায় আমার সাড়ে ৮ কাঠা জমি খারিজ করা ছিলো। ওই জমির খাজনা দিতে আসলে শুরুতেই দুরুল হুদার সঙ্গে থাকা খাঁজা নামে এক যুবক অফিসের ভেতরেই আমার থেকে প্রকাশ্যে চার হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছে। ঘুষ ছাড়া কাজ করে দিতে অনুরোধ করলে দুরুল হুদার সামনেই খাঁজা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করেছে। এই অফিস পুরোটাই দুরুল হুদার সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন ভ‚মি উপ সহকারী কর্মকর্তা দুরুল হুদা তাঁর বিরুদ্ধে উঠা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, কারোর থেকে কখনো ঘুষ নেইনি। আজহারুলের জমিতে যে খাজনা আসবে সেটাই লিখে দিয়েছি। খাঁজা নামে আমার কোন ব্যক্তিগত সহকারী নেই। সে অফিসের টুকটাক কাজ করে দেয়। আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।
উপজেলায় সংযুক্তের কয়েকদিন পর আবারো পূর্বের কর্মস্থলে কীভাবে পুনর্বহাল হলেন? এমন প্রশ্নে ক্ষীপ্ত হয়ে উঠেন দুরুল হুদা। তিনি বলেন, এটা ডিসির থেকে জেনে নিবেন। তিনি আমাকে কেনো আবারও এখানে দিয়েছে। বেশি কিছু আমি বলতে চাচ্ছি না।
এবিষয়ে জানতে চাইলে হাটকালুপাড়া-কালিকাপুর ইউনিয়ন ভ‚মি সহকারী কর্মকর্তা কামরুজ্জামান বলেন, আমি অফিস প্রধান হওয়া সত্বেও দুরুল হুদা আমার সাথে দুর্ব্যবহার করে। সেবাগ্রহীতাদের সাথেও একই অবস্থ্যা। নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে খাঁজা নামে আরেকজন বহিরাগতকে এনে অফিসে বসিয়েছে। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দুরুল হুদার বিরুদ্ধে বহুবার অনিয়মের অভিযোগ করেছি। দুই মাস আগে এসিল্যান্ড স্যার তাকে এখান থেকে সরিয়ে উপজেলা অফিসে সংযুক্ত করেছিলো। এরপর অজানা কারণে আবারো দুরুল হুদাকে এখানে বহাল করা হয়েছে। তাই সমস্যা বেড়েই চলেছে। দুরুল হুদার ঘুষ লেনদেনে আমি কখনোই জড়িত ছিলাম না। ভুক্তভোগীদের সাথে অফিসের ভেতরেই তাঁর তর্কবিতর্ক হয়।
হাটকালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস শুকুর সরদার বলেন, ওই ভূমি অফিসে সেবাগ্রহীতাদের থেকে প্রতিনিয়ত প্রকাশ্যে ঘুষ আদায় করেন দুরুল হুদা। ঘুষ না দিলে সেবাগ্রহীতাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়। কয়েক মাস আগে দুরুল হুদাকে উপজেলায় সংযুক্ত করেছিলো। এরপর নিজের প্রভাব খাটিয়ে সে আবারো এখানে নিজেকে পুনর্বহাল করেছে। প্রকাশ্য এই দুর্নীতি বন্ধে উর্ধ্বতন মহল এগিয়ে না আসলে সাধারন জনগণ ভ‚মি অফিস বিমুখী হবে। এতে আগামীতে সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষমাত্রা কমতে পারে।
আত্রাই উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অঞ্জন কুমার দাস বলেন, হাটকালুপাড়া-কালিকাপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভ‚মি উপ সহকারী কর্মকর্তা দুরুল হুদার বিরুদ্ধে ঘুষ লেনদেনের অভিযোগ করেছেন এক ভুক্তভোগী। অভিযোগটি ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দুরুল হুদার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থ্যা নেওয়া হবে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুই মাস আগে দুরুল হুদাকে উপজেলা কার্যালয়ে সংযুক্ত করার পর আবারো কেনো একই কর্মস্থলে পুনর্বহাল করা হলো? জানতে চাইলে অঞ্জন কুমার দাস বলেন, এখানে আমার কিছুই করার ছিলো না। বদলীয় বিষয়টি সম্পূর্ণ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নিয়ন্ত্রন করা হয়। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দুরুল হুদার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগ সম্পর্কে আমি আগেই জানিয়েছিলাম। এখানে তিনি চাইলে জেলা প্রশাসকের কাছে বিষয়টি উত্থাপন করতে পারবেন।
বিষয়টি নিয়ে কথা হলে আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্চিতা বিশ^াস বলেন, দুরুল হুদাকে নানান অভিযোগের প্রেক্ষিতে এসিল্যান্ড অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছিলো। বিষয়টি জেলা প্রশাসককে অবগত করেছিলাম। এরপরেও তিনি তাঁকে আবারো পূর্বের কর্মস্থলে বহাল করেছেন। এখানে ভ‚মি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলীর নিয়ন্ত্রক তিনি। তাই আমাদের কিছুই করার নেই।
নওগাঁর জেলা প্রশাসক গোলাম মওলা বলেন, দুরুল হুদা নামে ভ‚মি উপ সহকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ সম্পর্কে আত্রাইয়ের ইউএনও পূর্বে আমাকে অবহিত করেননি। কয়েক মাস আগে কিছু ভ‚মি অফিসে রদবদল করা হয়েছে। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবো।

Leave A Reply

Your email address will not be published.