বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব আমার : প্রধানমন্ত্রী

২২৯
গণভবন থেকে গৃহহীন মানুষদের কাছে নবনির্মিত বাড়ির দলিল ও চাবি ভার্চুয়ালি বিতরণ করে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

দল-মত নির্বিশেষে সবার ঠিকানাই তাঁর সরকার নিশ্চিত করবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের প্রতিটি নাগরিকের সুন্দর জীবন নিশ্চিত করাই তাঁর দায়িত্ব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দল-মতের ভিন্নতা থাকতে পারে, তাতে কিছু এসে যায় না। দেশটা তো আমাদের। আর, আমি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তার মানে—বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব আমার।’

প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘কারও কাছে যদি খবর থাকে—বাংলাদেশের একটি মানুষ ভূমিহীন বা গৃহহীন রয়েছে, অবশ্যই আমাদের খবর দেবেন। দল-মত নির্বিশেষে যেই গৃহহীন থাকবে, আমরা তাদেরই ঘর করে দেব, ঠিকানা ও জীবিকার ব্যবস্থা করে দেব।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বৃহস্পতিবার সকালে সারা দেশে ‘আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্পের তৃতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপের আওতায় ভূমিহীন ও গৃহহীনদের মধ্যে আরও ২৬ হাজার ২২৯টি ঘরসহ জমি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে বলেন, দল-মত, আদর্শের ভিন্নতা থাকলেও মানুষের বড় পরিচয় সে মানুষ এবং সেভাবেই তিনি মানুষকে বিবেচনা করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘মানুষকে আমি মানুষ হিসেবেই দেখি এবং প্রত্যেকটি মানুষ সুন্দরভাবে বাঁচবে, সেটাই আমি চাই। আমার বাবার সেটাই শিক্ষা। যে কারণে এ দেশের প্রত্যেকটি মানুষের আমি সুন্দর জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়ে যেতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী  গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি এ ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের কাছে ঘরের দলিল ও চাবি হস্তান্তর করেন। পাশাপাশি, পঞ্চগড় ও মাগুরার সব উপজেলাসহ ৫২টি উপজেলাকে গৃহহীন ও ভূমিহীন মুক্ত উপজেলা হিসেবেও ঘোষণা  দেন।

তাঁর সরকারের পদক্ষেপের ফলে পঞ্চগড় ও মাগুরার সবকটি উপজেলাসহ দেশের ৫২টি উপজেলা সম্পূর্ণ ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত হওয়ার সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আশা করি, আমরা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি জেলার প্রত্যেকটি উপজেলাকেই এভাবে ভূমিহীন-গৃহহীন মুক্ত করতে পারব। প্রত্যেকের একটি ঘর থাকবে, একটি স্থায়ী ঠিকানা থাকবে, একটি সুন্দর বাসস্থান থাকবে এবং তাঁরা সুন্দরভাবে বাঁচবে। আর, ইনশাআল্লাহ সেটা আমরা করে ফেলতে পারব বলেই বিশ্বাস করি।’

এ সময় প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ এবং এর সব সহযোগী সংগঠনসহ সব রাজনৈতিক দল, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, জনপ্রতিনিধিদের অনুরোধ করেন—নিজ নিজ গ্রামে বা এলাকায় কোনো ভূমিহীন বা গৃহহীন রয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন—সরকার তাদের ঘর নির্মাণ করে দেবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁর সরকার সমাজের সব স্তরের মানুষের জন্যই আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে যাচ্ছে। পাশাপাশি, ঋণ দেওয়া হচ্ছে এবং প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। সে সুযোগ নিয়ে নিজেদের কর্মসংস্থানের মাধ্যমে জীবনটাকে আরও উন্নত করবেন এবং নিজেরাও ভূমি কিনে ঘরবাড়ি করার যোগ্যতা যেন অর্জন করতে পারেন, সেটাও আমরা চাই।’

‘কারও কাছে হাত পেতে নয়, নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে মর্যাদার সঙ্গে যেন বেঁচে থাকতে পারেন’, বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এ সমাজটাকে আরও সুন্দরভাবে গড়ে তোলার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি গ্রামের মানুষ যেন সব ধরনের নাগরিক সুবিধা পেতে পারেন, সেটিই আমরা নিশ্চিত করতে চাই।’

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি পাঁচ জেলার পাঁচটি স্থানের সঙ্গে সংযুক্ত থেকে উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময়ও করেন। স্থানগুলো হচ্ছে—লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরকলাকোপা আশ্রয়ণ প্রকল্প, বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার গৌরম্ভা আশ্রয়ণ প্রকল্প, ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চর ভেড়ামারা আশ্রয়ণ প্রকল্প, পঞ্চগড়ের সদর উপজেলার মহানপাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার জাঙ্গালিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্প।

গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ‘আশ্রয়ণ-২’ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবু সালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান প্রকল্পের ওপর একটি উপস্থাপনা তুলে ধরেন এবং এর পরেই একটি ভিডিও চিত্র প্রদর্শিত হয়।

Comments are closed.