রাবিতে বঙ্গবন্ধু অধ্যাপকের বক্তৃতা অনুষ্ঠিত

0 ৯৮

রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘আশা-নিরাশার দোলায় হে’ শীর্ষক এক বক্তৃতা অনুষ্ঠিত হয়। ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজ (আইবিএস) আয়োজিত এই বক্তৃতা প্রদান করেন রাবির বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা।

শনিবার বিকেল ৩ টা ৩০ মিনিটে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে অনুষ্ঠিত এই বক্তৃতা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন অনুষ্ঠানের সভাপতি আইবিএস পরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ নাজিমুল হক ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আইবিএস এর অধ্যাপক স্বরোচিষ সরকার।
বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক বাস্তবতায় কাঠামোগত বিন্যাসে যে ধারাবাহিক পরিবর্তন ঘটে চলেছে একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। শোষণের ধরা-বাঁধা তত্ত্ব দিয়ে একে ব্যাখ্যা করা যায় না। রাষ্ট্রক্ষমতায় নির্দেশনার গুণগত হেরফের দিয়েও নয়। পঁচাত্তরে উৎপাদন কাঠামোয় কিছু মৌলিক পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই বছরে পনেরই আগষ্টের হৃদয়বিদারক বিধ্বংসী কাণ্ডে তার অপমৃত্যু ঘটে। পরে রাষ্ট্রক্ষমতা যখন-যেমন-যার হাতেই থাক, উন্নয়ন কর্মকান্ডের প্রয়োগিক নীতিমালায় বাঁক বদলের সুনির্দিষ্ট লক্ষণ কিছু চোখে পড়েনি।
পঁচাত্তরে সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার কার্যকর রূপ উন্নয়নকামী গরিব দেশগুলোর সামনে যথেষ্ট প্রেরণা সঞ্চারী ছিল। উৎপাদন ব্যবস্থা ঢেলে সাজাবার দিকনির্দেশনা তা থেকে আসত। এখানে চুয়াত্তরের দুর্ভিক্ষের পর বাংলাদেশের মরিয়া হয়ে বিকল্প পথ খোঁজা ছিল তাই খুবই স্বাভাবিক। শোষণহীন সমাজ গড়ার অঙ্গীকারও বিধিবদ্ধ আমাদের অনুমোদিত সংবিধানে। তাই আপৎকালীন ব্যবস্থা হিশেবে সর্ববাদিসম্মত একক নেতৃত্বে সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টন ও ব্যবহারের উদ্যোগ ছিল তখন জরুরি ভিত্তিতে এক প্রাথমিক উপায়।
তিনি আরো বলেন, এই উদ্যোগ আর কার্যকর হয়নি। বিশ্ব অর্থব্যবস্থাও পুরোপুরি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নির্ভর বাজারের দিকে ঝোঁকে। আসলে সমাজতান্ত্রিক অর্থব্যবস্থার শুদ্ধ কোন অস্তিত্বই আর কোথাও থাকেনা। অবলুপ্তি সব জায়গায় এক সঙ্গেঁ ঘটে না। কার্য-করণের ইতিহাস প্রত্যেককে নিজের নিজের মত টানে। টানে বাংলাদেশকেও। পাকিস্তানি অভিজ্ঞতায় সমর-নায়কের স্বৈরাচারও যে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, তা আমরা হাড়ে-হাড়ে টের পাই। এই বাস্তবতাকে প্রাধান্য দিয়ে অথবা তাকে ছায়াসঙ্গী করে আমাদের চলা। সমাজ বদলের অভিযানের কথা আর আমরা বলিনা। বলি আপন-আপন জায়গায় থেকে শুরু করে দক্ষতা বাড়াবার কথা। বলি, বিশ্ব অর্থনীতির কারবারে যে যেখানে আছি, সেখানে থেকেই মোক্ষ লাভের পথ খোঁজা। আর্ন্তজাতিক প্রেক্ষাপটেও খাপ খায় সেইটিই। আমাদের চালাক-চতুর এনজিও-রাও এইভাবে খোঁজে বিশ্বাঙ্গন। সেখানে কেউ কদর পেলে দেশও তাতে ধন্য হয়।
পঁচাত্তরের পর থেকে আমাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় যখন যে-ই থাক, নিজেকে, অথবা নিজেদের, দেশে এবং বিদেশে, গ্রহণযোগ্য করার লক্ষ্যে পদ্ধতিগতভাবে একই পথ অনুসরণ করে চলে। পছন্দে-অপছন্দে তফাত আছে অবশ্যই। নৈতিকতার মানদণ্ডে স্থলন-পতন এসবও ধারাবাহিক। তাপরেও আমাদের সক্ষমতা বেড়েছে। বেড়েছে চ্যালেঞ্জ এবং অনিশ্চয়তা। ভবিষ্যৎ আশার আলো দেখায়। যদিও ঝড়-তুফানের আশংকাও সঙ্গে-সঙ্গে চলে। এমনটিই বাস্তব। আজ, এবং আগামীর।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, দেশ গঠনে বঙ্গবন্ধুর চেষ্টার, বাকশাল গঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্যে ইত্যাদি এবং তৎকালীন বৈশ্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে ‘আশা-নিরাশার দোলায় হে’ শীর্ষক এই বক্তৃতা থেকে অনেক কিছু জানা যায়। রাজনীতির মানুষদের জন্য এ ধরনের বক্তৃতা শোনা যেমন সৌভাগ্যের ব্যাপার তেমনি অর্থবহ। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড হতবিহ্বল করে দেয় গোটা জাতিকে, নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে দেশ। অশুভ শক্তির পারস্পরিক যোগাযোগ ও নৃশংসতার মাত্রা ছিল অকল্পনীয়। আর যারাও বা নেতৃত্ব দিতে পারতেন তারা তো চলে গিয়েছিলেন কারান্তরালে। পঁচাত্তর পরবর্তীতে জনগণের নূন্যতম নিরাপত্তার বিষয়টিও ছিল উপেক্ষিত। কিন্তু বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে দেশ আবার ঘুরে দাঁড়ায়।
শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, জাতিকে যে স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর যে প্রত্যয় নিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন, তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা অসমাপ্ত সেই লক্ষ্যে ক্রমে এগিয়ে যাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু ছিলেন বিশ্বের শোষিত মানুষের জন্য মুক্তির অনুপ্রেরণা। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু হলেও তাঁর আদর্শের কোনো মৃত্যু নেই। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত কাজ লক্ষ্যে এগিয়ে নিতে নিরন্তর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। জাতির প্রতীক নৌকা নিয়ে শেখ হাসিনা সঠিক সময়ে সঠিক বন্দরে পৌঁছাবেন এই লক্ষ্যেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন।
উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আশা-নিরাশার দোলায় হে এই বক্তৃতাটি বঙ্গবন্ধুর দেশ গঠন পরিকল্পনা ও তার পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির এক অসাধারণ বিশ্লেষণ। গভীর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে আমরা বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ ও তাঁর স্বপ্ন সমন্বয়ের এক রূপরেখা পাই এই বক্তৃতায়। বক্তৃতাটি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রাজনীতিক, দেশ নিয়ে ভাবেন, দেশকে ভালোবাসেন এমন সবার জন্য আবশ্য পাঠ্য বলেও তিনি উল্লেখ করেন। প্রসঙ্গক্রমে তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন একজন রাজনীতিক। কিন্তু দেশ গঠনে তাঁর চিন্তার মধ্যে রাজনীতির ঊর্ধ্বে অর্থনীতি ও জনকল্যাণের তত্তে¡রও প্রতিফলন দেখা যায়। তাঁর চিন্তা-চেতনা আমাদের এগিয়ে চলার অন্যতম পাথেয়।

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক সনৎকুমার সাহা তাঁর লেখা কয়েকটি বই শিক্ষান্ত্রীকে উপহার দেন। এছাড়া উপাচার্য আইবিএস থেকে প্রকাশিত কয়েকটি প্রকাশনা উপহার দেন।

Leave A Reply

Your email address will not be published.