রাজাকারের তালিকা নিয়ে রাজশাহীতে তোলপাড়

0 ২৭৩

রাজশাহী প্রতিনিধি : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে ১০ হাজার ৭৮৯ জন রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যে তালিকায় রয়েছে রাজশাহীর পাঁচজনের নাম। যার মধ্যে তিনটি নাম নিয়ে রাজশাহীতে তোড়পাড় শুরু হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসজুড়ে রাজশাহীতে আলোচনায় ছিল রাজাকারের তালিকা নিয়ে।

১৫ ডিসেম্বর রোববার প্রকাশিত তালিকায় রাজশাহী বিভাগের ৮৯ নম্বর তালিকায় (ক্রমিক নম্বর ৬০৬) পাঁচজনের নাম রয়েছে। এই সিরিয়ালের চতুর্থ ক্রমিক নম্বরে রয়েছে এ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ নাম। রাজশাহীতে এ নামে একজন আইনজীবীকে পাওয়া গেছে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি গোলাম আরিফ টিপু।পদ্মাটাইমস

এছাড়াও ৮৯ নম্বর ক্রমিকে থাকা অপর চারজন হলেন- অ্যাডভোকেট মহসিন, অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, তৎকালীন জেলা প্রশাসক আব্দুর রউফ ও পুলিশ কর্মকর্তা এস এস আবু তালেব। দুই সরকারি কর্মকর্তার বিষয়ে জানা না গলেও অপর দিনজনই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। এমনকি অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের পরিবারের পাঁচজন সদস্য মুক্তিযুদ্ধের সময় নিহত হন।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রকাশিত তালিকায় এই পাঁচজনের মন্তব্যের ঘরে লেখা আছে তাদের অব্যাহতি দিতে জেলা কমিটি আবেদন করেছিল। এর বাইরে কোনো তথ্য নেই।

রাজশাহীর প্রবীন সাংবাদিক ও জেলা ন্যাপের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সৈনিক ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। ১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রভাষা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, রাজশাহীর তিনি যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বেই মূলত রাজশাহীতে ভাষা আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকে সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৫ সদস্যবিশিষ্ট স্টিয়ারিং কমিটির অন্যতম সদস্যও ছিলেন টিপু। ভাষা আন্দোলনে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০১৯ সালে একুশে পদক প্রদান করে।

মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, গোলাম আরিফ টিপু একাত্তরে রাজশাহী জেলা ন্যাপের সহসভাপতি ছিলেন। একাত্তরে ভারতের লালগোলা ক্যাম্পে থেকে তিনি মুক্তিযুদ্ধের সংগঠনের দায়িত্ব পালন করেছেন।

মুক্তিযুদ্ধের গবেষক ওয়ালিউর রহমান বাবু বলেন, বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত আস্থার মানুষ ছিলেন অ্যাডভোকেট সালাম। তার স্ত্রী সুরাইয়া সালাম শহীদ জননী। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে ও পরে অনেকবারই এডভোকেট সালামের বাসায় আতিথেয়তা গ্রহন করেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সুরাইয়া সালামের রান্না অনেক পছন্দ ছিল বঙ্গবন্ধুর ।

তিনি বলেন, যুদ্ধের শুরুতেই দুই সন্তানসহ পরিবারের পাঁচজনকে হারান এই দম্পতি। ইতিহাসের কালো রাত্রে অ্যাডভোকেট সালাম কে না পেয়ে পাকিস্তানি বাহিনী তুলে নিয়ে যায় তার দুই সন্তানসহ পরিবারের পাঁচ সদস্যকে। পরে তাদের লাশও পাওয়া যায়নি।

বাবু বলেন, রাজাকারের তালিকায় রয়েছে আরেক নাম এডভোকেট মহসিন। এ নামে রাজশাহীতে দুইজন রয়েছেন। একজনের নাম এ্যাডভোকেট মিয়া মহসিন আর এ্যাডভোকেট মহাসিন খান। মিয়া মহসিন ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের রাজশাহী অঞ্চলের অন্যতম সংগঠক। এখনো বহু মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেটে এ্যাডভোকেট মহসিন এর স্বাক্ষর আছে। তিনি ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে রাজশাহী-১ আসনে এমপি নির্বাচন করেছিলেন। আর মহসিন খান তিনিও ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা।

মুক্তিযুদ্ধের ৭ নং সেক্টরের রাজশাহী অঞ্চলের সাব সেক্টরের উপ-অধিনায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা তসিকুল হক রাজা বলেন, এ তালিকা তৈরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের অংশ গ্রহন নেই। এ কারণে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠকদের নাম রাজাকারের তালিকায় এসেছে। এ তালিকা তৈরীর সঙ্গে রাজাকাররা জড়িত কি না সেটি খুঁজে বের করার দাবি জানান এই মুক্তিযোদ্ধা।

রোববার মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করেছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রথম ধাপে ১০ হাজার ৭৮৯ রাজাকারের তালিকা ঘোষণা করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। এই তালিকা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক তালিকা প্রকাশকালে বলেছেন, “একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, আমরা কোনো তালিকা তৈরি করছি না। যারা একাত্তরে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বা স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে পাকিস্তান সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং যেসব পুরনো নথি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত ছিল সেটুকু প্রকাশ করছি।”

Leave A Reply

Your email address will not be published.