বগুড়ায় প্রাথমিক শিক্ষায় সরকারি অর্থ ভূয়া বিল-ভাউচারে উত্তোলনেই হরিলুট!

0 ১৪৫

বগুড়া প্রতিনিধি: কোন কোন বিদ্যালয়ে কেনা হয়নি কোন সরমঞ্জামাদি, আবার কোন কোন বিদ্যালয়ে খেলনা সামগ্রী কেনা হলেও সেই পণ্যের বাজার মুল্যের প্রায় দ্বিগুন মুল্য হিসাবে কষে সরকারি অর্থের ভুয়া বিল ভাউচার উপস্থাপন করা হয়েছে। চলতি বছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীন পিইডিপি-৪ (নিড বেজড্ প্লেয়িং এক্সসোরিজ) প্রকল্পে বরাদ্দের সাড়ে সাত লক্ষ টাকা উত্তোলনপূর্বক হরিলুট। এমন অভিযোগ উঠেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

কাজের বাস্তবায়ন না হলেও এ বিল উত্তোলনে সহায়ক প্রমাণপত্র হিসেবে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রত্যয়ন দেয়া অনেকটাই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে! তবে এসব বিল কাজ করার আগেও উত্তোলন করা যায়, এমনকি শিক্ষা অফিসের একাউন্টে রেখে দেয়া যায় বলে দাবী করেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।

সুত্রে মতে জানা যায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রনালয়ের অধীন পিইডিপি-৪ (নিড বেজড্ প্লেয়িং এক্সসোরিজ) প্রকল্পের আওতায় ২০২২-২৩ অর্থ বছরে বগুড়ার শেরপুরে ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনুকুলে দেড় লক্ষ করে টাকা বরাদ্দ দেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর। প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে শেরপুর পৌরসভা, ধড়মোকাম, ভবানীপুর, বাগড়া, বিশালপুর, ধুনকুন্ডি ও শিমলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

আর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ওই বরাদ্দের অর্থে প্রয়োজনীয় খেলার সামগ্রী যেমন স্লিপার, সুয়িং(দোলনা), সি-ছ, হ্যাংগিং রিং, ব্যালান্সিং ও জিকজারসহ নানা কিছু ক্রয় করে বিদ্যালয়ে স্থাপন করে। কিন্তু এসব সামগ্রীর বাজার মুল্যের প্রায় দ্বিগুন দামের বিল ভাউচার তৈরী করে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানেরা উপজেলার সংশ্লিষ্ট কর্তাদের ম্যানেজের মাধ্যমে সমুদয় অর্থ উত্তোলন করে নেয়। যদিও এসব বরাদ্দের অনুকুলে নির্দেশনা অনুযায়ী উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর সম্পুর্ন কাজের তদারকি করে প্রত্যায়ন প্রদান করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর এসব কাজের গুনগত মান ও বিল ভাউচার যাচাই বাছাই না করে কাজ সম্পন্ন হয়ে মর্মে প্রকৌশলীর প্রত্যয়ন প্রদান করা সত্যিই রহস্যজনক!

সম্প্রতি সরেজমিনে উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের ধড়মোকাম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোন খেলনা সামগ্রী স্থাপন করা হয়নি অথচ বিল ভাউচার জমা করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসে।
এব্যপারে জানতে চাইলে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবলু মিয়া বলেন, বিলতো আগেই নিতে হবে, তাছাড়া কাজ করবো(খেলনা সামগ্রী) করবো কিভাবে? আমি কি বাড়ী থেকে টাকা নিয়ে এসে আগে কাজ করবো ! তাছাড়া শিক্ষা অফিসের স্যারদের সাথে কথা বলেই এ বিল-ভাউচার জমা দিয়েছি।

উপজেলার বিশালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবু সাইদ সরকার বলেন, আমি বিল জমা দিয়েও ছিলাম, উত্তোলন ও কাজও করেছি। তবে উপজেলায় জমা দেয়া বিলের ভাউচারে দুটো স্লিপার ক্রয় বাবদ ৪৮হাজার উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেক্ষেত্রে একটি প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এমন প্রশ্নে সদত্তোর দিতে পারেনি। তাছাড়া এসব সামগ্রীর বাজারমূল্য থেকে ভাউচারে বেশী উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে ভবানীপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদুর রেজা বলেন, কাজ সম্পন্ন করে ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের প্রত্যয়ন সাপেক্ষে বিল উত্তোলন করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, চলতি অর্থ বছরে পিইডিপি-৪ প্রকল্পের বরাদ্দের দেড় লক্ষ টাকা করে উত্তোলনে উপজেলার ৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের স্বাক্ষরিত বিল ভাউচার জমা দেয় উপজেলা শিক্ষা অফিসে। শিক্ষা অফিস বিলগুলোর অনুকুলে অর্থ ছাড় দিতে উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কাছে চিঠি দেয়। তবে বিল ভাউচারে যেসব খেলনা সামগ্রী(স্লিপার ২টা, চুয়িং(দোলনা)১টা, সি-ছ ১টা, হ্যাংগিং রিং ১টা, ব্যালান্সিং ১টা ও জিকজার ১টা উল্লেখ করা হয়)।

কিন্তু উপজেলা শিক্ষা অফিস কর্তৃক প্রদেয় বিলে নানা অসংগতি ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রত্যয়ন না থাকায় পর্যায়ে বিলগুলো ফেরত পাঠায়। পরবর্তীতে অদৃশ্যকারণে ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অনুকুলে প্রকৌশলীর প্রত্যয়ন প্রাপ্তি সাপেক্ষে বিলগুলোর অর্থ ছাড় দেয় হিসাব বিভাগ। এর মধ্যে রয়েছে শেরপুর পৌরসভা, বাগড়া, বিশালপুর, ধুনকুন্ডি ও শিমলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। তবে সর্বশেষ জুন ক্লোজিংয়ের শেষ দিবসে ধড়মোকাম ও ভবানীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বপক্ষে প্রকৌশলীর প্রত্যায়ন উপস্থাপন করে বিলের অর্থ ছাড় নিয়েছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিস এমনটাই দাবী করেছেন উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. রেজাউল ইসলাম ।

উপজেলা প্রকৌশল অধিপ্তরের প্রকৌশলী মো. লিয়াকত আলী বলেন, উপজেলার ৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কাজের মধ্যে কয়েকটির প্রত্যয়ন দেয়া হয়েছে এবং কয়েকটি বাঁকী রয়েছে। তবে বিল ভাউচারের সাথে কাজের বাস্তবতার হেরফের নিয়ে এমন প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট অফিসার ছাড়া বলা সম্ভব নয় বলে তিনি দাবী করেন।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান বলেন, প্রতিটি স্কুলের কাজের অনুকুলে উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রত্যয়ন দেয়ায় বিল প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু দেইনি। তবে এখন স্কুল বন্ধ রয়েছে, সংবাদ প্রকাশ না করে কয়েকদিন ধৈর্য ধরুন, স্কুল খোলার পর সরেজমিনে তদন্ত সাপেক্ষেই ওই সব কাজের বিলগুলো প্রদান করা হবে। পত্রিকায় ‘লেখালেখি করলে শুধু লাফালাফি বাড়ে’ কিন্তু কাজের ইমপ্লিমেন্টশন হয়না? বলে ওই কর্মকর্তা দাবী করেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.