স্বাস্থ্য ডেস্ক: লাল টুকটুকে কিংবা সবুজ রঙের আপেল শুধু যে ফল হিসাবে খাওয়া হয় তাই নয়। বিভিন্ন খাবারের স্বাদ বাড়াতেও এই সুস্বাদু ফলটির তুলনা নেই। ফ্রুট কাস্টার্ড, ফ্রুট সালাদ অথবা জেলি যেভাবে ইচ্ছা আপেলকে খাওয়া যায়। এছাড়া,আপেল থেকে তৈরি আপেল সিডার ভিনেগারের হেলথ বেনিফিটের’ কথা তো সবার জানা। পাশাপাশি,খাবার টেবিলের শোভা বাড়াতে বিয়ে,জন্মদিন কিংবা ঘরোয়া পার্টিতে নানা ভাবে আপেল কে ব্যবহার করা হয়। কথায় আছে প্রতিদিন একটি করে আপেল খেলে অসুখ থেকে দূরে থাকা যায়।কথাটি যথার্থ।কারন,সুস্বাদু এই ফলটি ইটোনিউট্রিয়েন্টস,এন্টিঅক্সিডেন্ট,ভিটামিন,ফাইবার এবং মিনারেলসে পরিপূর্ন।
আপেলের পুষ্টিগুণ
USDA এর তথ্য অনুযায়ী,প্রতি ১০০ গ্রাম আপেলে রয়েছে ৫২ কিলোক্যালরি,শর্করা ১৩.৮১ গ্রাম,সুগার ৯.৫৯ গ্রাম,ফাইবার ২.৪০ গ্রাম, প্রোটিন০.২৬ গ্রাম, টোটাল ফ্যাট ০.১৭ গ্রাম,ফোলেট ৩ ম্যা.গ্রা.,ভিটামিন-কে ২.২ ম্যা. ভিটামিন-এ ৫৪ আই ইউ,ভিটামিন-ই ০.১৮ মি.গ্রা. এবং ভিটামিন-সি ৪.৬মি.গ্রা.।
আপেল খাওয়ার উপকারিতা
• আপেল মানেই ফাইটোনিউট্রিয়েন্টস,ফ্লাভোনইয়েডস এবং পলিফেনলিক্সের ভাল উৎস। যা,সুস্থ থাকার জন্য অপরিহার্য।
• আপেল টার্টারিক এসিডের খুব ভাল উৎস। যা,ফ্রি র্যাডিকালের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আমাদের রক্ষা করে।
• প্রতিদিন আমরা বিভিন্ন খাবার থেকে নানা ধরণের টক্সিক উপাদান গ্রহণ করে থাকি। আর,এই টক্সিক উপাদান গুলোকে আমাদের লিভার থেকে বের করে দিতে আপেলে থাকা পুষ্টি উপাদান সাহয্য করে।
• যাদের হজমে সমস্যা এবং নিয়মিত কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যাতে ভুগছেন তারা নিয়মিত আপেল খেতে পারেন।আপেলে বেশ ভাল পরিমাণে ফাইবার রয়েছে যা পেটের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে সাহায্য করে।
• যাদের দাঁতের বিভিন্ন সমস্যা রয়েছে তারা আপেল খেলে দাঁতের সমস্যা অনেক কম থাকবে।আপেল কামড়ে এবং চিবিয়ে খাবার সময় আমাদের লালা নিঃসরণের পরিমাণ বেড়ে যায় ফলে দাঁতের ক্ষয় হবার যে প্রক্রিয়া তা ধীর হয়ে যায়। তবে দাঁতের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে হলে ভাল খাবার পাশাপাশি বছরে অন্তত একবার হলেও ডেন্টিস্টের কাছে যাওয়া উচিত।
• আপেলে থাকা এন্টিঅক্সিডেন্ট মস্তিস্কের ডোপামিন উৎপাদনকারী স্নায়ুকোষ গুলোর ভাঙ্গনকে প্রতিরোধ করে ফলে পার্কিনসন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।এই রোগটি বেশি বয়স্কদের হয়ে থাকে। তাই,বাড়ির বড়দের সুস্বাস্থ্যের জন্য ও আপেল জরুরি।
• যারা সপ্তাহে অন্তত ৫ টি আপেল খেয়ে থাকেন তাদের ফুসফুসের স্বাস্থ্য তুলানামূলক ভাল থাকে। বিশেষ করে কফ বা ঠাণ্ডার সমস্যা দূর করতে আপেলের জুস অনেক কার্যকর।
• আমাদের বাইলে যখন অতিরিক্ত পরিমাণে কোলেস্টেরল জমে তখনই গলস্টোন ফর্ম করে। আর,এই জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবার বা খাদ্য আঁশ গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।আর,এই ফাইবারের খুব ভাল উৎস হল আপেল। সুতরাং,বলা যায় নিয়মিত আপেল খেলে গলস্টোন প্রতিরোধ সম্ভব।
• আপেলে পটাশিয়াম থাকলেও পরিমাণে কম থাকে তাই,কিডনি রোগিদের জন্য আপেল খাওয়া নিরাপদ।
• অনেকেই ভাবেন,মিষ্টি স্বাদের ফল বলে হয়ত ডায়াবেটিস রোগীরা আপেল খেতে পারবেন না। আপেল সলিউবল ফাইবারের খুব ভাল উৎস। আপেলে থাকা পেক্টিন রক্তে সুগার বেড়ে যাবার প্রক্রিয়াকে ধীর করে। তাই,ডায়াবেটিস রোগিরা প্রতিদিন মাঝারি সাইজের একটি আপেল নিশ্চিন্তে খেতে পারবেন।
• অনেকেই ভাবেন গ্রীন আপেল বোধ হয় সবচেয়ে ভাল।তবে,আপেলের রঙ রেড বা গ্রীন যায় হোক না কেন পুষ্টিগুণের দিক দিয়ে গ্রীন বা রেড প্রায় সমান।সুগার এবং শর্করা লাল আপেলে কিছুটা বেশি এবং গ্রীন আপেলে ফাইবার সামান্য বেশি থাকে।
• শুধু আপেল নয় আপেল থেকে তৈরি আপেল সিডার ভিনেগার মেটাবলিজম বাড়াতে এবং দেহের টক্সিন সমূহ বের করে দিতে সাহায্য করে।
• এছাড়া,শিশুর জীবনের প্রথম খাদ্য হিসাবে আপেল পিউরি নিরাপদ এবং স্বাস্থ্যসম্মত।
সাবধানতা:
• আর্দ্রতা বজায় রাখা এবং দীর্ঘদিন আপেল সংরক্ষণের জন্য আপেলের গায়ে এডিবল সিনথেটিক ওয়াক্স স্প্রে করা হয় যা হজম হয়না।কিন্তু খুব সহজেই আমাদের শরীর এই ওয়াক্স শোষণ করে।যা,আমাদের ডাইজেস্টিভ সিস্টেম এবং শ্বাসতন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর।এর ফলে,আলসার বা ইনফেকশন হতে পারে।এছাড়া,এই ওয়াক্স যুক্ত আপেল গর্ভবতী মায়েরা খেলে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে তাই সাবধান থাকার বিকল্প নেই।
• তাই,আপেল কিনে আনার পর ফুটন্ত গরম পানিতে ২০-৩০ সেকন্ড রেখে রানিং ওয়াটারে ধুয়ে নিতে হবে।তাহলে, এই ক্ষতিকর ওয়াক্স চলে যাবে।
• এছাড়া,আপেলের বীচিতে “অ্যামিগডালিন” নামক উপাদান থাকে।যা মানব দেহের ডাইজেস্টিভ এনজাইমের সংস্পর্সে আসলে সায়ানাইড নিঃসরণ করে,অর্থাৎ বিষক্রিয়া তৈরি করে।তবে,সামান্য পরিমাণে আপেলের বীচি গ্রহণ করলে কোন ধরণরে বিষক্রিয়া ঘটার সম্ভাবনা বিরল।
লেখক : পুষ্টিবিদ, বেক্সিমকো ফার্মা লিমিটেড।