নওগাঁ প্রতিনিধি: মাত্র একটি প্রধান সড়ককে নির্ভর করে গড়ে উঠেছে নওগাঁ শহর। ১৮৭৭ সালে নওগাঁ মহকুমা গঠিত হয়। এরপর প্রায় ১০৭ বছর পর ১১ টি উপজেলা নিয়ে ১৯৮৪ সারে ১ মার্চ নওগাঁ জেলায় রুপান্তর হয়। নওগাঁ শহর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে সান্তাহার রেল জংশন স্থাপন হলে তা মূলত ছিলো নওগাঁর জন সাধারনের চলাচলকে কেন্দ্র করে। শান্তাহারে রেল চলাচল শুরু হলে নওগাঁর গুরুত্ব বেড়ে যায়। প্রয়োজন দেখা দেয় পাকা সড়কের। তখন রাজশাহী জেলা বোর্ডের উদ্যোগে সান্তাহার থেকে একটি প্রসস্থ সড়ক নির্মান করা হয় মহাদেবপুর পর্যন্ত।
সড়কটি ছিল প্রথম দিকে সুরকী বিছানো সড়ক। অনেক পরে সড়কটি সান্তাহার থেকে নওগাঁর কাজীর মোড় পর্যন্ত কনক্রিট করা হয়। বিভিন্ন সময় ধীরে ধীরে সড়কটি তার রুপ পাল্টাতে থাকে। এরপর বর্তমান অবস্থায় এসে পৌঁছে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা ও যান চলাচল বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সড়কটি এখন চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। নিত্যদিন অসহনীয় যানজট আর ফুটপাত বিহীন সড়কটি নওগাঁ শহরবাসীর জন্য আগে ছিল বিড়ম্বনার এখন তা হয়ে উঠেছে বিরোক্তিকর। হাজার হাজার সিএনজি চালিত থ্রি হুইলার, ইজিবাইক, বউ সোহাগী, ব্যাটারী চালিত রিক্্রা, মটর সাইকেল, বাস, ট্রাকসহ নানান যানবাহনের জটে শহরটি যেনো দিন দিন মরন ফাঁদে পরিণত হচ্ছে। ছোট বড় দূর্ঘটনা এখন প্রতিদিনের ব্যাপার।
স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থি ও পথচারীরা হয়ে পড়েছে ওই যানজটের অন্যতম শিকার। এই দূর্ভোগ থেকে উতরানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে সড়ক প্রসস্থতাকরন। নওগাঁ জনমানুষের দীর্ঘদিনের দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে দুই লেন করা হলেও তা মূল শহরের কিছু ব্যক্তি মালিকানার স্থাপনার কারনে দুই লেনের জন্য যে প্রসস্থতার প্রয়োজন তাও করা সম্ভব হয়নি। এবার নওগাঁবাসীর জন্য সুখবর বয়ে আনছে নওগাঁ সড়ক ও জনপদ বিভাগ। নওগাঁর ঢাকা রোডের মোড় থেকে চৌমাশিয়ার (নওহাটা) মোড় পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটার সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনার গ্রহন করেছে নওগাঁ সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
সড়কের প্রয়োজনে নির্মান করা হবে, ব্রীজ, কালর্ভাট, ড্রেন, ফুটপাত ও রোড ডিভাইডারসহ নানান অবকাঠামো। মোট ১০০ ফুট প্রসস্থ হবে বর্তমান সড়কটি। আগামী ১ মাসের মধ্যে এ সংক্রান্ত ডিপিপি সাবমিট করা হবে বলে নওগাঁর সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জনা গেছে।
নওগাঁ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর অফিস সূত্রে জনা যায়, নওগাঁ সদর ৫ আসনের সংসদ সদস্য ব্যারিষ্টার নিজাম উদ্দীন জলিল জন ও নওগাঁর মহাদেবপুর-বদলগাছী আসনের সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সলিম নওগাঁ সড়ক বিভাগকে গত বছর নভেম্বর মাসের দিকে সড়ক প্রসস্থকরন বিষয়ে একটি ডিও লেটার দেন। এই বিষয়ে একই মতামত ব্যক্ত করেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। এরপর সড়ক বিভাগ ডিপিপি প্রস্তুতের কাজে হাত দেয়। ডিপিপি’র কাজ শেষ হয়েছে এবং আগামী ১ মাসের মধ্যে তা সাবমিট করা হবে। এতে প্রাথমিক ব্যয় হবে প্রায় ৯’শ কেটি টাকা।
নওগাঁ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সাজেদুর রহমান জানান, এ সংক্রান্ত ডিও লেটার পাওয়ার পর একটি প্রাথমিক পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে। নওগাঁর ঢাকা বাইপাস মোড় থেকে মহাদেবপুর উপজেলার চৌমাশিয়ার মোড় পর্যন্ত সাড়ে ১৬ কিলোমিটা সড়কটি ৪ লেনে উন্নীত করার প্রাথমিক পরিকল্পনার কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে ডিপিপি সাবমিট করা হবে। সড়ক প্রসস্থ করতে গিয়ে আর যা যা করার প্রয়োজন হবে তার সব কিছুই করা হবে।
উল্লেখ্য ছোট যমুনা নদী নওগাঁ শহরকে দ্ইু ভাগ করেছে। ফলে শহর গড়ে উঠেছে নদীর এপার ওপার। নওগাঁ আর পার নওগাঁ। শহরের মধ্যে ছোট যমুনা নদীর উপরের লিটন সেতুটি ২ লেনের। অবশ্য সড়ক প্রসস্থ করতে গিয়ে ভাঙ্গা পড়ছেনা সেতুটি। এর পাশ দিয়ে অনুরুপ আরো একটি সেতু নির্মান করা হবে। ফলে দুই সেতু মিলে ৪ লেন দাঁড়াবে। বর্তমান লিটন সেতুটি ব্যাপক সংস্কারের আওতায় আনা হচ্ছে। একই ভাবে শহরের অপর নদী তুলশী গঙ্গার উপর ২ লেনের যে সেতুটি আছে তার পার্শ্বে অরো একটি ২ লেনের সেতু নির্মান করা হবে।
চার লেনে সড়কটি উন্নীত করতে গিয়ে সড়কের দু’ধারে ব্যক্তি মালিকানাধীন যে জমি ও অবকাঠামো অধিগ্রহন করা হবে এবার ওই জমির মালিকরা পাবেন জমির মূল্যবাবদ ৩ গুণ ও অবকাঠামোর জন্য ২ গুন। ১৯৮২ সালের সরকারী মূল্য যা ছিল তার দেড় গুন ক্ষতি পূরন পেয়ে আসছিলেন ক্ষতিগ্রস্থ মালিকরা। তবে ২০১৭ সালের জমি অধিগ্রহনের সংশোধিত আইন অনুযায়ী এবার পাচ্ছেন জমির জন্য ৩ গুন ও অবকাটোমোর জন্য ২ গুন ক্ষতিপূরন।