নান্দনিক রাজশাহীর আকর্ষণ বাড়াচ্ছে পদ্মাপাড়

১,১৬৮

হযরত শাহ্ মখদুম রূপোষ (রঃ)-র স্মৃতি বিজড়িত এবং হিমালয়ের গাঙ্গোত্রী হিমবাহ থেকে নেমে আসা শীতল স্রোতস্বিনী পদ্মা বিধৌত রাজশাহীর পদ্মাপাড় নান্দনিকতার নৈসর্গিক ছোঁয়া। এর উৎকর্ষের অমৃত টানে ক্ষণে ক্ষণে কোমল সমীরপ্রবাহ প্রাণে জাগায় নব স্পন্দন। আর পাড় ঘেঁষে অবস্থিত হযরত শাহ্ মখদুম (র.)-র মাজার এই পদ্মাপাড়কে স্থান দিয়েছে দেশি-বিদেশী ধর্মপ্রাণ মানুষ ও পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে। তাই প্রতিনিয়ত ছুটে আসা নিসর্গপিপাসু মানুষের পদচারণায় মুখরিত থাকে মুক্ত সমীরণের এই লীলাসৈকত।

আধুনিক পরিকল্পিত নগরে নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক সময়ের ধূধূ বালুকাময় পদ্মাপাড়কে বিনোদন কেন্দ্ররূপে গড়ে তুলতে পরিকল্পনা গ্রহণ করে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক)। নিসর্গপিপাসুদের তৃষ্ণা মেটাতে দেশের অন্যতম বিনোদন স্পট হিসেবে গড়ে তুলতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিনোদনমূলক স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। আধুনিক কর্মপরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নসহ অব্যাহত রয়েছে রাসিকের আরও নানা ধরনের উন্নয়ন কর্মকান্ড।

পদ্মার তীর ঘেঁষে নির্মিত হয়েছে ‘লালন শাহ্ মুক্ত মঞ্চ’। প্রতিনিয়তই মুক্ত মঞ্চে বসে নানা ধরনের বিনোদনের আসর। দর্শনার্থীরাই মূলত এর প্রতিটি অনুষ্ঠানের দর্শক। দর্শনার্থীদের উপস্থিতিই অনুষ্ঠানগুলোকে করে তোলে মনোমুগ্ধকর। এখানে রাতের আলোতে জ্যোৎস্ন স্থানের সঙ্গে সঙ্গে উপভোগ্য হয়ে ওঠে বিভিন্ন দিবসের অনুষ্ঠানগুলো। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিবসে বরেণ্য শিল্পী-সাহিত্যিকগণের উপস্থিতি এর অনুষ্ঠানগুলোর আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ। এছাড়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পক্ষে অথবা ব্যক্তি উদ্যোগেও বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন প্রায় নিয়মিত ঘটনা। মুক্ত মঞ্চ ঘেঁষেই গড়ে তোলা হয়েছে নান্দনিক লালন শাহ্ পার্ক। সবুজ ঘাসের পাড়ে গড়ে ওঠা এ পার্কে পড়ন্ত বিকেলে কচি-কাঁচাদের মেলা বসে।

পার্কটিকে আরও আধুনিক করতে এর উন্নয়নে রাসিকের ২ কোটি ৮৮ লাখ ৪০ হাজার ৭৭০ টাকার প্রকল্প চলমান রয়েছে (সূত্র: রাসিক)। এর আওতায় রয়েছে বাঁধের উপরে ৭০০ মিটার সীমানা প্রাচীর, বাঁধের নীচে ৭০০ মিটার সৌন্দর্যবর্ধক গ্রিল, পার্কের অভ্যন্তরে ভূমি উন্নয়ন ও সৌন্দর্যবর্ধন, আধুনিক ক্যান্টিন নির্মাণ, ১১৫০ বর্গফুটের দুইতলা পাবলিক টয়লেট, বিচবাইজ কক্ষ, ওয়াকওয়ে ও পার্ক রক্ষা প্রাচীর নির্মাণ। পার্কের পাবলিক টয়লেট, বিচবাইজ কক্ষ ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণেই ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

অন্য একটি প্রকল্পের আওতায় ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬৪ হাজার ৬২৮ টাকা ব্যয়ে লালন শাহ্ পার্ক থেকে হযরত শাহ্ মখদুম (র.)-র মাজার শরীফ হয়ে পদ্মা গার্ডেন ব্রীজ পর্যন্ত প্রতিরক্ষা প্রাচীর ও ফুটপাত নির্মাণ করা হচ্ছে। এর আওতায় লালন শাহ্ পার্ক হতে পদ্মা গার্ডেন পর্যন্ত ১ কি.মি ফুটপাত নির্মাণ, লালন শাহ্ পার্ক হতে শাহ্ মখদুম (র.)-র মাজার শরীফ পর্যন্ত ৫০০ মিটার আরসিসি রিটেইনিং সাইড পোস্ট ওয়াল নির্মাণ, ৫০০ মিটার ওয়াকওয়ে ও বাঁধের উপরে পার্কিং নির্মাণ করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে হযরত শাহ্ মখদুম (র)-র মাজার সংলগ্ন এলাকায় একটি ও পদ্মা গার্ডেন এলাকায় আরেকটি ঝুলন্ত ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। ৯৮ লাখ ১৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন ঝুলন্ত ব্রিজ দুটির সৌন্দর্যবর্ধনে আঁকা হয়েছে চিত্তাকর্ষক গ্রাফিতি। রংতুলির আঁচড়ে ঝুলন্ত ব্রিজ দুটিকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অনন্য শোভায়।

টি-বাঁধ, আই-বাঁধসহ অন্য পয়েন্টগুলোতেও নির্মাণ করা হয়েছে প্রাণ জুড়ানো সব অত্যাধুনিক বিনোদন উপকরণ। আই-বাঁধের পাশেই নির্মিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক ও খেলার মাঠ। আর এসব পয়েন্টে সহজে ভ্রমণের জন্য করা হয়েছে আধুনিক শৈলীর রাস্তা।

খরা মৌসুমে পদ্মার শীতল বুকে নৌকায় ভ্রমণ করে দ্বীপের মতো চরগুলোতে যাওয়া দর্শনার্থীদের কাছে খুবই আনন্দের। স্বচ্ছ শীতল জলে পা ডুবিয়ে নৌকায় ঘুরেন বিকেল কাটান অনেক দেশি-বিদেশী পর্যটক। খরা মৌসুমে সমুদ্রসৈকতের মতো জলের স্পর্শ পাওয়ার লোভে তীরে নেমে ¯স্থানের দৃশ্যও দেখা যায় নিয়মিত।

ভ্রমণপিপাসুদের কাছে রাতের পদ্মাপাড়কে নিরাপদ, আকর্ষণীয় ও জাকজমকপূর্ণ করতে রয়েছে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা। প্রায় প্রতিটি পয়েন্টেই পুলিশ বক্সের দেখা মেলে। ট্যুরিস্ট পুলিশের উপস্থিতি পর্যটকদের ভ্রমণকে করে শঙ্কামুক্ত। ভ্রমণপিপাসুরা নিরাপদেই পদ্মাপাড়ের স্পটগুলোতে ঘুরতে পারেন।

ভ্রমণপিপাসুদের তৃপ্ত করতে রয়েছে বাড়তি ব্যবস্থা। পয়েন্টগুলোতে রয়েছে ফুডকর্ণার ও ক্যান্টিনসহ দেশি-বিদেশী নানা ধরনের খাবারের স্থায়ী-অস্থায়ী দোকান, শো-পিস ও বাচ্চাদের খেলনার দোকান, মনিহারি এবং মসজিদ। সারাদিন দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে শিক্ষার উদ্দেশ্যে রাজশাহীতে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি তো বটেই এছাড়াও দেশি-বিদেশী ভোজনরশিক পর্যটকদের ভিড়ে বিকেল থেকে রাত অবধি দোকানগুলো থাকে মুখরিত। যেন দোকানের কারও দম ফেলার ফুসরত নেই। খাবারের দামও তুলনামূলক কম।

তাই প্রতিদিনের কর্ম-চাঞ্চল্যময়তার এক ফাঁকে মুক্ত বাতায়নের খোঁজে বেরিয়ে পড়াদের অন্যতম ঠিকানা পদ্মাপাড় প্রতিনিয়তই সাজছে নতুনশৈলীতে; যা এখন নান্দনিক রাজশাহীর আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু।

Comments are closed.