ভারতের মনিপুরে সেনা মোতায়েনের পরেও চলছে সহিংসতা

0 ২৭৪
ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় মনিপুর রাজ্যের চুরাচান্দপুর এলাকায় সহিংসতায় পুড়িয়ে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি যানবাহন। রয়টার্সের এই ছবিটি তোলা হয় গত ৪ মে

সম্প্রতি ভারতের দুর্গম উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় মনিপুর রাজ্যে জাতিগত সহিংসতা শুরু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেখানের কর্তৃপক্ষ মোতায়েন করে সেনাবাহিনী। এরপরও ফের শুরু হয়েছে সংঘর্ষ। স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে এসব তথ্য।

এরপর সহিংসতা দমনে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে পরিস্থিতি সামলাতে  আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহিংসতা সৃষ্টিকারীদের দেখামাত্র গুলির নির্দেশনা দেয়।

মনিপুরের রাজধানী ইম্ফল এবং চুরাচান্দপুর জেলার হাসপাতালগুলোর মর্গের হিসাব অনুযায়ী সহিংসতায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫৪ জনে।

মনিপুর সরকারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কুলদীপ সিং সাংবাদিকদের জানান, ১৮ থেকে ২০ জনের মৃত্যুর বিষয়টি জানা গেছে। তবে, এই মৃত্যু সাম্প্রতিক সহিংসতার কারণে, নাকি অন্য কোনো ঘটনায় হয়েছে, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।

কুলদীপ সিং বলেন, ‘প্রায় ১০০ লোক আহত হয়েছে ও তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ৫০০’র বেশি বাড়িঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গত কয়েকদিনে এবং বেশ কিছু গাড়িতেও আগুন দেওয়া হয়েছে।

মনিপুর পুলিশের মহাপরিচালক পি দঙ্গেল জানান, সহিংসতায় জড়িত লোকজনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সাংবাদিকদের দঙ্গেল বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীকে সহিংসতায় জর্জরিত এলাকাগুলোতে অগ্রসর হওয়ার জন্য বলেছি এবং যে কেউ সহিংসতায় জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছি।’

রাজ্যটিতে ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের কারণে তথ্য আদানপ্রদান বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, আর এ কারণে সহিংসতার খবরগুলো আসছে বিক্ষিপ্তভাবে।

পার্শ্ববর্তী নাগাল্যান্ড রাজ্যের ভারতীয় সেনা ইউনিটের দেওয়া তথ্য থেকে জানা যায়, ১৩ হাজার লোক সহিংসতা থেকে বাঁচতে আশ্রয় প্রার্থনা করেছে।

বৃহস্পতিবার নিরাপত্তা বাহিনী রাজধানী ইম্ফলে প্রতিবাদকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ছোড়ে। সকাল-সন্ধ্যা কারফিউয়ের কারণে সেখানে পুড়ে যাওয়া খালি গাড়িগুলোকে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায়।

এদিকে, প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাজ্যটিতে সড়ক ও আকাশপথে আরও সৈন্য পাঠানো হচ্ছে।

মনিপুর রাজ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ মেইতেই জাতিগোষ্ঠীর লোকজন তফসিলভুক্তির জন্য আন্দোলন করে আসছিল। তবে, আরেকটি জাতিগোষ্ঠী এই উদ্যোগের বিরোধিতা করে।

ভারতে ঐতিহাসিকভাবে অসমতা ও বৈষম্য দূর করতে গ্রামসভা থেকে শুরু করে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচনে এবং সরকারি চাকরি ও কলেজে ভর্তির জন্য সরকারিভাবে স্বীকৃত উপজাতি কোটায় কিছু ফাঁকা আসন রাখা হয়।

গতমাসে মনিপুর হাইকোর্ট মেইতেই জনগোষ্ঠীর আবেদন বিবেচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারের প্রতি নির্দেশ দেয়।

ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় দুর্গম পাহাড়ি রাজ্যটিতে গত কয়েক যুগ ধরে জাতিগত ও বিচ্ছিন্নতাবাদী তৎপরতার কারণে অশান্ত হয়ে আছে। ১৯৫০ সালের পর থেকে বিদ্রোহী তৎপরতার কারণে মনিপুরে এ পর্যন্ত ৫০ হাজারেরও বেশি লোক প্রাণ হারিয়েছে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.