বিলুপ্তি প্রায় পরিবেশবান্ধব পাখি ফিঙে

0 ৩৩৩

ইমদাদুল হক, পাইকগাছা,খুলনা: পাখির রাজা ফিঙে। এরা গায়ক গোত্রের পাখি। মাঝারি আকার, উজ্জ্বল কালো রং, লম্বা ও চোখা ডানা, সামান্য বাঁকা শক্ত ঠোঁট যার গোড়াড় লম্বা গোঁফ, দীর্ঘ ও খাঁজকাটা লেজ এদের বৈশিষ্ট্য। মাজা কালো রং আর দু’ভাগ করা লেজ দিয়ে এদের সহজেই চেনা যায়। ফিঙে শিকারী পাখি বলেও পরিচিত।

ফিঙে পাখির বৈজ্ঞানিক নাম : ডিক্রুরাস ম্যাক্রোসার্কাস ইংরেজি নাম : ব্ল্যাক ড্রোনগো পরিবারের একটি ছোট এশীয় পাসেরিন পাখি। এটি গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলের স্থায়ী বাসিন্দা। এগুলো উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তান এবং উত্তর পাকিস্তানের গ্রীষ্মে দেখা মেলে তেমনি সিন্ধু উপত্যকা থেকে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, হংকং এবং চিনেও দেখা মিলে।
ফিঙে প্রধানত পতঙ্গভুক, উড়ন্ত কীটপতঙ্গ ধরে খায়, আবার কখনও ছোট খাটো মেরুদন্ডী প্রাণী খায়। কৃষকরা তাদের ফসলের মাঠে শক্ত ডাল ও বাঁশের কুঞ্চি মাঠজুড়ে পুঁতে দেয়; যাতে ক্ষতিকর অন্য সব পোকা মাকড় খেতে পারে। ফিঙে পাখি সবার কাছে প্রিয় ।

গ্রামের পরিচিত পাখি ফিঙে। এদের বিচরণ ফসলের ক্ষেত্র, মাঠেও বিলের কাছে। ফিঙে পাখি মানুষের কাছাকাছি উড়ে বেড়াতে পছন্দ করে। উন্মক্ত মাঠে গরু,মহিষ ও ছাগল গবাদি পশুগুলো মাঠে ঘাস খাওয়ায় মগ্ন থাকে তখন ফিঙে পাখিরা এদের পিঠে বসে উড়ে উড়ে ফড়িং, মৌমাছি, পিঁপড়া, ওলু পোকা, পতঙ্গ, মাজরা পোকা, মাকড়সা এবং পঙ্গপালের মতো ফড়িং পোকা মাকড় ধরে খেতে দেখা যায়। কৃষক যখন লাঙ্গলের হাল ধরে চাষ করতে থাকে তখন এর পেছনে পেছনে ফিঙ্গে পাখি উড়ে উড়ে উন্মুক্ত পোকামাকড় ধরে ধর খাওয়ার দৃশ্য দেখতে মজা লাগে। এরা পরিবেশবান্ধব পাখি।

পাখির রাজা ফিঙ্গে অন্যান্য পাখিকে সহ্য করতে পারে না। ফিঙে পাখির চরম শত্রু হল কাক আর চিল। অনেক বড় পাখিকেও এরা আক্রমণ করে। ফিঙে প্রায়শ নিজের চেয়ে অনেক বড় পাখিকেও তাড়া করে এবং অনেক সময় প্রতিবেশী নিরীহ পাখিদের আগ্রাসী শিকারি পাখির হামলা থেকে বাঁচায়। আক্রমন্তক আচরণের জন্য বেশ পরিচিত। এদের বাসার কাছে অন্য পাখি আক্রমণ করতে এলে, তাড়াতেও দ্বিধা করে না। তাই অনেক পাখি ফিঙে পাখির বাসা এড়িয়ে চলে।

পৃথিবীতে প্রায় ২৪ প্রজাতির ফিঙে আছে এর মধ্যে বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির ফিঙে পাখি পাওয়া যায়। দক্ষিণ এশিয়ার প্রায় সব দেশেই এ পাখি দেখা যায়। এদের প্রজনন সময় মার্চ থেকে জুন। গাছের খোঁড়লে বাটি আকৃতিতে বাসা তৈরি করে।৩ থেকে ৪টি ডিম পাড়ে। ডিম ফুটতে সময় লাগে ১৩ থেকে ১৪ দিন। এর লেজসহ ২৮ থেকে ৩০ সেন্টিমিটার। মাথা থেকে লেজ পর্যন্ত কালো। কালোর ওপরে নীলাভ আভায় মনোরম লাগে। এদের ঠোঁট ধাতব কালো, গোড়ায় সাদা ফোটা থাকে এবং পা কালচে।

এদের অপ্রাপ্ত, বয়স্কদের পেটের ওপর থাকে সাদা দাগ। স্ত্রী-পুরুষ উভয় পাখি একই রকম। অনেকে একে আক্রমণাক্তক পাখি হিসেবে চিহ্নিত করেছে।অনেকে একে শিকারী পাখি বলে।ফিঙে পাখি সকালবেলা মধুর সুরে গান গেয়ে মন ভোলাতে পারে।

গ্রামে ফিঙে পাখি বেশি দেখা গেলেও শহরে দেখা মিলে কম। তবে ফিঙে পাখিকে কখনও কখনও সঙ্গী ছাড়া একা একা বসে থাকে বেশি। এমনটা দেখা যায় কখনও কখনও। পরিবেশবান্ধব এ প্রজাতির পাখি বিলুপ্তি থেকে রক্ষা করা সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য।

Leave A Reply

Your email address will not be published.