কোয়ারেন্টাইনে মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব? যা করবেন?

স্বাস্থ্য ডেস্ক: করোনা ভাইরাসে থমকে গেছে পৃথিবী, সবাই ঘরবন্দি। বিশ্বের প্রায় ২শটির বেশি দেশ এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকানো দৈনন্দিন সকল কাজ বন্ধ ঘোষণা করে লকডাউন করে দিয়েছে। ফরে ঘরবন্দি মানুষগুলো যেন অসহায় জীবনযাপন করছেন।

এই তালিকায় বাংলাদেশও আছে। গত ২৬ মার্চ থেকেই অঘোষিত লকডাউন চলছে দেশে। পুরো দেশের মানুষই ঘরবন্দি। বিশেষ করে রাজধানীর ঢাকার অবস্থা তো আরও ভয়াবহ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই দীর্ঘ বিচ্ছিন্নতা মানুষের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে।

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, মহামারী মোকাবেলায় এখন মানুষ ঘরে অবস্থান করছেন। তবে যারা নিয়মিত কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকেন, যারা ভ্রমণপিপাসু তাদের ক্ষেত্রে লকডাউনটা খুব কঠিন সময়। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্ক মানুষের ক্ষেত্রে এক জায়গায় থাকতে থাকতে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে থাকে।

যেভাবে কোয়ারেন্টিন মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে-

মহামারী চলাকালীন অনেক অনিশ্চয়তা মাথার মধ্যে ঘুরতে থাকার কারণে কিছুটা হলেও মানসিক চাপের সৃষ্টি হয়। কোয়ারেন্টিন মানসিক স্বাস্থ্যের দুটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো-

১. মানসিক সুস্থতা ও সামাজিক সুস্থতার ওপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।

২. এক জায়গায় সব কিছু সীমাবদ্ধ থাকার ফলে নিজেদের মানসিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি শারীরিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে। যেমন– শারীরিক দুর্বলতা, ঘুম কমে যাওয়া, স্বাস্থ্যের অবনতি এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

দ্য ল্যানসেট জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা কোয়ারেন্টিনে ছিলেন তারা নানাবিধ মানসিক অসুস্থতাযুক্ত লক্ষণগুলোর কথা জানিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে হতাশা, মানসিক চাপ, অল্পতে রেগে যাওয়া, অনিদ্রা, বিরক্তিভাব, মানসিক অশান্তি ও পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস সিমটম।

অন্য এক গবেষণায় দেখা গেছে, ২০০৩ সালে ঘটে যাওয়া সার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এ ধরনের মানসিক স্বাস্থ্যের সমস্যা দেখা দেয়। প্রায় ১০ শতাংশ মানুষ ট্রমা পরবর্তী অবসাদজনিত লক্ষণসমূহের শিকার হয়েছিলেন।

তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, যাদের মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা আগে থেকেই রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যায়। এসব মানসিক সমস্যা রোধ করার কিছু উপায় রয়েছে। আসুন জেনে নিই সেসব উপায়-

মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দূর করার উপায়

১. নিজেকে দিনভর সচল রাখুন।

২. নেতিবাচক চিন্তাভাবনা দূর করতে গান শুনুন, বই পড়ুন, ছবি আঁকুন, ফুলের বাগান তৈরি করুন এবং বিনোদনমূলক কিছু দেখার চেষ্টা করুন।

৩ প্রচুর পরিমাণে পানি পান ও সুষম খাদ্যগ্রহণ করুন।

৪. বয়স্করা মৃত্যু ভয়ে ভুগতে পারেন। তাদের সঙ্গে সময় কাটান।

৫. শিশুদের এমনভাবে ব্যস্ত রাখুন যাতে তারা একাকীত্বে না ভোগে।

৬. যদি আপনি উদ্বেগ অনুভব করেন, তবে কয়েক মিনিটের জন্য শান্তভাবে বসে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নেয়া ও ছাড়ার অনুশীলন করুন।

৭. অপ্রয়োজনীয় চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। মনকে শান্ত রাখুন।

৮. যদি আপনি রাগ ও বিরক্তবোধ করেন, তবে পেছন থেকে সংখ্যা গোনা অর্থাৎ ১০ থেকে ১ পর্যন্ত গণনা করে মনকে শান্ত করুন।

৯. যদি একাকীত্বে ভোগেন, তবে পরিবারের সঙ্গে সময় কাটান, পাশাপাশি বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করুন। ওপরে বর্ণিত সমস্যাগুলো যদি কোনোভাবেই দূর করতে না পারেন, তবে অবিলম্বে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

Comments (০)
Add Comment