পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের আরেকটি স্বপ্ন পূরণ, হচ্ছে ৫শ শয্যার হাসপাতাল

0 ৫৮
পাবনা প্রতিনিধি : অবশেষে পাবনাবাসীর দীর্ঘদিনের আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। পাবনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার এক যুগ পর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আলোর মুখ দেখছে।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) একনেকে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্পটি অনুমোদন হয়।
একটি প্রকল্পভুক্ত হওয়ায় এদিন একই সঙ্গে আরও ৩টি মেডিকেলের কলেজ হাসপাতালের প্রকল্পও অনুমোদন হয়েছে।
এদিকে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হওয়ার খবরে পাবনায় আনন্দের বন্যা বইছে। মঙ্গলবার রাতে শহরে আনন্দ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগসহ সর্বস্তরের মানুষ। তারা রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান।
২০০৮ সালে পাবনা মানসিক হাসপাতালের প্রায় একশ বিঘা জমি স্থানান্তর করে পাবনা মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয় এবং ওই বছরেই পাবনা মানসিক হাসপাতালের ক্যাম্পাসে চালু হয় পাবনা মেডিকেল কলেজ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই পাবনা পুলিশ লাইনস মাঠে জনসভায় ভাষণ দেওয়ার আগে ৫০০ বেডের এই পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে সেটি আর আলোর মুখ দেখেনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রায় ৩০ লাখ জনসাধারণের জেলাবাসীর জন্য জেলা শহরে ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতাল এবং ৮ উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসা ব্যবস্থা শোচনীয়।
দেশের একমাত্র বিশেষায়িত পাবনা মানসিক হাসপাতালও চিকিৎসক সংকটে চলছে জোড়াতালি দিয়ে। এজন্য দীর্ঘ দিনের আন্দোলনের ফলে ২০০৮ সালে পাবনা মানসিক হাসপাতালের প্রায় একশ বিঘা জমি স্থানান্তর করে পাবনা মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়।
ওই বছরেই পাবনা মানসিক হাসপাতালের ক্যাম্পাসে চালু হয় পাবনা মেডিকেল কলেজ। পরে নিজস্ব প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ করা হয় এবং ২০১৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৮৭ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মেডিকেল কলেজ ভবন উদ্বোধন করেন। কিন্তু এরপর প্রয়োজনীয় আরও অনেক অবকাঠামো বিশেষ করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হয়নি।
২০১৮ সালে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণের জন্য ভারত সরকারের অর্থানুকূল্যে ৬০০ কোটি টাকা একনেকে পাশ হয়। এরপর টেন্ডারও হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের ১৪ জুলাই পাবনা পুলিশ লাইনস মাঠে জনসভায় ভাষণ দেয়ার আগে ৫০০ বেডের এই পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এ অবস্থায় সবকিছু প্রায় ঠিক ঠাকই ছিল এবং ২০১৮ সালের আগস্ট মাসে ভারতীয় হাইকমিশনার হর্ষ বর্ধন শ্রীংলা এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের যৌথভাবে হাসপাতালের নির্মাণ কাজ উদ্বোধনের দিনও ধার্য হয়।
কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই কর্মসূচি বাতিল হয় এবং এরপর থেকে হাসপাতালের বিষয়টি অন্ধকারে চলে যায়। পরবর্তীতে প্রকল্পটিই বাতিল হয়ে যায়।
এদিকে ১ যুগ আগে পাবনা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা হলেও মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা হাতে কলমে শিখতে পারছেন না। অগত্যা ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালকে মেডিকেল কলেজের আউট টিচিং ক্যাম্পাস হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কিন্তু সেখানকার অবস্থাও শোচনীয় বলে পাবনা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের এটি কোন কাজে আসছে না। তবু শিক্ষার্থীদের ৬ কিলোমিটার দূরে ২৫০ শয্যার পাবনা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে প্রতিদিন প্রাকটিক্যাল ক্লাস করতে হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সরাসরি হস্তক্ষেপে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রকল্পটি হালে পানি পায়। এর সার সংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর নজরে আনা হয়।
বঙ্গভবনের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, এত দীর্ঘদিনেও মেডিকেলের কলেজ হাসপাতাল না হওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী বিস্ময় প্রকাশ করেন এবং দ্রুত এটি বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।
সে অনুযায়ী মঙ্গলবার শের এ বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে একনেকের ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের ২য় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এই সভায় পাবনা মেডিকেল কলেজসহ দেশের আরও ৩টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্পও এজেন্ডাভুক্ত করা হয়েছে। যেহেতু ৪টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে একটি প্রকল্প করা হয়েছিল।
এদিকে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হওয়ার খবরে পাবনায় আনন্দ মিছিল বের করা হয়। রাতে শহরে আনন্দ মিছিল বের করে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। তারা রাষ্ট্রপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানান। এসময় মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
মিছিলে অংশ নেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আ স ম আব্দুর রহিম পাকন, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোশারোফ হোসেন, পৌর মেয়র শরিফ উদ্দিন প্রধান, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক কামরুল হাসান মিন্টু, রাষ্ট্রপতি তনয় আরশাদ আদনান রনি, কামিল হোসেন প্রমুখ।
এদিকে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও এজন্য রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানান।
পাবনা মেডিকেল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ প্রফেসর ডা. রিয়াজুল হক রেজা বলেন, হাসপাতাল প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার মধ্য দিয়ে এই কলেজ আবার প্রাণ ফিরে পেল। মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চালু হলে জেলার মানুষ উন্নত চিকিৎসাসেবা পাবে।
পাবনার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বাল্যবন্ধু প্রফেসর শিবজিত নাগ বলেন, প্রধানমন্ত্রী পাবনাবাসীকে অনেক উন্নয়নের পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি উপহার দিয়েছেন। আর রাষ্ট্রপতির সহযোগিতায় ইছামতি সংস্কার প্রকল্প আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে।
পাবনা-ঢাকা সরাসরি রেল যোগাযোগ শিগগিরই উদ্বোধন হবে। সর্বশেষ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রকল্পও আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে। পাবনাবাসীর এর চেয়ে খুশির আর কী আছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.