সিরাজগঞ্জে স্ত্রীকে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা স্বামীর

0 ৯১
সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি: ব্যাংক থেকে ৭ লাখ টাকা ঋণ তুলে না দেয়ায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার হাবিবুল্লাহনগর ইউনিয়নের কুমিরগোয়ালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোছা: আইরিন পারভীনকে (৪২) গলাটিপে ও মাছ কাটা বটি দা দিয়ে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করেছে তার অর্থলোভী পাষন্ড স্বামী আজিজুর রহমান বিদ্যুৎ(৪৪)।
এছাড়া প্রায় ১ মাস ধরে ৫ বছরের মেয়ে আবিদা আনজুমকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ছেচানিয়া আফতাব নগর নাছিমা পারভীন বিনা(৪৭) নামের বোন ও তার স্বামী আল আমিনের বাড়িতে আটকে রেখেছে। এরপর থেকে মায়ের জন্য রাতদিন কান্নাকাটি করে ৫ বছরের অবুঝ শিশু আবিদা আনজুম অসুস্থ্য হয়ে পড়লেও তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিচ্ছে না। অর্থলোভী আজিজুর রহমান বিদ্যুৎ সাতবাড়িয়া ডিগ্রি কলেজের লাইব্রেরিয়ান ও চর বেলতৈল গ্রামের মৃত ইসমাইল হোসেনের ছেলে।
এ ঘটনায় সোমবার (২২ এপ্রিল) দুপুরে শাহজাদপুর চৌকি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে শিক্ষিকা আইরিন পারভীন বাদি হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। বাদি পক্ষের আইনজীবি এ্যাডভোকেট আব্দুল আজিজ জেলহক এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, শাহজাদপুর চৌকি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম রব্বানি বাদির লিখিত আবেদনটি আমলে নিয়ে আগামী ৭মে আসামীদের সশরীরে আদালতে হাজির হয়ে এ বিষয়ে জবাব দিতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে শিক্ষিকা আইরিন পারভীন জানান, প্রতারণার মাধ্যমে নিজেকে ঢাকার উত্তরার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে ২০১২ সালের ১১ মে মুসলিম সরিয়ত মোতাবেক আজিজুর রহমান বিদ্যুৎ তাকে বিয়ে করেন। বিয়ের পর থেকে প্রায়ই তাকে মারপিট ও নির্মম নির্যাতন করে বেতনের সমুদয় টাকা হাতিয়ে নিতেন। এরপর ঢাকার উত্তরায় জায়গা কেনার কথা বলে প্রতি মাসে বেতনের ১৮ হাজার টাকা করে ৫ বছরে ১০ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছেন। এরপর ওই জায়গা দেখতে চাইলে বিদ্যুৎ ওই জায়গা দেখাতে পারেননি। ফলে তাকে টাকা দেয়া বন্ধ করা হয়।
এছাড়া সোস্যাল ইসলামি ব্যাংক থেকে ডিপিএসের ১ লাখ ৭২ হাজার ৯৬৫ টাকা , জনতা ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৮৫ হাজার টাকা ও রূপপুরের বাড়িতে এক তলা পাকা বিল্ডিং নির্মাণের সময় স্বর্ণের গহণা বিক্রির টাকা ও সোনালি ব্যাংক থেকে ৫ লাখ টাকা ঋণ তুলে নিয়েছেন। সোনালি ব্যাংকের ঋণের কিস্তি বাবদ প্রতিমাসে এখনও ১১ হাজার ৪০০ টাকা করে বেতন থেকে কেটে নেওয়া অব্যহত থাকা অবস্থায় আবারও চরবেলতৈল গ্রামে জমি কেনার কথা বলে সোনালি ব্যাংক থেকে ৭ লাখ টাকা ঋণ তুলে দিতে চাপ দেয়। এতে রাজি না হওয়ায় গত ২৮ মার্চ ভোরে আজিজুর রহমান বিদ্যুৎ তাকে বেধরক মারপিট করে।
এছাড়া গলাটিপে ও মাছকাটা বটি দা দিয়ে গলা কেটে হত্যার চেষ্টা করে। এরপর বেধরক মারপিট ও নির্যাতন করে ছেলে আবু বকর সিদ্দিক(৯) ও মেয়ে আবিদা আনজুম(৫)কে আটকে রেখে তাকে শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরের রূপপুর পুরানপাড়ার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। নিরুপায় হয়ে তিনি ওইদিন সকালে শাহজাদপুর উপজেলার পৌর সদরের চুনিয়াখালিপাড়া মহল্লার বাবা আনোয়ার হোসেনের বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন। এর ৭ দিন পর অসুস্থ্য হয়ে ছেলে আবু বকর সিদ্দিক কৌশলে পালিয়ে মায়ের কাছে চলে আসে।
অপরদিকে মেয়ে আবিদা আনজুমকে পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার ছেচানিয়া আফতাব নগর গ্রামের বোন নাছিমা পারভীন বিনা ও তার স্বামী আল আমিনের বাড়িতে আটকে রেখে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে না দিলে একাধিক লোক মারফত ও মোবাইল ফোনে মেয়েকে হত্যার হুমকি দিচ্ছেন। তিনি আরও জানান, এ হুমকির ফলে আমি ও আমার পরিবার চরম আতংকের মধ্যে রয়েছি।
তিনি তার ৫ বছরের শিশু কন্যা আবিদা আনজুমকে উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। তিনি আরও জানান, এ মামলা দায়েরের পর সোমবার রাতে দূর্বৃত্তরা আমার বাবার চুনিয়াখালিপাড়ার বাসভবনের নিচতলায় হামলা চালিয়ে একটি কক্ষের জানালার গ্লাস ভাংচুর করে ১০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করেছে। এ হামলা ভাংচুরের ঘটনায় মঙ্গলবার সকালে শাহজাদপুর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
এ বিষয়ে আজিজুর রহমান বিদ্যুৎ এ সব অভিযোগ অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, মারপিট, গলাটিপে ও বটি দা দিয়ে মারতে যাওয়ার ঘটনা দেড় বছর আগের। ২/১ মাসের মধ্যে এ ধরণের ঘটনা ঘটেনি। এছাড়া মেয়েকে আটকে রাখার ঘটনাও সত্য নয়। চুনিয়াখালিপাড়ার বাড়িতে হামলা জানালার গ্লাস ভাংচুরের সাথেও আমি জড়িত নই।

Leave A Reply

Your email address will not be published.