রাবিতে কোভিড পরবর্তী বৈশ্বিক সংকটে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু

0 ৭৯

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদালয়ে (রাবি) কোভিড পরবর্তী বৈশ্বিক সংকটে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলন  শুরু হয়েছে।  সোমবার  সকাল ৯টায় শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ আয়োজিত  South Asia in the Post-COVID Global Crisis : Politics, Economy, and Society  শীর্ষক এই সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (বিমক) সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ। সম্মেলনে অনলাইনে যুক্ত হয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেলি ফেল্ডম্যান।

সম্মেলন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রাবি উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মো. হুমায়ুন কবীর। অনুষ্ঠানে সম্মেলনের আহ্বায়ক সামাজিক সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক মো. ইলিয়াছ হোসেন স্বাগত বক্তৃতা ও সম্মেলনের সচিব অধ্যাপক বিজয় কৃষ্ণ বণিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) তাঁর বক্তব্যে বলেন, কোভিড পরবর্তী সময়ে নিশ্চিতভাবেই বিশ্ব এক সংকটে আছে। বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যেমন উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, সামাজিক উন্নয়ন, দারিদ্র হ্রাস, জনগণের জীবনমানের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি লাভ করেছে। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ের সংকট কাটিয়ে উঠতে প্রয়োজন সমন্বিত পরিকল্পনা। সেই পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার সফল বাস্তবায়নে সমাজ বিজ্ঞানীদের ভূমিকা অত্যন্ত গুরত্বপূর্ণ। এই আন্তর্জাতিক সম্মেলন বাংলাদেশের জন্য সংকট মোকাবেলা ও টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নে পথনির্দেশ করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অনুষ্ঠানে উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) তাঁর বক্তব্যে বলেন, কোভিড উত্তরকালে বিশ্ব রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজসহ সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন গবেষণা ও তার ফলাফল ব্যবহার করে কৌশল নির্ধারণ। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা, দারিদ্র বিমোচন, খাদ্য নিরাপত্তা, সামাজিক নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করেছে। এই সাফল্যকে ধরে রাখতে হলে কোভিড উত্তরকালে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলির মতো বাংলাদেশেরও টেকসই উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে এই সম্মেলনে আলোচিত গবেষণা প্রবন্ধগুলি প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি তাঁর বক্তৃতায় বলেন, কোভিড-১৯ বিশ্ব অর্থনীতি, সমাজ, রাজনীতি তথা সামগ্রিক উৎপাদন ও উন্নয়ন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করেছে। দক্ষিণ এশিয়া তথা বাংলাদেশ এই প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে। যদিও বাংলাদেশ ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় ভালো অবস্থানে আছে। বাংলাদেশের এই ভালো অবস্থান সত্তে¡ও সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে টেকসই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ একান্ত প্রয়োজন। এই সম্মেলনে দেশ-বিদেশের গবেষকরা যেসব প্রবন্ধ উপস্থাপন ও আলোচনা করবেন তার ভিত্তিতে বাংলাদেশের জন্য কোভিড পরবর্তী উন্নয়ন চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত ও তা মোকাবেলা করে একটি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে পথনির্দেশ পাওয়া যাবে বলে তিনি মত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে উপাচার্য তাঁর বক্তৃতায় বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায়, বৈচিত্র্য এবং স্থিতিস্থাপকতায় সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল, আমরা নিজেদেরকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে খুঁজে পাই যেখানে রাজনীতি, অর্থনীতি এবং সমাজের সংযোগস্থল আমাদের সর্বোচ্চ মনোযোগ এবং সহযোগিতার দাবি করে। যদিও মহামারী একটি শক্তিশালী প্রতিপক্ষ, এছাড়াও পরিবর্তনের জন্য একটি অনুঘটক হয়েছে, আমাদের সমাজের কাঠামোকে নতুন আকার দিয়েছে। রাজনীতি, তার সর্বোৎকৃষ্ট আকারে, সীমানা ও মতাদর্শ অতিক্রম করে অভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে আমাদের একত্রে আবদ্ধ করা উচিত। রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমেই আমরা এমন একটি ভবিষ্যত গড়ে তুলতে পারি যা অন্তর্ভুক্তিমূলক, ন্যায়সঙ্গত এবং টেকসই।আমাদের অবশ্যই উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করতে হবে এবং টেকসই প্রবৃদ্ধি চালনাকারী খাতে বিনিয়োগ করতে হবে, নিশ্চিত করতে হবে যে সুবিধাগুলি আমাদের জনগণের মধ্যে সমানভাবে ভাগ করা হয়।  কেউ যাতে পিছিয়ে না থাকে তা নিশ্চিত করে সামাজিক কল্যাণ, স্বাস্থ্যসেবা এবং শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।
আসুন আমাদের জনগণের স্থিতিস্থাপকতা, আমাদের সম্প্রদায়ের শক্তি এবং ঐক্যের শক্তি থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করি। হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করার মাধ্যমে, আমাদের ভাগ করা দুর্বলতাগুলিকে স্বীকার করে এবং সহানুভূতি ও সহযোগিতার মূল্যবোধকে আলিঙ্গন করে, আমরা কোভিড-পরবর্তী বৈশ্বিক সংকটের চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে উঠতে পারি এবং সবার জন্য অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির যুগের সূচনা করতে পারি।

সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক ড. ফারাহা নওয়াজ।

সম্মেলন উদ্বোধনের পর প্লেনারি বক্তৃতা করেন ইমেরিটাস অধ্যাপক এম এ সাত্তার মণ্ডল (সাবেক উপাচার্য, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়), অধ্যাপক সাদেকা হালিম (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ও অধ্যাপক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী (রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়)।
আজ সোমবার সম্মেলনের প্রথম দিনে ১২টি একাডেমিক সেশনে ৪৮টি এবং দ্বিতীয় দিনে ১৮টি একাডেমিক সেশনে ১০৮টি প্রবন্ধ উপস্থাপিত হবে বলে নির্ধারিত আছে। একাডেমিক সেশনগুলো ডিনস কমপ্লেক্সের সম্মেলন কক্ষ ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সভা কক্ষ এবং সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী একাডেমিক ভবনে অনুষ্ঠিত হবে।
এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের প্রায় ৩ শত জন শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থী অংশ নিচ্ছেন।

প্রসঙ্গত, এটি রাবি সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ আয়োজিত দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.