বগুড়ায় হরতালে আ.লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ, দুই পুলিশ সদস্য ও আ.লী নেতা সহ আহত ২৫

0 ৭১

বগুড়া প্রতিনিধি: বিএনপির ডাকা সকাল সন্ধ্যা হরতালে বগুড়া শহরের ধাওয়া পালটা ধাওয়ার এক পযার্য়ে সংঘর্ষে পরিণত হয়। রবিবার সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে শহরের শহরের ফতেহ আলী বাজার এলাকার গালাপট্টি সড়ক, নবাববাড়ী রোড বিভিন্ন স্থানে ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় বিএনপি পুলিশ এবং আওয়ামী লীগকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ করে। এদিকে মসজিদের মাইকিং ঘোষণায় ইউএনও’র গাড়িসহ ১৭টি গাড়ি ভাংচুর হয়েছে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ- বিএনপি’র সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের দুই সদস্য, বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েলসহ আহত হয়েছেন অন্তত ২৫জন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ প্রায় ৭টি টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে। এতে পরিস্থিতি শান্ত হলে সাতমাথাসহ পুরো শহরজুড়ে রিকশা-ভ্যান সিএনজি চালিত অটোরিকশা স্বাভাবিকভালে চলাচল শুরু করে। তবে সরকারি অফিস-আদালত খোলা থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিসে আসতে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়। এদিকে হরতালকে কেন্ত্র করে শহরের প্রায় সকল মার্কেটের দোকান ও শপিংমল বন্ধ ছিল।

পরে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশের আয়োজন করে। এতে জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা, সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর তালুকদার হেনা, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালুসহ একাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।

অপরদিকে হরতালের প্রতিবাদে দুপুরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনুর নেতৃত্বে নেতাকর্মীরা শহরের সাতমাথায় অবস্থান নেয়। পরে আওয়ামী লীগ শান্তি সমাবেশ করে।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক সুলতান মাহমুদ খান রনি বলেন, সকাল সাড়ে নয়টার দিকে শহরের গালাপট্টি এলাকায় শহর বিএনপি কার্যালযের সামনে থেকে বিএনপির নেতা কর্মীরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের উপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এসময় জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আল রাজি জুয়েল, শহর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক উদয় কুমার বর্মন, আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ, ছাত্র লীগ নেতা নাইম সহ ৮ জন আহত হয়েছে।

শান্তিপূর্ণ হরতালে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আমাদের ওপর প্রথমে হামলা চালিয়েছে এমন অভিযোগ তুলে বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা বলেন, শান্তিপূর্ণ হরতালে সমর্থনে পিকেটিং চলাকালীন সময়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা ধাওয়া করে হামলা চালায়। আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের সরিয়ে নিয়ে আসি। আমাদেরও ৪-৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।

অপরদিকে বেলা ১২টার দিকে বগুড়া সদর উপজেলা গোকুল এলাকায় সকাল সন্ধ্যা হরতালে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সংঘর্ষ বাধে। এসময় ঢাকা-দিনাজপুর মহাসড়ক অবরোধ অন্তত ১৭টি গাড়ি ভাঙচুর করে হরতালের সমর্থনকারীরা। এর মধ্যে বগুড়া সদর ইউএনওর যানবাহন ও একটি অ্যাম্বুলেন্সও রয়েছে। এসময় এক শিশুসহ ১৩জন আহত হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফিরোজা পারভীন জানান, সদরের লাহিড়ীপাড়ার ইউনিয়নের দোবাড়িয়া গ্রামে লক্ষ্মী পূজার একটি মন্ডপে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান তিনি। পরিদর্শন শেষে সরকারি গাড়ি নিয়ে অফিসে ফিরছিলাম। এসময় বেলা সাড়ে ১২টার দিকে সদরের বাঘোপড়া খোলারঘর এলাকায় মহাসড়কে হামলার শিকার হই। এসময় আমার গাড়ি লক্ষ্য করে এলোপাথরিভাবে ইট, পাটকেল ছোড়া হলে গাড়ির গ্লাস ভেঙে যায়। তবে এঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি আইনগত ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।

সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার স্নিগ্ধ আখতার বলেন, হরতালকে কেন্দ্র করে শহরের কয়েক দফায় বিএনপির নেতাকর্মীদের সাথে উত্তপ্ত পরিস্থিরি সৃষ্টি হয়েছে। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পাঁটটি রাবার বুলেট নিক্ষেপ করা হয়। এদিকে গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর মহাসমাবেশ থেকে ফেরার পথে সিরাজগঞ্জে বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি এম আর ইসলাম স্বাধীনসহ পাঁচ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী বলেন, মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে লোকজন জড়ো করে সংঘর্ষে জড়িয়ে যান। তাদের সরিয়ে দিলে পুলিশের উপর চড়াও হন। এ সময় কয়েকজন আহত হন। তবে বগুড়ায় কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে দেয়া যাবে না। এজন্য শহরের বিভিন্ন স্থানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে বলে দাবী করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।

Leave A Reply

Your email address will not be published.