বগুড়ায় আ.লীগের সহযোগীতায় জিততে পারে বিএনপির সাবেক চার নেতা!

0 ১১২

দীপক কুমার সরকার, বগুড়া: আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনী মাঠে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তবে দেশের আরেকটি বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপি ও তার জোটগত দলগুলো এ নির্বাচন ব্যবস্থা বানচাল করতে বিভিন্ন কর্মসুচী চালিয়ে যাচ্ছে। হরতাল-অবরোধের পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রে জনসমাগমের উপস্থিতি ঠেকাতে সরকারের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরে ভোটারদের নিরুসাহিত করতে লিফলেট বিতরণ করছে।

এ নির্বাচনকে ঘিরে ৫৪জন প্রার্থীর মধ্যে বগুড়ার ৪টি আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন বিএনপির সাবেক চার নেতা। এরা হলেন, বগুড়া-১ আসনে জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ শোকরানা, বগুড়া-৪ আসনে সাবেক সংসদ সদস্য ডা. জিয়াউল হক মোল্লা, বগুড়া-৭ আসনে বগুড়া সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি সরকার বাদল ও বগুড়া-২ আসনে সাবেক বিএনপির নেত্রী বিউটি বেগম।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নির্বাচনে না এলেও বগুড়ায় এই চার নেতা নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মী এবং সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই চার আসনের মধ্যে দুটি শরিকদের ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ফলে, শরিক দলের প্রার্থীরা কোনো সহযোগিতা পাচ্ছে না স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের কাছ থেকে। উল্টো তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের সহযোগিতা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বগুড়া-১ (সোনাতলা-সারিয়াকান্দি) আসনে কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ শোকরানা। তিনি বলেন, ভোটের প্রচারণায় এখন পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি। সাধারণ মানুষের প্রচুর সাড়া পাচ্ছি। যখন আমি বলি কেটলি, তখন জনগণ বলে আলহামদুলিল্লাহ। তিনি আরও বলেন, জনগণের মাঝে সন্দেহ ছিল, ভোট কেন্দ্রে যাওয়া যাবে কিনা। গেলে কি হবে। আস্তে আস্তে মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, ভোট কেন্দ্রে যাওয়া যাবে এবং সুষ্ঠু ভোট হবে।

বগুড়া-২ (শিবগঞ্জ) আসনে ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন জেলা বিএনপির সাবেক মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান বিউটি বেগম। এ আসনে এবার আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছিলেন শিবগঞ্জের পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান মানিক। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হতে গিয়ে তিনি মেয়র পদ থেকে পদত্যাগ করেন। তবে, জোটের শরিক দল জাপার কাছে আওয়ামী লীগ আসনটি ছেড়ে দেওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে যেতে হয়েছে মানিককে। এজন্য মানিকসহ তার অনুসারীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে।

এছাড়া, জাপা প্রার্থী শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দূরত্ব আগে থেকেই। যে কারণে আওয়ামী লীগ থেকে লাঙ্গল প্রার্থীকে কোনো সহযোগিতা করা হচ্ছে না। উল্টো সাবেক বিএনপি নেত্রী বিউটি বেগম প্রাপ্ত ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন করতে দেখা গেছে তৃণমূল পর্যায়ের অনেক নেতাকর্মীদের।

স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেত্রী বিউটি বেগম বলেন, জনগণের বিশ্বাস অর্জনের জন্য সরকারেরও একটা সময় আসছে, যে আর রাতে ভোট হবে না। আর কেউ সিল মেরে নিতে পারবে না।

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা বলেন, দলীয় প্রধানের সিদ্ধান্ত মেনে আমরা ইচ্ছেমত প্রার্থীকে ভোট দেব।

বগুড়া-৪ (নন্দীগ্রাম- কাহালু) আসনটিও ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আসনে মহাজোটের শরিক দল জাসদ মনোনীত প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। দলীয় নেতাকর্মীদের খোঁজ না রাখার কারণে জাসদের নেতাকর্মীরাই তানসেনের পক্ষে কাজ করতে নারাজ।

এছাড়া, গত উপনির্বাচনে তানসেনের জয়ের পেছনে বড় ভূমিকা রাখা নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগ এবার তানসেনের পাশে নেই। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থীর (ঈগল) পক্ষে কাজ করছেন।

এমনকি, স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচনি প্রচারণায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অংশগ্রহণের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। এছাড়া, তানসেনের পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় নন্দীগ্রাম পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তার হোসেন বকুল ও সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমানকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

মুক্তার হোসেন বকুল এই প্রতিবেদককে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের কেউ মহাজোট প্রার্থীর (নৌকা) পক্ষে কাজ করছে না। তারা বিএনপির সাবেক এমপির পক্ষে কাজ করছে। আমি ঈগল মার্কার বিপক্ষে থাকায় আমাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ফিরোজ কামাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে সংগঠনের কার্যক্রমে অনুপস্থিত, নিষ্ক্রিয় থাকা এবং সংগঠন বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগে দুইজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

নন্দীগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনিছুর রহমান বলেন, জাসদের এই প্রার্থীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি কখন আসেন, কখন যান ঠিক নেই। পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতিসহ দুইজনকে অব্যাহতি দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নৌকার পক্ষে তিনি (মুক্তার হোসেন বকুল) কোনদিন ভোট করেননি। আর তিনি বলছেন, নৌকার পক্ষে নির্বাচন করায় পদ হারিয়েছেন, এটা হাস্যকর বিষয়।

বগুড়া-৪ আসনের নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম তানসেন বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে মান অভিমান চলছে। এটা কেটে যাবে। তখন তারা আমার পক্ষে আসবে। তবে, প্রকাশ্যে কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে না।

এ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক বিএনপি নেতা জিয়াউল হক মোল্লা বলেন, শুরুতে আমাকে হত্যাচেষ্টা করা হয়। এরপর আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালানো হয়। কিন্তু আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি এবং জনগণ আমার সঙ্গে আছে। ভোটারদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। এখানে দলমত নির্বিশেষে সবাই চায়, আমি এখানকার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হই। জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী।

বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনের আরেক সাবেক বিএনপি নেতা মো. সরকার বাদল (ঈগল) প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, শাজাহানপুর-গাবতলী এলাকার মানুষ আমার সঙ্গে আছে। এর কারণ হলো বগুড়ার অনেক উন্নয়নমূলক কাজের সঙ্গে ছিলাম। এর অংশ হিসেবে শাজাহানপুর উপজেলা বাস্তবায়ন আন্দোলনের মাধ্যমে বিশেষ করে তারেক রহমানের সময় এই উপজেলা আমি বাস্তবায়ন করেছি। বগুড়ার রাস্তাঘাট প্রশস্ত করণে ভূমিকা রেখেছি। আমি এক সময় বিএনপির নেতাও ছিলাম। এখনও নেই তাও বলবো না। যেহেতু আমি কোন পদে নেই তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।

তবে আমার ভালোবাসা আছে তাদের প্রতি। সেই ভালোবাসার খাতিরে অবশ্যই বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত শাজাহানপুর-গাবতলীর মানুষ আমাকে ভোট দেবে এটা আমি বিশ্বাস করি। আমি একাই প্রচারণা করছি। সঠিকভাবে ভোট হলে আমি জয়ী হবো ইনশাআল্লাহ। কারণ স্বতন্ত্র হিসেবে এর আগেও ভোট করেছি। সে সময়ও অনেক ভোট পেয়েছি। এবারও সবার চেয়ে বেশি ভোট পাবো আশা করি।

Leave A Reply

Your email address will not be published.