বাগমারায় পানের দাম কমে হতাশ চাষীরা

0 ১,৪১২

Rojina-pic=1রোজিনা সুলতানা রোজি, বাগমারা-রাজশাহী : রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় পানের বাজার দর কমে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন পান চাষীরা। এতে তারা আর্থিক ভাবে ক্ষতির মুখে পড়েছেন বলে জানা গেছে। এরই মাঝে অনেক এলাকায় পানে পচন রোগের প্রাদূর্ভাব দেখা দেয়ায় আরো দুশ্চিন্তায় পড়েছেন কৃষকরা। অনেকেই জমি বর্গা নিয়ে পান চাষ করে বিপাকে পড়েছেন। জমি বন্ধক রেখে বর্গাদারদের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে বলেও জানা গেছে।
গত প্রায় দশ বছর থেকে বাগমারায় কৃষকদের মাঝে পান চাষের আগ্রহ বাড়ছে। পান চাষ লাভজনক হওয়ায় বাগমারার প্রতিটি ইউনিয়নেই নতুন নতুন পান বরজ তৈরী করছে কৃষকরা। অন্যান্য আবাদের চেয়ে পান বরজে তুলনামূলক লাভ বেশী হওয়ায় তারা পান চাষে ঝুঁকছেন। তবে বর্তমান বাজার দর কমে যাওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, বাগমারায় ৬৩০ হেক্টর জমিতে পান চাষ করা হচ্ছে। ১৬টি ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভা এলাকায় ৮৮৭২টি পান বরজ রয়েছে। পান কেনা-বেচায় রয়েছে কয়েকটি হাট। সেগুলোর মধ্যে তাহেরপুর, মোহনগঞ্জ, মাদারীগঞ্জ, মচমইল, আলোকনগর ও শিকদারী উল্লেখযোগ্য। রাজশাহীর অন্যতম হাট তাহেরপুর থেকে প্রতি সপ্তায় ১৫/২০ ট্রাক পান দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে বলে ব্যসায়ীরা জানান। তুলনা মুলক কম খরচে গড়ে তোলা পান বরজে যথেষ্ট যতœ নিতে হয় বলে কৃষকরা জানান। প্রথম দিকে শাড়ক, লগর, বাতা, খড়, ছাটন, ওয়াশি ও পাটখড়িসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে আবৃত করতে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। অন্যান্য মাসের তুলনায় আষাঢ়- শ্রাবন মাসে বেশী পরিমানে পান পাওয়া যায়। বাগমারার পান দেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন বিদেশে  রপ্তানী করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের সেনপাড়া গ্রামের পানচাষী সাইফুল জানান, বাগমারার পান দেশের অন্যান্য স্থানের চেয়ে সুস্বাদু বলে এই এলাকার  পানের চাহিদা অনেক বেশী। রাজশাহীর পান সৌদিআরবে রপ্তানি হয় বলে জানা গেছে। এছাড়াও বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুরসহ উত্তরের অনেক জেলায় বাগমারার পান বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
জানা যায়, বর্তমানে এক পোয়া (৩২ বিড়া) পানের দাম এক হাজার আটশ থেকে দুই হাজার দুইশ টাকা । খুচরা বাজারে এক বিড়া (১৬ গুন্ডা অর্থাৎ ৬৪টি) পান প্রায় দেড়শ টাকার স্থলে দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ৬০/৭০ টাকা দরে। গত প্রায় চার থেকে পাঁচ মাস ধরে বাজার দম কমে গেছে বলে চাষীরা জানান। পান চাষে নির্দিৃষ্ট কোন সময় না থাকায় সারা বছরই তা বাজারে বিক্রি করা যায়। সেনো পাড়া গ্রামের হাবিবুর রহমান জানান, অব্যাহত বাজার দর কম থাকায় প্রায় অর্ধ লাখ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। সেনপাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম, হরিশচন্দ্র, গোপাল, চন্দ্রপুরের াাব্দুল হামিদ, আমিনসহ অনেকেই পানের বাজার দর কমে যাওয়ায় আর্থিক ক্ষতির কথা জানিয়েছেন। উপজেলার বাসুপাড়া ইউনিয়নের সগুনা, কামনগর, দ্বীপনগর, বালানগর, মোহাম্মাদপুর, শুভডাঙ্গা ইউনিয়নের বাইগাছা, বুজরুক কৌড়, আমিন কৌড়, বুজরুককুলা, গোয়ালকান্দি ইউনিয়নের কনোপাড়া, সাজুড়িয়া, শিবজাইট, বাজে গোয়ালকান্দি, তেলিপুকুর, পলাশী. সেনপাড়া, গাঙ্গোপাড়া, রামরামা, ভবানীগঞ্জ পৌরসভার কর্ণিপাড়া, হাজরাপাড়া, হামিরকুৎসা ইউনিয়নের আলোকনগর, শ্রীপুর, গনিপুর, মাড়িয়া ইউনিয়নের কালাপাড়াসহ উপজেলার অনেক গ্রামে কৃষকরা পান চাষে আগ্রহী হয়ে নতুন পান বরজ নির্মাণ করছেন।
উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, উপজেলায় পানের উৎপাদন খুব অবস্থায় রয়েছে। পানের বাজার দর বৃদ্ধি পেলে চাষীরা অধিক লাভবান হবে।

Leave A Reply

Your email address will not be published.